ঈদযাত্রায় সড়ক নিরাপদ রাখুন
আজ থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে ঈদের ছুটি। গতকাল বিকেল থেকেই শুরু হয়েছে ঈদযাত্রা। রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে ছুটে যাচ্ছেন দলে দলে মানুষ। দুঃখজনক বিষয়, গতকাল থেকেই আসতে শুরু করেছে সড়ক দুর্ঘটনার খবর। গতকাল বিকেলের মধ্যেই সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায় বিভিন্ন জেলায় পৃথক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫ জন।
প্রতি বছরই ঈদের আনন্দ অনেকখানি ম্লান করে দেয় এই সড়ক দুর্ঘটনা। দেশে সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো কমবেশি সবারই জানা। চালকের অসতর্কতা, অসচেতনতা, বেপরোয়া বা অনিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালনা, ত্রুটিপূর্ণ রাস্তা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
এবার ঈদের ছুটি খুব দীর্ঘ। ৯ দিন। ফলে শুধু গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া নয়, ঈদকালীন ছুটিতে অনেকেই দূর-দূরান্তে বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে যাবেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সড়ক-মহাসড়কের ৭৫ শতাংশের অবস্থা ভালো। তবু বিশৃঙ্খলার কারণে ঈদযাত্রায় ভোগান্তির ভয় থেকেই যাচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর পুলিশ পুরোপুরি সক্রিয় না থাকার সুযোগে সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়ানো লাখো ব্যাটারিচালিত রিকশায় যানজটের শঙ্কা রয়েছে। সড়ক দখল করে বসা বাজারও ভোগান্তির কারণ হতে পারে। শিল্পকারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে অসন্তোষ, গত কয়েক মাসে কারণে-অকারণে সড়ক বন্ধ করে আন্দোলনের নজিরও ঈদযাত্রায় ভীতি কাজ করছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রাজধানীর বাস-স্টেশনগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। ঢাকা ছাড়তেই যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে গাবতলী, সায়েদাবাদ, টঙ্গী এবং হানিফ ফ্লাইওভারে। গাবতলী, সায়েদাবাদ ও টঙ্গী এলাকায় দেখা গেছে ঢাকার প্রবেশপথে হাজার হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। এতে বাসের গতি আটকে যাচ্ছে। গত বছরের দুই ঈদেই ভুগিয়েছে হানিফ ফ্লাইওভার। এ ফ্লাইওভার হয়ে দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীরা ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে ভোগান্তিতে পড়েন। এবারও একই শঙ্কা রয়েছে। গত ঈদে পদ্মা ব্রিজের টোল প্লাজায় ও আরিচাঘাটে প্রচুর যানজট দেখা গেছে; এবারও একই চিত্রই দেখা যাচ্ছে।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ ওভারটেকিং প্রবণতা। সাধারণত রাস্তায় ধীরগতির গাড়িগুলোকে ওভারটেকিংয়ের প্রয়োজন পড়ে। এ সময় হর্ন বাজিয়ে সামনের গাড়িকে সংকেত দিতে হয়; কিন্তু অনেক সময় সংকেত না দিয়ে একজন আরেকজনকে ওভারটেক করার চেষ্টা করে, যার ফলে সামনের দিক থেকে আসা গাড়ি বের হতে না পেরে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তাই সঠিক নিয়ম মেনে সতর্কতার সঙ্গে ওভারটেক করা উচিত। সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ হলো ত্রুটিপূর্ণ সড়কব্যবস্থা।
মহাসড়কগুলোতে বাঁক থাকার কারণে সামনের দিক থেকে আসা গাড়ি দেখতে না পেয়ে অনেক চালক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। রাস্তার পাশে হাটবাজার স্থাপন এবং ওভারব্রিজ না থাকাও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
৯ দিন ছুটি কাটিয়ে আগামী সপ্তাহ নাগাদ যখন সবাই ঢাকামুখী হবে বা বিভিন্ন জেলা শহরগুলোতে যার যার কর্মক্ষেত্রে ফিরতে শুরু করবে তখনো হয়তো দেখা যাবে একই চিত্র। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রশাসনকেও যেমন জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, পাশাপাশি গাড়িচালক ও যাত্রীদের ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, জীবনের চেয়ে মূল্যবান আর কিছু নয়। কোনো দুর্ঘটনায় যেন ঈদের আনন্দ নষ্ট না হয় এবং জীবন ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে তা নিয়ে সবাইকেই সচেতন থাকতে হবে। তাই ঈদযাত্রায় সড়ক নিরাপদ রাখুন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে