Views Bangladesh Logo

পররাষ্ট্র সচিব জসীম ছুটিতে যাচ্ছেন, ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব নেবেন নজরুল

Manik Miazee

মানিক মিয়াজী

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবারও বড় ধরনের প্রশাসনিক রদবদলের আভাস মিলেছে। পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন ছুটিতে যাচ্ছেন এবং তার অনুপস্থিতিতে সচিব (পূর্ব) মো. নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। বিষয়টি এখন সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভিউজ বাংলাদেশকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিশ্বস্ত সূত্রগুলোর মতে, মো. জসীম উদ্দিন কেবল সংক্ষিপ্ত ছুটিতেই যাচ্ছেন না- এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ছুটির অংশ হতে পারে, যার পরিণতিতে তাকে পররাষ্ট্র সচিব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে পারে। জানা গেছে, ছুটি শেষে তাকে উত্তর আমেরিকার কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে আরও জানা গেছে, ছুটির বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত হলেও এখনো আনুষ্ঠানিক চূড়ান্ত ঘোষণা হয়নি। তবে সরকারপ্রধানের কার্যালয় এবং উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ চলছে।

পররাষ্ট্র সচিবের অনুপস্থিতিতে সচিব (পূর্ব) মো. নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টিও একই সঙ্গে প্রক্রিয়াধীন। নজরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন এবং নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে তার ওপর আস্থা রয়েছে বলে জানানো হয়।

মাত্র আট মাসে পদত্যাগের প্রেক্ষাপট
জসীম উদ্দিন ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি বিসিএস (পররাষ্ট্র) ক্যাডারের ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা। তার চাকরি জীবনের মেয়াদ অনুযায়ী ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার কথা রয়েছে; কিন্তু তার আগেই তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নজিরবিহীন না হলেও অত্যন্ত বিরল।

বাংলাদেশের কূটনৈতিক ইতিহাসে এমন ঘটনা খুব কমই ঘটেছে যেখানে কোনো পররাষ্ট্র সচিবকে নিয়োগের এক বছরের কম সময়ের মধ্যে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত ৫ দশকে এরকম ঘটনা ঘটেছে মাত্র তিনবার।

১৯৭২ সালে নিয়োগের ৬ মাসের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব সৈয়দ আনোয়ারুল করিমকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৮৯ সালে চার মাসের মাথায় সরানো হয় এ কে এইচ মোরশেদকে। ২০০১ সালে সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীকে সরিয়ে দেওয়া হয় মাত্র পাঁচ মাসের মাথায়। এই প্রেক্ষাপটে জসীম উদ্দিনের সরিয়ে দেওয়া চতুর্থ নজির হতে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত বছরের আগস্টে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি দ্বিতীয়বারের মতো পররাষ্ট্র সচিব পদে রদবদলের উদ্যোগ। প্রথমবারের মতো তারা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে মাসুদ বিন মোমেনকে সরিয়ে দিয়ে মো. জসীম উদ্দিনকে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পররাষ্ট্র সচিবের এই পরিবর্তনের পেছনে রাজনৈতিক বিবেচনা না প্রশাসনিক কৌশল, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ২০২৬ সালের নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য রক্ষা ও অভিজ্ঞতার সমন্বয় নিশ্চিত করতেই হয়তো এই রদবদলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের ছুটিতে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে যেসব আলোচনা এখন গুরুত্ব পাচ্ছে, তার একটি হচ্ছে- তিনি কীভাবে এবং কোথায় নতুন দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর দাবি, ছুটি শেষে তাকে উত্তর আমেরিকার কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হতে পারে।

যদিও বিষয়টি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি, তবে মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ নিয়ম অনুযায়ী, সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবসরের আগে বিদেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে পদায়ন করা নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে যারা কূটনৈতিক দক্ষতা, রাষ্ট্রীয় চাহিদা এবং সরকারের আস্থাভাজন- তাদের ক্ষেত্রে এমন পদায়ন প্রায়ই হয়ে থাকে।

বর্তমানে উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশের কয়েকটি প্রধান কূটনৈতিক মিশনে রাষ্ট্রদূতের পদে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূতের পদটি অত্যন্ত কৌশলগত ও রাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ