দুই জাবি শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার, প্রতিবাদে উত্তাল শিক্ষার্থীরা
বঙ্গবন্ধুর চার বছরের পুরনো একটি গ্রাফিতি মুছে ফেলার অভিযোগে জাবি ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতাকে বহিষ্কার করার প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার থেকে একটি মশাল মিছিল বের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এসময় মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবন ও পরিবহন চত্বর ঘুরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়৷
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের কোষাধ্যক্ষ ওমর ফারুক স্বাধীনের সঞ্চালনায় সমাবেশে নেতা-কর্মীরা বক্তব্য রাখেন৷ তারা সংগঠনটির সভাপতি অমর্ত্য রায় ও সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলির বহিষ্কারাদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বাদি হয়ে মামলা করার দুরভিসন্ধি থেকে সরে আসার জোর দাবি জানান৷
এর আগে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় কলা ও মানবিকী অনুষদের দেয়ালে বঙ্গবন্ধু শতবার্ষিকী উপলক্ষে আঁকা একটি পুরোনো গ্রাফিতি মুছে ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি আঁকেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের (অমর্ত্য রায়-ঋদ্ধ অনিন্দ্য) নেতাকর্মীরা।
এ ঘটনার জেরে পরবর্তীতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জাবি সংসদের সভাপতি অমর্ত্য রায় ও সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলিকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারাদেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের কাউন্সিল কক্ষে এক বিশেষ সিন্ডিকেট সভা হয়। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার সভা শেষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নুরুল আলম।
সিন্ডিকেট সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান জানান, গ্রাফিতি মুছে ফেলার ঘটনায় তদন্ত কমিটির সুপারিশে অমর্ত্য রায় ও ঋদ্ধ অনিন্দ্যকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
এদিকে, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তাপসী দে প্রাপ্তি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর চেতনা কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পুঁজি না। বঙ্গবন্ধু সবার৷ গ্রাফিতি থাকলে সেখানে মুছে আরেকটি করা হবে এটাই নিয়ম এবং এটাই বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে আসছে৷ দেয়াল লিখন বা গ্রাফিতি আঁকার দায়ে কোনো স্বাধীন দেশে এমন সিদ্ধান্ত নিতে দেখিনি।”
সমাবেশে বিপ্লবী ছাত্র-মৈত্রীর সংগঠক সৌমা ডুমুরি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা সময়ে অনেক অন্যায়-অপকর্মের অনেক ঘটনা ঘটে, কিন্তু সেগুলোর কোনো বিচার হয় না। অথচ একটা প্রতিকৃতি মুছে ফেলার মতো তুচ্ছ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কত দ্রুত শাস্তি দিয়ে দিল। উপাচার্য নূরুল আলমকে এই বহিষ্কারের যথাযথ জবাব দিতে হবে এবং বহিষ্কারাদেশ বাতিল করতে হবে, নয়তো জাহাঙ্গীরনগরের মাটিতে দুর্বার আন্দোলন চলবে।”
ছাত্র ইউনিয়নের জাবি সংসদের সংগঠক সাদিয়া মুন বলেন, “ছাত্রলীগ চাটুকারিতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ প্রশাসনের কোনো দুর্নীতি অনিয়ম নিয়ে তারা কখনো কথা বলে না৷ পোস্টারের যদি মেয়াদ চলে যায়, সেই পোস্টার কি আমি তুলে ফেলতে পারবো না? তাহলে আমাকে কি মামলা দেয়া হবে? এভাবেই স্বৈরাচারী প্রশাসন তাদের মুখোশ উন্মোচন করছে৷”
উপাচার্যের বাসভবনের সামনে প্রায় একঘন্টা অবস্থান করার পর আন্দোলনকারীদের সাথে দেখা করতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য(শিক্ষা) অধ্যাপক মোস্তাফা ফিরোজ, প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান। কিন্তু আন্দোলনকারীরা উপাচার্য ছাড়া বাকিদের সাথে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানায়৷ এরপর আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্যের বাসভবনে গিয়ে তাঁর সাথে কথা বলেন।
এসময় উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, “বহিষ্কার ও মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা আমার এখতিয়ারে নেই৷”
তিনি আন্দোলনকারীদের দাবিসমূহ লিখিত আকারে দেওয়ার অনুরোধ করেন। পরবর্তীতে সেগুলোর বিষয়ে প্রশাসনিক বডির সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তাদেরকে আশ্বস্ত করেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে