সম্প্রীতির সুর অটুট থাকুক, অন্তর্ভুক্তির নামে আধিপত্য বন্ধ হোক
মা বাড়ি এসেছিলেন, কাল চলে যাবেন। আজ বিজয়া দশমী, কাল বিসর্জন। দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে মন্দির-মণ্ডপে শেষ হয়েছে দুর্গাপূজার শাস্ত্রীয় সব পূজা অর্চনা। নবমী-দশমী তিথি একসঙ্গে হওয়ায় এ বছর একই দিনে শেষ হয়েছে দুর্গাপূজার মূল আয়োজন। তাই আজ শনিবার (১২ অক্টোবর) বিকেল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে বাজতে থাকবে বিদায়ের সুর।
এ বছর দুর্গাপূজা নিয়ে শুরু থেকেই একটু উৎকণ্ঠা ছিল সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের মনে। রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর অনেক মন্দিরে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা হয়েছে। তারপরও পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তায় দুর্গোৎসব ভালোই পালিত হলো বলা যায়। অন্তত শেষ পর্যন্ত আর কোনো অপ্রীতিকর খবর আসেনি।
প্রথমে পূজামণ্ডপে উঠে ইসলামপন্থিদের একটি দলের ইসলামি গান গাওয়া নিয়ে বেশ একটা হট্টগোলের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর সমালোচনাও হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে, ওই ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এতটা হয়তো দরকার ছিল না, তারপরও উৎসবের শুরুতে এরকম একটি অপ্রীতিকর ঘটনা নিঃসন্দেহে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মনে কিছুটা হলেও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, শারদীয় দুর্গোৎসব হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলেও বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে একটি সর্বজনীন রূপ পেয়েছে। তাই দুর্গোৎসব ঘিরে সারা দেশে অনুষ্ঠিত হয় নানা সাংস্কৃতিক উৎসব। মেলা উপলক্ষে আয়োজিত মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে সব ধর্মের মানুষই অংশগ্রহণ করেন। যে কোনো ধর্মোৎসবই দুটি দিক থাকে- একটি ধর্মীয় অন্যটি সামাজিক। ধর্মীয় আচারাদি ওই ধর্মের মানুষদের নিজস্ব; কিন্তু সামাজিক উৎসব সবার জন্য অবারিত। হাজার বছর ধরে বাংলার মানুষ এভাবেই একে অপরের ধর্মকে উদযাপন করেছে।
এক সময় একটি বাণী ছিল- ধর্ম যার যার, উৎসব সবার; কিন্তু এবার নানা কারণে নানাজন সেই বাণীটিকেও ম্লান করে দিয়েছেন। নতুন বাণী প্রচার হচ্ছে- ধর্ম যার, উৎসবও তার। এভাবে চলতে থাকলে শিগগিরই বাংলার সম্প্রীতির বন্ধন বিনষ্ট হবে। এখনো এসে যে এভাবে সম্প্রীতির বাণী প্রচার করতে হয়, সেটাও দুঃখজনক।
আবহমান বাংলায় এ সবের দরকার ছিল না; কিন্তু নতুন পৃথিবীর রাজনৈতিক বাস্তবতায় ধর্ম নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির ফলে অনেক পুরোনো কথাই বলতে হচ্ছে নতুন করে। অন্তর্ভুক্তির নামে সংখ্যালঘুদের ওপর এক প্রকার আধিপত্যও শুরু হচ্ছে দেশে। তাই আমরা চাই, অন্য ধর্মের ওপর আধিপত্য বন্ধ হোক, সম্প্রীতির সুর অটুট থাকুক। সবাইকে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে