৬৪ জেলায় চালু হচ্ছে ‘বিচারিক হেল্পলাইন সেবা’
দেশের ৬৪ জেলা এবং ৮ মহানগর দায়রা জজ আদালতে চালু হচ্ছে ‘বিচারিক হেল্পলাইন সেবা’। সব বিচারিক আদালত ও ট্রাইব্যুনালে নাগরিকের বিচারিক সেবা পাওয়ার বাধা ও অনিয়ম দূর করতে এই সেবা কার্যক্রম করতে যাচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট। এ-সংক্রান্ত একটি খসড়াও চূড়ান্ত হয়েছে ইতোমধ্যে। এর মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সব ধরনের অভিযোগ জানাতে পারবেন। আগামী জুন মাস থেকে সব জেলা ও মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই হেল্পলাইন চালু হবে। বিভিন্ন ট্রাইব্যুনাল ও বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতকে ধাপে ধাপে হেল্পলাইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানা গেছে।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৬৪ জেলার জেলা জজ আদালত, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও দায়রা জজ আদালতে বিচারপ্রার্থীদের জন্য হেল্পলাইন সেবা চালু হবে আগামী জুন মাসের শেষের দিকে। আর চলতি বছরের মধ্যেই দেশের সব জেলা পর্যায়ের জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত মহানগর দায়রা জজ আদালত, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ দেশের সব ট্রাইব্যুনাল ও বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালকে হেল্পলাইন সেবার আওততায় আনা হবে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৪(ক) অনুচ্ছেদের এখতিয়ার অনুযায়ী বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট এই সেবা চালু করছেন। এ-সংক্রান্ত একটি খসড়াও ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছেন সুপ্রিম কোর্ট।
বিচারিক হেল্পলাইন সেবায় প্রতিটি আদালত ও ট্রাইব্যুনালের জন্য থাকবে একটি মোবাইল ফোন নম্বর। যেখানে সেবাগ্রহিতারা যোগাযোগ করে সেবা গ্রহণ-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যসহ সেবা গ্রহণে সম্মুখীন যে কোনো প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে পরামর্শ বা অভিযোগ দিতে পারবেন। থাকবে একটি হেল্পলাইন ডেস্ক (কক্ষ)। প্রতিটি আদালতের একজন কর্মকর্তা এ হেল্পলাইন পরিচালনা করবেন এবং সেবাগ্রহীতাকে প্রয়োজনীয় সাহায্য দেবেন। সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতি রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হেল্পলাইন সার্ভিস চালু থাকবে।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে দেশের সব জেলা ও দায়রা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজ আদালত এবং সব চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সবার জন্য হেল্পলাইন সেবার কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর প্রশাসনিক আদালত ও ট্রাইব্যুনাল যেমন- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, অর্থ আদালত, অর্থঋণ আদালত, ইনসলভেন্সি আদালত, আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনাল, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, শ্রম আদালত, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ও বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে চালু হবে বিচারিক হেল্পলাইন সেবা।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত সহকারী রেজিস্ট্রার থেকে তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বিচারপ্রার্থীদের জন্য সেবা সহজ করাসহ পেশাগত কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ১২ দফা নির্দেশনা দেন। সেই আলোকেই বিচারিক হেল্পলাইন চলবে। প্রধান বিচারপতির ১২ দফা নির্দেশনা ছিল- (১) দায়িত্ব পালনে কোড অব কন্ডাক্ট যথাযথভাবে পালন করতে হবে। (২) দায়িত্ব পালনের সময়ে যে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন সম্পূর্ণভাবে বর্জন করতে হবে। (৩) সেবাগ্রহীতাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
(৪) সেবা দেওয়ার সময় কোনো প্রকার বিলম্ব সম্পূর্ণ পরিত্যাজ্য হবে। (৫) সেবাগ্রহীতাদের কোনও হয়রানি করা যাবে না। (৬) সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে। (৭) প্রতিটি শাখায় প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন সম্পন্ন করতে হবে এবং কোনো কাজ পেন্ডিং রাখা যাবে না। (৮) প্রত্যেক শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রারদের তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত শাখাগুলো প্রতিদিন সরেজমিন মনিটর করতে হবে। (৯) প্রত্যেক শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রাররা তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত শাখার কার্যক্রম সম্পর্কে নিজ নিজ অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারদের নিয়মিত অবহিত করতে হবে।
(১০) মনিটর কার্যক্রম দ্রুততর সময়ে চালু হবে। (১১) প্রতি ৪ সপ্তাহ পর পর অতিরিক্ত রেজিস্ট্রাররা মনিটরিং কার্যক্রমের প্রতিক্রিয়া ও ফলাফল রেজিস্ট্রার- আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ এবং রেজিস্ট্রার (বিচার)-এর কাছে রিপোর্ট করবেন; এবং (১২) যদি কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী আচরণবিধি এবং উল্লিখিত নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনো সেবাগ্রহীতাকে হয়রানি করেন বা আর্থিক লেনদেন করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিচারপ্রার্থীসহ দেশের সব নাগরিকের বিচারিক সেবা পাওয়ার বাধা ও অনিয়ম দূর করতে সুপ্রিম কোর্টের মতো সারা দেশে শিগগিরই চালু হচ্ছে বিচারিক হেল্পলাইন সেবা। সাধারণ মানুষের আইনি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে এটা হবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বিচারপ্রার্থীদের জন্য সেবা সহজ করার জন্য প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের দেয়া ১২ দফা নির্দেশনার আলোকে প্রতিটি জেলা ও মহানগরে এই সেবা পরিচালিত হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘সারা দেশের সব আদালতে বিচারিক হেল্পলাইন সেবা চালু করতে যাচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট। এটা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এতে করে সব মানুষ বিচারিক সেবা পাওয়া আরও সহজ হবে বলেই আমি মনে করি।’
সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এক অনুষ্ঠানে এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমাদের কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে বাংলাদেশের সেই মানুষটি, যারা দেশের দূরবর্তী অঞ্চলগুলো থেকে ন্যায়বিচারের আশায় পথ চেয়ে থাকেন। তাই দেশের সব নাগরিকের বিচারসেবায় অভিগম্যতা এবং বিচার-সংক্রান্ত অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে দেশের সব অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের বিচারিক সেবা প্রাপ্তি সহজ করতে সুপ্রিম কোর্টের মতো হেল্পলাইন চালু করা হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে