Views Bangladesh Logo

নেত্রকোনায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পণ্ড করল যুবদল, ইউএনও লাঞ্ছিত

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

ঞ্চে হামলা চালিয়ে নেত্রকোনার আটপাড়ায় উপজেলা প্রশাসনের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পণ্ড করে দিয়েছেন যুবদলের নেতারা। মঞ্চ থেকে শিল্পীদের নামিয়ে দিয়ে সামনে বসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) অন্য অতিথিদের লাঞ্ছিত করেন তারা। ছিঁড়ে ফেলেন অনুষ্ঠানের ব্যানারও।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল থেকে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন মুক্তমঞ্চে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে অংশ নেয় সামজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দ্বিতীয় পর্বে নৃত্য পরিবেশন করছিল উপজেলা প্রশাসন বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থীরা।

এ সময় উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব নূর ফরিদ খান, যুগ্ম আহ্বায়ক মোদাচ্ছের হোসেন কাইয়ুম, কামাল হোসেন তালুকদারসহ স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী অনুষ্ঠানস্থলে এসেই ইউএনওকে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলেন।

ইউএনও কারণ জানতে চাইলে মঞ্চের ব্যানারে স্থান হিসেবে কেন ‘উপজেলা পরিষদ বঙ্গবন্ধু চত্বর’ লেখা হয়েছে, এ কথা বলে যুগ্ম আহ্বায়ক মোদাচ্ছের হোসেনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা মঞ্চে উঠে শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দিয়ে মঞ্চে থাকা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী একজন বলেন, ইউএনওসহ কর্মকর্তারা তাদের বাধা দিলে ওই নেতারা তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। তাদের একজন উপস্থাপককে মারধর করে মাইক কেড়ে নিয়ে ইউএনওকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী এক কর্মকর্তা জানান, তখন ইউএনও বলেন, ব্যানারে তো কোনো ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ লেখা নেই। তখন সদস্য সচিব নূর ফরিদ আবারও বলেন, ‘না, ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর নাম আছে। ফেসবুকেও ব্যানারের ছবি পোস্ট আছে। আমার ফোনেও এ ছবি একজন পাঠিয়েছেন। অনুষ্ঠান এখনই বন্ধ করতে হবে’।

বিশৃঙ্খলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে অনুষ্ঠানটি পণ্ড হয়ে যায়। পরে দেখা যায়, ফেসবুকে পোস্ট করা ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ লেখা ওই ছবিটি বাংলা ১৪৩০ সালের।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুয়েল সাংমা বলেন, উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব নূর ফরিদের নেতৃত্বে কাইয়ুম, কামালসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী সংঘবদ্ধ হয়ে হঠাৎ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মঞ্চের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় আমি কারণ জানতে চাইলে আমাকেসহ কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত ও অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেন। উপস্থাপককে মারধর করে মাইক হাতে নিয়ে আমাকে ‘ফ্যাঁসিবাদের দোসর’ আখ্যায়িত করেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে’।

নূর ফরিদ খান বলেন, ‘আমরা একটি স্থানে বসেছিলাম। হঠাৎ একজন আমার ম্যাসেঞ্জারে একটি ব্যানার দেন। ওই ব্যানারে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ লেখা ছিল। ফেসবুকেও একজন শেয়ার দিয়েছেন দেখেছি। পরে আমরা মঞ্চে গিয়ে কারণ জানতে চাই। যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোদাচ্ছের হোসেন ও কামাল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক উজ্জ্বল, সদস্য সচিব রুপণ, ছাত্রদলের টিটুসহ কয়েকজন ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। পরে প্রশাসনের লোকজন আমাদের নিশ্চিত করেন, ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর নাম নেই। বিষয়টি আমাদের ভুল হয়ে গেছে’।

‘এর জন্য আমরা ইউএনওর কাছে ভুল স্বীকার করেছি। মাফ চেয়েছি। আপনারাও বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমরা কাউকে লাঞ্ছিত করিনি। এটা মিথ্যা অপবাদ দেয়া হচ্ছে’- বলেন তিনি।

আটপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘যখন ঘটনাটি ঘটেছে, তখন আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে’।

নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী জানান, যে ঘটনাটি ঘটেছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। দলীয়ভাবে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, আইনগত ব্যবস্থা নিতে ইউএনওকে বলা হয়েছে।


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ