Views Bangladesh Logo

বিচার বিভাগ সংস্কারে ২৮ দফা সুপারিশ কমিশনের

প্রকাশিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সংস্কার গঠিত বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন। এতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিচার বিভাগের অধীনে রাখাসহ ২৮ দফা সুপারিশ করেছে কমিশন।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেন কমিশনের প্রধান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সুপারিশগুলো হচ্ছে:
১. সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ ও শৃঙ্খলা;

১.১. সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা নির্ধারণে প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্তের প্রাধান্য এবং আপিল বিভাগের প্রবীণতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিধান প্রণয়ন।

১.২. যথাসম্ভব স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগে প্রধান বিচারপতিকে প্রধান করে ৯ (নয়) সদস্যের ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ কমিশন’ গঠনের আইন প্রণয়ন।

১.৩. উন্মুক্ত আবেদনের ভিত্তিতে প্রণীত আইনের অধীনে গঠিত কমিশনের প্রার্থী বাছাই এবং সুপারিশ। কমিশনের সুপারিশ অনুসারে রাষ্ট্রপতির বিচারপতি নিয়োগ।

১.৪. সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, সাবেক বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের জন্য প্রযোজ্য পদ্ধতি ছাড়া অপসারণযোগ্য নন এমন পদে আসীন ব্যক্তিদের পালনীয় আচরণবিধি প্রণয়ন ও প্রকাশ।

১.৫. রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পাওয়া অনুরোধ ছাড়াও স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত পরিচালনা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশের ক্ষমতা কাউন্সিলকে দেয়া।

২. অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলি বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস (পে-কমিশন) বিধিমালা, ২০০৭ এর ৪ বিধির অধীনে পে-কমিশন গঠন এবং বিচারকদের বেতন-ভাতাদি সংক্রান্তে নতুন সুপারিশ প্রণয়ন। বিচারকদের জন্য আচরণবিধি ও বদলি নীতিমালা প্রণয়ন এবং বিচারকদের মর্যাদা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া।

৩. সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনক্রমে পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ শৃঙ্খলা বিধানের ক্ষেত্রে নির্বাহী কর্তৃত্বের অবসান ঘটিয়ে এসবের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের অধীনে আনা। সে উদ্দেশ্যে বিচার-কর্মবিভাগের সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংশোধন। সংবিধানের ৮৮ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংযুক্ত তহবিলের উপর দায়যুক্ত ব্যয়ের আওতায় বিচার-কর্মবিভাগের বিচারক ও কর্মচারীদের পারিশ্রমিক অন্তর্ভুক্ত করা।

৪. আদালত বিকেন্দ্রীকরণ

৪.১. সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধনীর মাধ্যমে রাজধানীর বাইরে প্রতিটি বিভাগীয় সদরে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা। তবে হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ারের পূর্ণাঙ্গতা বা অবিভাজ্যতা এমনভাবে বজায় রাখা, যেন স্থায়ী বেঞ্চগুলো স্থাপনের কারণে দেশের সর্বত্র কর্তৃত্ব প্রয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ার কোনো ভৌগলিক সীমারেখায় বিভাজিত এবং রাষ্ট্রের একক চরিত্র ক্ষুণ্ণ না হয়।

৪.২. উপজেলা সদরের ভৌগলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, জেলা-সদর থেকে দূরত্ব ও যাতায়াত ব্যবস্থা, জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বিন্যাস এবং মামলার চাপ বিবেচনা দেশের বিভিন্ন উপজেলায় সিনিয়র সহকারী জজ ও প্রথম শ্রেণির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত স্থাপন।

৫. স্থায়ী সরকারি অ্যাটর্নি সার্ভিস;

৫.১. সুপ্রিম কোর্ট এবং অধস্তন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা পরিচালনায় স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন এবং ওই সার্ভিসের জন্য সুনির্দিষ্ট কাঠামো, নিয়োগ পদ্ধতি, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা, বেতন কাঠামোসহ আর্থিক সুবিধাদি এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে যথাযথ বিধান প্রণয়ন।

৫.২. অ্যাটর্নি সার্ভিসকে স্থায়ী পেনশনযোগ্য সরকারি চাকরি হিসাবে প্রতিষ্ঠা। সার্ভিসের জন্য সুনির্দিষ্ট কাঠামো, নিয়োগ পদ্ধতি, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা, বেতন কাঠামোসহ আর্থিক সুবিধাদি এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে যথাযথ বিধান সম্বলিত আইন প্রণয়ন, পর্যাপ্ত অবকাঠামো, বাজেট বরাদ্দ ও সহায়ক জনবল রাখা।

৫.৩. প্রস্তাবিত সার্ভিসের দুটি শাখা থাকবে: (ক) সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্ট অ্যাটর্নি সার্ভিস এবং (খ) সহকারী জেলা অ্যাটর্নি, সিনিয়র সহকারী জেলা অ্যাটর্নি, যুগ্ম জেলা অ্যাটর্নি, অতিরিক্ত জেলা অ্যাটর্নি এবং জেলা অ্যাটর্নি সমন্বয়ে গঠিত জেলা অ্যাটর্নি সার্ভিস।

৫.৪. ক্রান্তিকালীন বিধান রাখা, যেন প্রস্তাবিত রূপরেখা পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হওয়ার আগেও অ্যাটর্নি সার্ভিস কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।

৬. আদালতে চূড়ান্তভাবে দণ্ডিত অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি বা নির্বাহী বিভাগের ক্ষমা প্রদর্শনের একচ্ছত্র ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে বোর্ড প্রতিষ্ঠা, যার সুপারিশের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া।

৭. স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস;

৭.১. সরকারি আইন করে বর্তমানে বিভিন্ন তদন্ত ইউনিটে নিয়োজিত জনবলের সমন্বয়ে পৃথক তদন্ত সার্ভিস গঠন। সার্ভিস প্রতিষ্ঠা, ওই সার্ভিসে নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলি নিয়ন্ত্রণ এবং ওই সার্ভিসকে কার্যকরে যাবতীয় বিধান, যতদূর সম্ভব, মূল আইনেই অন্তর্ভুক্ত করা। ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এবং অন্য যেসব আইনে ফৌজদারি অপরাধ তদন্তের উল্লেখ আছে, সেসব আইনে সংশোধনী আনা এবং ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন ও ১৯৪৩ সালের পুলিশ প্রবিধানমালা সংস্কার।

৭.২. এই সার্ভিস হবে পুলিশ বাহিনী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তাদের নিয়োগ, চাকরির শর্তাবলি, নিয়ন্ত্রণ, বাজেট, অবকাঠামো ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোভুক্ত হবে। দায়িত্ব পালন ও ক্ষমতা ব্যবহারে সার্ভিস স্বাধীন থাকবে।

৭.৩. এই সার্ভিস গঠনে নতুন আইন প্রণয়ন। ক্রান্তিকালে পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে প্রেষণে নিয়োগ ও আত্মীকরণ।

৭.৪. তদন্ত সার্ভিস স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিচালিত হলেও এর কর্মকর্তারা যেন রাজনৈতিক প্রভাবের শিকার না হন, সেজন্য উচ্চতর কমিশনের পূর্বানুমোদন ছাড়া তাদেরকে চাকরিচ্যুত করা যাবে না।

৮. বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সংবিধান-সংশোধনী;

৮.১. প্রধান বিচারপতি এবং অন্য বিচারকদের নিয়োগ সংশ্লিষ্ট সংবিধানের বিধানগুলো সংশোধন, যার মধ্যে রয়েছে: অনুচ্ছেদ ৪৮ (৩) (রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে সীমিত করে নিয়োগ কমিশনকে ক্ষমতায়িত করা), ৫৫(২) (প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা থেকে প্রধান বিচারপতি এবং অন্য বিচারকদের নিয়োগ আলাদা করা), ৯৪ (বিচারকদের সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির মতকে প্রাধান্য দেওয়া এবং আপিল বিভাগের ন্যূনতম বিচারক সংখ্যা ৭ (সাত) জন করা), ৯৫ (রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারককেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন, অর্থাৎ, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতির কোনো স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা থাকবে না বা নির্বাহী বিভাগের কোনো প্রভাব থাকবে না।

৯. অধস্তন আদালতের সাংগঠনিক কাঠামো: মামলা ও জনসংখ্যার আলোকে অধস্তন আদালতের বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো। একই ধরনের আদালতের জনবল কাঠামো এবং যানবাহন ও অফিস সরঞ্জমাদির ধরনে অভিন্নতা আনা এবং বিচারকদের পদ সৃজনে পদ্ধতিগত জটিলতা দূর করা। পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা। একই গ্রেডভুক্ত সহায়ক কর্মচারীদের জন্য একই ধরনের যোগ্যতার ভিত্তিতে একই পদ্ধতিতে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের সুপারিশ অনুসারে নিয়োগ।

১০. বিচার বিভাগের আর্থিক স্বাধীনতা;

১০.১ বিচার বিভাগের বাজেট নির্ধারণে সুপ্রিম কোর্টের কমিটি গঠন এবং কমিটিতে নির্বাহী বিভাগের প্রতিনিধিদের সদস্য রাখা। বরাদ্দকৃত বাজেট স্বাধীনভাবে খরচ এবং তা উপযোজন ও পুনঃউপযোজনের পরিপূর্ণ ক্ষমতা প্রদানসহ সুপ্রিম কোর্টের জন্য উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ। বিচার বিভাগের বাজেট বাড়ানো।

১১. বিচার কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার;

১১.১ প্রথম পর্যায়ে বিচাারক কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন। ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্প বাস্তবায়ন। দেওয়ানি আদালতে ই-ফাইলিং চালু। ই-ফাইলিংয়ের মামলাগুলোকে কোর্ট-ফি হ্রাস/ছাড় ও ফাস্ট ট্র্যাকের মাধ্যমে দ্রুত শুনানি ও নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারভিত্তিতে ই-ফাইলিংকে উৎসাহিত করা। সব আদালতে বিদ্যমান ব্যবস্থার পাশাপাশি ই-পেমেন্টে ই-ফাইলিংসহ সব কোর্ট-ফি, খরচ, জরিমানা ও অন্য ফি পরিশোধের ব্যবস্থা। শতভাগ মামলার তথ্য ই-কজলিস্ট মডিউলে প্রদর্শন। সাক্ষ্যগ্রহণ, আসামির হাজিরাসহ সংশ্লিষ্ট অন্য বিষয় অনলাইনে সম্পাদন।

১২. অধস্তন আদালতের ভৌত অবকাঠামো;

১২.১. ভবন নির্মিত না হওয়া ৩৭টি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ভবন নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্প এবং সুপারিশের ভিত্তিতে সুযোগ থাকা বিদ্যমান ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ প্রকল্প এবং অন্য ক্ষেত্রে নতুন জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা।

১৩. আদালত ব্যবস্থাপনায় সুপ্রিম কোর্ট;

১৩.১. আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতিদের সংখ্যা বাড়ানো, বিশেষত আপিল বিভাগে সব সময় ন্যূনতম তিনটি বেঞ্চ পরিচালনা নিশ্চিত।

১৩.২. যৌক্তিক সময়ের মধ্যে মামলার নোটিশ জারি ও শুনানির জন্য প্রস্তুতকরণ নিশ্চিতে ডাক বিভাগের সাথে যৌথ আয়োজনে সর্বোচ্চ ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে নোটিশ ফেরত আসা নিশ্চিত করা।

১৩.৩. অনলাইনে মেনশন-স্লিপ জমা নেয়ার ব্যবস্থা, যেন আইনজীবী ও আদালতের সময় নষ্ট না হয় এবং আদালতের কর্মঘণ্টা বাড়ে। হাইকোর্ট বিভাগে মামলা নিবন্ধনে প্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণ।

১৩.৪. বেঞ্চ পুনর্গঠন বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন, যেন সংশ্লিষ্ট বিচারপতি বা বিচারপতিদের সুনির্দিষ্ট সময়ের আগেই জানানো যায়।

১৩.৫. আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের এখতিয়ারে পরিবর্তন আনা, যেন সুনির্দিষ্ট ও অতি জরুরি বিষয় ছাড়া স্থগিতাদেশের আবেদন নিয়মিত বেঞ্চে নিষ্পত্তি হয়।

১৩.৬. সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবপোর্টালের ব্যবহার সম্প্রসারণ এবং সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের প্রত্যেকটি আদেশ ও রায়ের ইলেকট্রনিক কপি অনলাইনে প্রাপ্তিযোগ্য করা। হাইকোর্ট বিভাগের কোনো মামলায় প্রাথমিক আদেশ (রুল) ঘোষণার সর্বোচ্চ পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রকাশ। আদেশ ঘোষণার ক্রম অনুসারে সেগুলো সংশ্লিষ্ট বিচারপতির স্বাক্ষরসহ প্রকাশ করতে হবে। আর অন্তর্বর্তী আদেশ ঘোষণার পর প্রকাশ করতে হবে সর্বোচ্চ ১০ কার্যদিবসের মধ্যে।

১৪. বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি লাঘব বিচারকদের ছুটি, বিভিন্ন দিবস উদযাপন, আদালতে প্রকাশ্যে পরবর্তী তারিখ ঘোষণা না করা, আইনজীবীর মৃত্যুতে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রাখা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে বিচারপ্রার্থীরা যে হয়রানির শিকার হন, তার প্রতিকার বিধান।

১৫. বিচার বিভাগে দুর্নীতি প্রতিরোধ;

১৫.১. সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন সকল পর্যায়ের বিচারকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য দুর্নীতিবিরোধী সুস্পষ্ট বিধানসম্বলিত আচরণবিধিমালা প্রণয়ন। তিন বছর পর পর সুপ্রিম কোর্ট এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের সম্পত্তির বিবরণ সুপ্রিম কোর্টে পাঠিয়ে ওয়েবসাইটে জনসাধারণের কাছে প্রকাশ।

১৫.২. তিন বছর পর পর সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পত্তির বিবরণ সুপ্রিম কোর্টের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এবং অধস্তন আদালতের ক্ষেত্রে জেলা আদালতের ওয়েবসাইটে প্রকাশ।

১৫.৩. সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ লিখিতভাবে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে পৌঁছাতে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ বাক্স স্থাপন এবং ই-মেইলে অভিযোগ দাখিলে ডেডিকেটেড ই-মেইল অ্যাড্রেস জনসাধারণকে দেয়া।

১৫.৪. অধস্তন আদালতে কর্মরত বিচারকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সমন্বয়ে তিন সদস্যের প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠন। তিন মাস পর পর তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্ত দেয়া। তদন্ত কমিটিতে অভিযোগ জানাতে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ বাক্স স্থাপন এবং ডেডিকেটেড ই-মেইল অ্যাড্রেস জনসাধারণকে দেয়া। অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিরীক্ষায় জেলা পর্যায়ের কমিটির দাখিল করা সব অভিযোগ পর্যালোচনা এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ।

১৫.৫. অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দাখিলে প্রতিটি জজশিপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে অভিযোগ বাক্স স্থাপন এবং ই-মেইলেও দুর্নীতির শিকার ব্যক্তি যেন অভিযোগ জানাতে পারেন, সেজন্য জনসাধারণকে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ডেডিকেটেড ই-মেইল অ্যাড্রেস (যা প্রতিটি জজশিপ ও ম্যাজিস্ট্রেসির জন্য আলাদা হবে) দেয়া।

১৫.৬. আইনজীবীদের দুর্নীতি প্রতিরোধে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি জেলায় পৃথক পৃথক অভিযোগ নেয়া ও তা নিষ্পত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন।

১৫.৭. বিচারাঙ্গণে দুর্নীতি প্রতিরোধে অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা চালু।

১৬ থেকে ২৮ নম্বর পর্যন্ত দফায় আইনগত সহায়তা কার্যক্রম, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি, মামলাজট হ্রাস, গ্রাম আদালত, বিচার বিভাগের অধীনে ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট), আইনের সংস্কার, বিচারক ও সহায়ক জনবলের প্রশিক্ষণ, আইন পেশা, আইন শিক্ষা, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রতিরোধ, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হওয়া, বিচারাঙ্গণকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তকরণ এবং সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের উন্নয়ন বিষয়ে সংস্কারের সুপারিশ করেছে কমিশন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ