অবহেলায় পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত ঝিনাইদহের ‘নীল কুঠিবাড়ি’
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য; কিন্তু এগুলোর বেশির ভাগই অবহেলিত। ফলে কালের বিবর্তনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যগুলো। এমনই এক প্রাচীন স্থাপত্য নীলকরদের স্মৃতিবিজড়িত ‘নীলকুঠি’।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর গ্রামের কপোতাক্ষ নদের ধারে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই নীলকুঠি, যেটি স্থানীয় মানুষের কাছে কাছারিবাড়ি হিসেবে পরিচিত। দালানটি খালিশপুর বাজারের পশ্চিম পাশে ৯ একরেরও বেশি জায়গার ওপর অবস্থিত।
অনেকের ধারণা, আঠারো শতকে নির্মিত হয়েছিল নীলকুঠি। এ কুঠিবাড়ি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব বাংলার কৃষকদের নীল উৎপাদনে উৎসাহী করা ও নীল চাষ দেখাশোনা করা। ইংরেজ মি. ডেভরেল এই কুঠিবাড়ি থেকে এ অঞ্চলের নীল চাষ পরিচালনা করতেন।
শিল্পবিপ্লবের পথিকৃৎ ছিল ইংল্যান্ড। সে সময় ইংল্যান্ডে সাদা কাপড়ের চাহিদা ছিল অত্যধিক। কাপড়ের সাদা রং বজায় রাখার জন্য নীল ছিল একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।
ভারতবর্ষ ব্রিটিশদের উপনিবেশ হওয়ায় জোরপূর্বক ভারতবর্ষকে নীল চাষের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে ইংরেজরা। তবে নীল চাষের ফলে জমির উর্বরতা হারাত। তাই নীল চাষে অনাগ্রহ ছিল চাষিদের। আবার অধিকাংশ চাষি ইংরেজদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যও পেত না। যারা নীল চাষ করত না, তাদের নানাভাবে নির্যাতন করা হতো। এ জন্য এই কুঠিবাড়ির কিছু কক্ষ নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করা হতো।
অবহেলায় পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত ঝিনাইদহের ‘নীল কুঠিবাড়ি’
পরে ইংরেজরা উপমহাদেশে থেকে বিতাড়িত হলে নীলকুঠি ভবনটি সিও অফিস হিসেবে ১৯৫৬-৫৭ ও ১৯৮৩-৮৪ সালে ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৯৮৪ সালের পর থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত এটি ইউনিয়ন ভূমি অফিস ছিল। বর্তমানে কুঠিবাড়িটি জরাজীর্ণ। সংস্কারের অভাবে বাড়িটি ধ্বংসের দাঁড়প্রান্তে অবস্থান করছে। এর পশ্চিম পাশে সরকারি হামিদুর রহমান কলেজ ও স্মৃতি জাদুঘর এবং পূর্ব পাশে ইউনিয়ন ভূমি অফিস অবস্থিত।
জানা গেছে, এই কুঠিবাড়ির জায়গা খাস জমির মধ্যে পড়েছে। ৬৫ বছর বয়স্ক স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন আলী জানান, বেশ কয়েক বছর আগে কুঠিবাড়িটির সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও তা আর আলোর মুখ দেখিনি। বাড়িটির চারপাশে রয়েছে শত বছরের বড় বড় আম গাছ। এর পাশে আরও অনেক বাড়িঘর ছিল, যা ব্রিটিশদের গাড়ি রাখাসহ নানান কাজে ব্যবহৃত হতো। এ ছাড়াও ছিল বৈকালীন অবকাশযাপনের জন্য স্থাপনা, যা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে নীলকুঠি বাড়িটিও অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে। স্থানীয়রা জানালেন, ২০১৮-১৯ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশাফুর রহমান এখানে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ইকোপার্ক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল; কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটাও আলোর মুখ দেখেনি।
স্থানীয়দের দাবি, কুঠিবাড়িটি এলাকার মানুষের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতনের সাক্ষী দিচ্ছে। ফলে এটি এখন ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করছে। তাই এটি সংরক্ষণ করার দাবি জানান তারা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে