Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

এক চোখে দেখছেন না গণআন্দোলনে আহত ৫৭০ জন, দুই চোখেই ৪৫ জন

Shaheen  Khandaker

শাহীন খন্দকার

বুধবার, ৮ জানুয়ারি ২০২৫

ত বছরের জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে চোখে কাঁদানে গ্যাস ও ছররা গুলির আঘাতে আহত হন এক হাজার ৮০ জন। তাদের ৫৭০ জন এখন এক চোখে এবং ৪৫ জন দুই চোখেই দেখছেন না।

চোখে আঘাত পাওয়া ৬৮৬ জন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন আর এক চোখের সমস্যায় এখনো ভর্তি রয়েছেন ৮৬ জন।

রাজধানীর শেরেবাংলানগরের হাসপাতালটিতে চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে ২৭৮ জনের, যাদের বেশিরভাগের চোখে ছররা গুলির আঘাত ছিল। হাসপাতালের এনআইতে থাকা ৮৬ জনের কারও কারও চোখে একাধিকবারও অস্ত্রোপাচার করতে হয়েছে। কয়েকজনের ডান চোখের আলো ফিরবে কি-না, শঙ্কিত রোগী ও স্বজনেরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, অস্ত্রোপচারের পর ছাড়পত্র নিয়ে চলেও গেছেন অনেকে। প্রতি সপ্তাহে ফলোআপের জন্য আসছেন তারা। আস্তে আস্তে বোঝা যাবে, কার দৃষ্টিশক্তি কতটুকু ফিরছে।

চিকিৎসাধীনরা বলছেন, ‘প্রয়োজনে বাইরে যাই সতর্ক অবস্থায়, আবার ফিরেও আসি’।

সাভারের আশুলিয়ার মিজানুর রহমান জানান, ডান চোখে ছররাগুলি লাগলে সহযোদ্ধারা প্রথমে তাকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন-নেসা হাসপাতালে নিয়ে যান। সাধারণ চিকিৎসার পর সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে এই হাসপাতালে রেফার্ড করেন চিকিৎসকরা। ডান চোখে দুবার অস্ত্রোপচারের পর তৃতীয় দফার অপেক্ষায় আছেন তিনি।

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার নূরে আলম ফলের ব্যবসা করতেন ঢাকার যাত্রাবাড়ীর সাইনবোর্ড এলাকায়। আন্দোলনে নেমে চোখে বেশকিছু ছররাগুলি বিঁধলে পাঁচ মাস ধরে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আবু সাইদের মৃত্যু দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি। রাজপথে নেমে আসি। ৫ আগস্টের আগেই যাত্রাবাড়ীতে আহত হই।’

চোখে তিনটি সার্জারির পরও শরীরে এখনো দেড় শতাধিক ছররাগুলির স্প্লিন্টার রয়ে যাওয়ার দাবি নূরে আলমের। বলেন, ‘ডান চোখে দেখি, কিন্তু বাম চোখে কিছুই দেখি না।’

এখন পর্যন্ত আর্থিক বা সরকারি কোনো সহযোগিতাই পাননি বলে অভিযোগ নূরে আলমের। বলেন, ‘আহতদের পক্ষ থেকে উপদেষ্টাসহ সবাইকে মেসেজ দিয়েছি। সুচিকিৎসার জন্য আশ্বাস দিয়েছেন তারা, কিন্তু বাস্তবায়ন কিছুই দেখছি না!’

দেশের বাইরের বিশেষজ্ঞ ভালো কর্নিয়া চিকিৎসক এসে দেখলে হয়তো চোখটা সম্পূর্ণ ভালো হতো বলেও দাবি করেন তিনি।

৫ আগস্ট কুষ্টিয়ায় আহত হলে সেই রাতেই ঢাকায় এনে হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয় কোরবান শেখ হিল্লোলকে। উন্নত দেশ থেকে চক্ষু বিশেষজ্ঞ এনে চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘তারা এসে কোন কোন রোগীকে বাইরে নেয়া প্রয়োজন, তা জানাবেন। আর জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউট সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাবেন।’

হিল্লোল বলেন, ‘তবে আমাদের সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা হয়নি। অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমার পরিচিত দুজন উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যান। তাদের চোখ দেখে চিকিৎসক বলেছেন, চোখ ড্রাই হয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে যদি যেতেন, দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ না ফিরলেও ৭৫ শতাংশ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আবার চীন ও নেপাল থেকে চক্ষু চিকিৎসক এই হাসপাতালে এলেও রোগীদের সন্তোষজনক উন্নতি হয়নি।’

তার মতে, ‘তবে এখনো অনেক সুযোগ রয়েছে, আমাদেরও অনেক ভালো চিকিৎসক রয়েছেন। তাই বাইরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আর আমাদের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে ভালো চিকিৎসা দেশেও হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলনে সবাই আহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হননি। গোটা কয়েক মানুষ আহত, পঙ্গু হয়েছেন বা চোখ হারিয়েছেন। এই সরকার আমাদের সরকার, কেন আমাদের নিয়ে ভাববে না? যাদের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছি, তাদের কাছে কেন আবেদন করবো? সরকারের কাছেই বা কেন আবেদন করবো?’

শেখ হিল্লোল বলেন, ‘আমরা যে ‘যুদ্ধ’ করেছি, তাতে এই দেশটাকে সুন্দরভাবে সাজানোর পথ করে দিয়েছি। আর আবেদনই যদি করবো, তাহলেতো দেশটা ‘স্বাধীন’ করার কোনো মানেই হয় না!’

তিনি বলেন, ‘সরকারকে আমরা বলবো, তারা শুনবে। তারা বলবে, আমরা শুনবো। তাই শাহবাগে বা শহীদ মিনারে চিকিৎসার জন্যই নেমেছি।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ