Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

শিশুদের অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ থেকে বিরত রাখুন

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০২৪

নসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে পুষ্টির গুরুত্ব অপরিসীম। পুষ্টিহীনতায় হ্রাস পায় মানবদেহের কর্মশক্তি ও কর্মোদ্যম, জন্মগ্রহণ করে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু এবং বিঘ্নিত করে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গত কয়েক দশকে পুষ্টির ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবু দেশের শিশুদের বড় একটি অংশ যথাযথভাবে সুষম খাদ্য গ্রহণ না করার ফলে তারা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। বিষয়টি রাষ্ট্রের জন্য কোনোভাবেই সুখকর নয়!

শিশুর জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ তার জন্য প্রধান খাদ্য। ছয় মাস বয়স হওয়ার পর শিশুকে বাড়িতে তৈরি সুষম, পুষ্টিকর খাবার দেয়ার কথা বলেন পুষ্টিবিদ ও শিশু বিশেষজ্ঞরা; কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপে দেখা যাচ্ছে, ৬ থেকে ২৩ মাস বয়সী দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ শিশু কোমলপানীয়, অতিরিক্ত লবণ ও চিনিসমৃদ্ধ প্রক্রিয়াজাত খাবার খাচ্ছে। জরিপেই এসব খাবারকে অস্বাস্থ্যকর বলা হয়েছে।

চিকিৎসাবিদ, পুষ্টিবিদ ও গবেষকদেরও মতামত তাই। তাদের কথা, পরিস্থিতিটি ভয়াবহ। কারণ এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার শিশুদের স্থূলকায় করে তোলে এবং নানা রোগের কারণ হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) স্থূল জন্মহার, স্থূল মৃত্যুহার ও জনসংখ্যার তথ্য বলছে, দেশে ছয় মাস থেকে দুই বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৪৭ লাখ; কিন্তু নিপোর্টের জরিপের হার বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, ২৩ লাখের বেশি শিশু অস্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছে, যা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য ভয়াবহ চিত্র।

তথ্য বলছে, দেশে শিশুরা যেসব কৃত্রিম পানীয় পান করে, সেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে চিনি ও সংরক্ষক (প্রিজারভেটিভ) থাকে। সংরক্ষক ও সুইটেনিং এজেন্টে (মিষ্টিকারক) আবার নানা ধরনের ক্ষতিকর উপাদান থাকে, যা শিশুর অস্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধির কারণ হয়। চিপস, বার্গার ও আধা প্রস্তুত করা নুডলসে সাধারণ লবণ বেশি ব্যবহার করা হয়।

অল্প বয়সে মাত্রাতিরিক্ত লবণে ভরা খাবার শিশুর শরীরে ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তা ছাড়া শিশুদের শরীরে অতিরিক্ত লবণ গেলে তা তাদের উচ্চরক্তচাপের কারণ হতে পারে, যেটি হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। যেসব শিশু এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে বড় হয়, তারা পরিণত বয়সে ডায়াবেটিসসহ নানা রোগের ঝুঁকিতে থাকে। সে ক্ষেত্রে ছোটকালের খাদ্যাভ্যাসের কারণে বড়কালের রোগকে এভাবে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে এত শিশু, এটি ভয়ানক।

শিশুর জন্মের পর প্রথম তিন বছর শারীরিক বৃদ্ধির সঙ্গে তার মানসিক বিকাশ বেশি হয় বলে গবেষকরা মনে করেন। এর জন্য চাই সুষম খাবার; কিন্তু শিশুরা যদি অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে পেট ভরিয়ে ফেলে, তাহলে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে না। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য ও ভিটামিনের ঘাটতি হয়। তাই সন্তানকে এসব খাবার থেকে দূরে রাখতে মা-বাবাকে সচেতন হতে হবে। অভিভাবকদের পুষ্টিজ্ঞান বাড়াতে ও খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে অধিকতর প্রচার দরকার। এ প্রেক্ষাপটে দেশের পুষ্টিহীনতা দূরীকরণে কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ