প্রকাশ্যে রোকন সম্মেলন
১৯ বছরের রাজনৈতিক হত্যায় আওয়ামী লীগের বিচার চাইল জামায়াত
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর 'লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা' থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত সব হত্যায় আওয়ামী লীগকে দায়ী করে তাদের তৈরি আইনেই বিচারের দাবি জানিয়েছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।
ছাত্র-জনতার আন্দালনের প্রেক্ষাপটে দীর্ঘ ১৯ বছর পর প্রকাশ্যে বড় পরিসরে বার্ষিক সদস্য (রুকন) সম্মেলন করছে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা।
আওয়ামী লীগের বিচার দাবির পাশাপাশি তাদের শাসনামলের নানা কার্যক্রমের সমালোচনায়ও মুখর ছিলেন সম্মেলনের প্রধান অতিথি দলটির আমির। প্রথম পর্বে গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে দেওয়া ২৫ মিনিটের বক্তব্যের বেশিরভাগ সময়জুড়ে এসব সমালোচনা করেন তিনি।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়াকে 'বিচারিক হত্যা' বলেও অভিহিত করেন ডা. শফিক।
জামায়াতের আমির বলেন, আওয়ামী লীগের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। তাদের তৈরি আইন দিয়েই দ্রুত জুলাই-আগস্টের হত্যার বিচার করতে হবে। তিনি বলেন, বিগত সাড়ে ১৭ বছরে এই জাতিকে অনেক জুলুমের শিকার হতে হয়েছে। মুষ্টিমেয় কিছু দুর্বৃত্ত ছাড়া সব মানুষই জুলুমের শিকার হয়েছেন।
২৮ অক্টোবরের ঘটনা প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, সেদিন লগি বৈঠা দিয়ে গণতন্ত্র ও জনগণের আকাঙ্খাকে জবাই করা হয়েছিল। সেদিনই এদেশ পথ হারিয়ে ছিল। সেদিন তারা লাশের উপর উঠে নেচেছিল। লাশ চুরি করতে চেয়েছিল। যাদের খুন করা হয়েছিল, তারা কারও উপর ঢিল ছোড়েননি। তাদের অপরাধ ছিল, তারা জামায়াতের সভায় যোগ দিয়েছিলেন। দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর পর আবার ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এদেশ পথ ফিরে পেয়েছে।
'সাজানো নির্বাচন দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল' অভিযোগ তুলে ডা. শফিক বলেন, সাড়ে ১৫ বছর দাপটের সঙ্গে ক্ষমতায় ছিল। অথচ এখন দলের মানুষও তাদের নাম নিতে চান না।
জামায়াতের আমির কথা বলেন বিডিআর হত্যাযজ্ঞ নিয়েও। বলেন, ‘ক্ষমতায় আসার দুই মাস পরেই ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে তারা হত্যা করেছিল। সেদিন তাদের পরিবারকেও ছাড় দেওয়া হয়নি। লাশ ড্রেনে ভাসিয়ে দিয়েছিল। এটা নিয়ে করা সেনাবাহিনীর তদন্তের রিপোর্ট সেনাবাহিনীই জানলো না, সারা বিশ্বের কেউও জানলো না।’
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে ডা. শফিক বলেন, '২০১৩ সালের ৫ মের মতো করে যারা আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে সাফ করবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন তারা আজ কোথায়? মানুষের সামনে আর মুখ দেখাতেও পারলেন না'।
তিনি বলেন, ‘আমাদের উপর সমস্ত চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে, আমাদের নড়তেও দেয়নি। মাঠে একতরফা খেলানো হয়েছে। শাহাবাগে আসর বসানো হয়েছে। সেই আসরে আজেবাজে জিনিসও সাপ্লাই হয়েছে। কাড়ি কাড়ি অর্থের যোগান দেওয়া হয়েছে। সংসদ থেকে একজন বলেছিলেন, আমার শরীর সংসদে। কিন্তু মনটা পড়ে আছে শাহবাগে'।
দুঃখজনকভাবে দু একজন আলেম সেদিন এই অপকর্মের সঙ্গী হয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা জ্ঞানী নন, জ্ঞানপাপী। তাদের মানুষ ভুলে যাবে না, তাদের প্রাপ্য তারা পাবেন।’
হেফাজতকে অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করে জামায়াতের আমির বলেন, হেফাজতের উপর ৫ মে ক্র্যাকডাউন চালানো হয়েছে। সেদিন কতোজন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল তা আজও মানুষ জানে না। একবার তারা বললো, ১৮ জন, আবার বললো কেউ মারা যায়নি।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘সম্প্রতি আন্দোলনে বিজয়ের চারদিন আগে তাদের একজন বললেন বেশি বাড়াবাড়ি করলে ৫ মে শাপলা চত্বরের মতো করা হবে। এই বক্তব্যের পর এক সপ্তাহও তারা ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। যাদের বলেছিলেন তারা তো আছে। আপনারা এখন কোথায়? মানুষের সামনে আর মুখ দেখাতে পারলেন না। গর্ব অহংকার করবেন না। এ রকমটা আল্লাহ পছন্দ করেন না'।
রবিবার (১৩ অক্টোবর) সকাল নয়টায় শুরু রুকন সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত নাসিব হাসান রিয়ানের বাবা মো. গোলাম রাজ্জাক।
এ সম্মেলনেই নির্বাচন করা হবে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির। মহানগর উত্তরের রুকনরা গোপন ভোটে তাদের নতুন নেতা নির্বাচন করবেন। তবে দলীয় নিয়ম অনুসারে, কেউ আমির পদে নিজে থেকে প্রার্থী হবেন না।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রুকনরা পছন্দের নেতার নাম লিখে একটি নির্দিষ্ট বাক্সে ফেলবেন।
মহানগর উত্তরের আমির নির্বাচনে ১০ হাজারের বেশি রুকন উপস্থিত রয়েছেন। যিনি সর্বোচ্চ ভোট পাবেন, তিনি হিসেবে নির্বাচিত হবেন।
এর আগে সর্বশেষ ২০০৫ সালে পল্টন ময়দানে বড় পরিসরে অবিভক্ত ঢাকা মহানগরের রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে