Views Bangladesh Logo

বগুড়ায় সংস্কারের আগেই করতোয়ার মাটি বিক্রি

Masum   Hossain

মাসুম হোসেন

ম্প্রতি দ্বিতীয় দফায় বগুড়ায় করতোয়া নদী খননের কাজ শুরু করা হয়। তবে সেই কাজ শেষ না হতেই নদীর মাটি বিক্রি করে দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এতে কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এরই মধ্যে লোকসানেও পড়েছেন কৃষক। মাস খানেক আগে করতোয়া নদী উন্নয়ন প্রকল্পে খনন কাজ শুরু করা হয়। অথচ কাজ শুরুর আগেই গত বছরের ১০ নভেম্বর করতোয়ার মাটি বিক্রি করে বগুড়ার পানি উন্নয়ন বোর্ড। শুধু এখানেই শেষ নয়, বর্তমানে একদিকে খনন কাজ, অন্যদিকে চলছে ট্রাকে করে মাটি বহন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বগুড়ার সাব-ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার আসাদুল হক বলেন, বগুড়ার বনানী ব্রিজ এলাকা থেকে মহাশ্মশান (দক্ষিণ বেজোড়া) ঘাট পর্যন্ত ৯০০ মিটারের (নদীর দুপাশ) মধ্যে ১৫ লাখ ৭৪ হাজার ঘনফুট মাটি টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে। মাটি পেয়েছেন মঈনুল ইসলাম ইমি। তিনি ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকায় ওই মাটি কিনেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড মাটি বের করে বা মাপযোগ করে দেয়ার পর ইজারাদার মাটি বহন করতে পারবেন।

খননের আগেই মাটি বিক্রির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম দফায় এই ৯০০ মিটারের খনন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। বিভিন্ন কারণে তা আর হয়নি। সে কারণে এমনটি হয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, মাইনুল ইসলাম ইমিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড এখন পর্যন্ত মাটি বুঝিয়ে দেননি। এরপরেও তিনি করতোয়া নদী থেকে ট্রাকে করে মাটি বহন করা শুরু করেছেন। সেইসঙ্গে নদী খনন কাজও চলমান।

এর আগে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত নিচু কৃষিজমি রক্ষায় বগুড়ার জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে লিখিত আবেদন করেন বগুড়ার দক্ষিণ বেজোড়া এলাকার স্থানীয় কৃষক। সেই আবেদনে ৫৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের স্বাক্ষর রয়েছে। তবে তা শুধু আবেদনেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। ব্যবস্থা নিচ্ছেন না ডিসি- এমন অভিযোগ কৃষকের। মাটির ইজারাদার মঈনুল আকতার ইমি জানান, নিয়মনীতি মেনেই তারা করতোয়া নদীর মাটি নিয়ে যাবেন। অথচ পাউবি মাটি বহনের সীমানা নির্ধারণ করে দেয়ার আগেই তারা তা বিক্রি করা শুরু করেছেন।

শনিবার (১ মার্চ) ভোর থেকে ট্রাকে করে মাটি বহন করা হচ্ছে। এদিন প্রায় ২০০-৩০০ ট্রাক ভর্তি মাটি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কৃষক জানান, নদী খননের সময় তাদের কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে চাষাবাদ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। নদীর তীরবর্তী কৃষিজমি অনেক নিচু। বন্যার সময় জমিতে পানি ওঠে। জমিতে মাটি ভরাট করলে কৃষকদের উপকার হতো; কিন্তু মাটির ক্রেতা ও তার লোকজন দল বেঁধে আসা-যাওয়া করে গ্রামে ভীতির সৃষ্টি করে সব মাটি নিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বগুড়ার উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির জানান, মাটি বিক্রি করার পরেও শতকরা ১৫ ভাগ মাটি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পাবেন। তারা যেন মাটি পান, সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে স্থানীয় কৃষক জানান, তাদের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড। মাটির ইজারাদারের লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিজমিতে মাটি ফেলতে দিচ্ছেন না। এমনকি কৃষি জমিতে যেটুকু মাটি পড়েছে, সেগুলোও তারা উঠিয়ে নিচ্ছেন। তারা সব মাটিই নিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, নদীর মাটির বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড দেখবে। আমার কাছে আবেদন করে থাকলে, সেটা পানি উন্নয়ন বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। সেখানে (পানি উন্নয়ন বোর্ড) যদি আবেদন না পৌঁছে থাকে, তাদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করব। অন্যদিকে কৃষক জানান, আবেদন জমা দেয়ার সময় ডিসি বলেছিলেন, মাটি আগে ক্ষতিগ্রস্তরা পাবেন, পরে ক্রেতা; কিন্তু এখন জেলা প্রশাসন থেকে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ