সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালো ক্ষমতাসীনরা; জাপানে নতুন সরকার গঠনে অনিশ্চয়তা
দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ নির্বাচনী ফলাফল করায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি জাপান। পরবর্তী সরকার গঠন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবাকে পদত্যাগে চাপ দিচ্ছে বামপন্থী এবং উগ্র ডানপন্থী দলগুলো।
রোববারের (২৭ অক্টোবর) ভোটে এলডিপি এবং জোটের ক্ষুদ্র শরিক কোমেইতো বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষমতাসীন জোটটি শক্তিশালী নিম্নকক্ষে ৪৬৫ আসনের মধ্যে ২১৫টি পেয়েছে, যা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ২৩৩ আসনের চেয়ে ১৮টি কম। জাপানের যুদ্ধোত্তর রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারকারী এলডিপির জন্য এটি ২০০৯ সালের পর থেকে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল, যখন দলটি চার বছরের জন্য ক্ষমতা হারিয়েছিল।
অন্যদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৪৮ আসন পেয়েছে প্রধান বিরোধী দল কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অব জাপান (সিডিপিজে)। ভোটে ছোট দলগুলোর অর্জনও উল্লেখযোগ্য। ৩০ দিনের মধ্যে নতুন সরকার গঠনের আলোচনায় এখন সেসব দলগুলোকেই শরিক হিসেবে খুঁজছেন প্রধানমন্ত্রী ইশিবা।
তবে ভোটে বড় ধরনের সাফল্য পেলেও বামপন্থী থেকে শুরু করে উগ্র ডানপন্থী প্রায় সব দলই সরকার গঠনে খুব বেশি বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সোমবার (২৮ অক্টোবর) অনেকগুলো বিরোধী দলও এলডিপি-কোমেইতো জোটে যোগদানের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে, যা সামনের পথকে আরও জটিল করে তুলছে।
মাত্র গতমাসেই প্রধানমন্ত্রী ও এলডিপির প্রধান নেতা নির্বাচিত হন ৬৭ বছর বয়সী সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইশিবা। রাজনৈতিক তহবিল কেলেঙ্কারি এবং জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় নিয়ে জনবিক্ষোভের মাঝেও নিজের নেতৃত্বকে দৃঢ় করতে আশাবাদীও ছিলেন তিনি। তবে তার এই রাজনৈতিক ঝুঁকিগ্রহণ উল্টো ফল এনে দিয়েছে।
জাপানি রাজনৈতিক ঝুঁকি বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ফোরসাইটের প্রতিষ্ঠাতা টোবিয়াস হ্যারিস বলেন, এর ফলে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রকৃতপক্ষে নতুন ও অনিশ্চিত সময়ে প্রবেশ করছে।
কিছু বিশ্লেষক ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, এলডিপি-কোমেইতো জোট এখন কেস-বাই-কেস ভিত্তিতে আইন পাস করতে ডেমোক্রেটিক পার্টি ফর দ্য পিপল এবং ইনোভেশন পার্টির মতো ছোট ডান দলগুলোর উপর নির্ভর করে ঝুলন্ত সরকার গঠনের চেষ্টা চালাতে পারে।
তবে এ ধরনের ব্যবস্থা ‘বিশেষভাবে স্থিতিশীল’ হবে না এবং বিরোধীদের দাবি পূরণে ব্যর্থ হলে তা ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে পড়বে বলে ব্লগ পোস্টে লিখেছেন টোবিয়াস হ্যারিস।
প্রধানমন্ত্রীর আসন ধরে রাখার ক্ষেত্রে বড় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে ইশিবার নিজের ক্ষেত্রেও। একমাসেরও কম সময় আগে এলডিপির ভেতরেই তার আরও রক্ষণশীল প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়েছিলেন ইশিবা, যাদের মধ্যে ছিলেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী এবং রক্ষণশীলদের আইকন শিনজো আবের অনুগতরাও।
কিন্তু ভোটের ফলাফল ইশিবা এবং আবে উভয়কেই দুর্বল করে দিয়েছে। কেননা, এবার নিজেদের আসন হারিয়েছেন স্লাশ তহবিল কেলেঙ্কারিতে জড়িত দুই মন্ত্রীসহ আবের অনেক সহযোগীই। এমনকি জিততে পারেননি শরিকদল কোমেইতোর নেতা কিইচি ইশিতাও।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে