খালেদা জিয়ার ফেরা: স্বস্তির বাতাস বিএনপিতে
চিকিৎসা শেষে প্রায় চার মাস পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ঘটনাকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) অনুপ্রেরণার, আশা উদ্দীপক এবং স্বস্তিদায়ক হিসেবে দেখছে। নেতাকর্মীরা মনে করছেন খালেদা জিয়ার দেশে ফেরায় পরিবর্তনের মাঝ দিয়ে চলা এ দেশের পুনর্গঠনে দলটির ভূমিকা আরও বলিষ্ঠ হবে।
আজ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যখন সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে তখন বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়ার বাসভবন পর্যন্ত রাস্তার পাশে অপেক্ষারত ছিলেন বিভিন্ন স্তরের হাজার হাজার নেতাকর্মী। আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ১১টা ২০ মিনিটে বিমানবন্দর থেকে নিজ বাসভবন ফিরোজার উদ্দেশে রওনা হলে পথে দলীয় নেতাকর্মীদের অভ্যর্থনায় সিক্ত হয়ে দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় পৌঁছায় তাকে বহনকারী গাড়িবহর।
নেতাকর্মীরা বলছেন, দেশে যখন মাইনাস-টু নিয়ে আলোচনা চলছে তখনি চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যুক্তরাজ্যে রওয়ানা হন খালেদা জিয়া। একদিকে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে অপরদিকে খালেদা জিয়ার বিদেশ গমন অস্বস্তিতে ফেলে দলের নেতাকর্মীদের।
ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ ঢাকা বিমানবন্দরের সামনে দাঁড়িয়ে ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘তৃতীয় বিশ্বের কোনো রাজনৈতিক নেতানেত্রীর পক্ষে এরচেয়ে উঁচুতে ওঠা সম্ভব কিনা আমার জানা নেই। তিনি (খালেদা জিয়া) এখন জাতীয় ঐক্য, মর্যাদা ও নিরাপত্তার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। তার প্রত্যাবর্তনে শুধু বিএনপি নেতাকর্মীরাই নিশ্চিন্ত হননি, সঙ্গে সারা দেশের তরুণ প্রজন্মই কিন্তু আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছেন।’
‘তার আগমনের ফলে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে আত্মবিশ্বাস যেমন বেড়েছে, প্রিয় অভিভাবকের উপস্থিতিতে দলীয় কার্যক্রম আরও বেগবান হবে। আমাদের বিশ্বাস, খালেদা জিয়ার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে দিকনির্দেশনা এবং সুচিন্তিত উপদেশ সঙ্গী করে আমাদের নেতা তারেক রহমান তার সুবিবেচিত পদক্ষেপে এই দেশকে এগিয়ে নেবেন।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসাইন আলাল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার মামলা থেকে অব্যাহতিতে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি আসতে শুরু করে; কিন্তু এখনো আমরা নিশ্চিত নই সব মামলা শেষ হতে কত সময় লাগবে। এদিকে গত জানুয়ারিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশের বাইরে যাওয়াতে আমাদের মধ্যে আবার মাইনাস টু থিওরি নিয়ে আতঙ্ক দানা বাঁধতে শুরু করে। আর তার (খালেদা জিয়ার) দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে সেই ভয়ও কাটতে শুরু করেছে। এখন আমরা অপেক্ষা করছি তারেক রহমানের দেশে ফেরার।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ফিরে আসা গণতন্ত্র উত্তরণের পথ সহজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া দীর্ঘকাল ফ্যাসিবাদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ফ্যাসিবাদ বিদায় নেয়ার পর কারাবন্দিত্ব থেকে মুক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন। সেখানে প্রায় ৪ মাস চিকিৎসা শেষে আজকে দেশে ফিরে আসছেন। এটা আমাদের জন্য, জাতির জন্য একটা আনন্দের দিন।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার মাধ্যমে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে উদ্দীপনার সৃষ্টি হবে, তারা আরও উজ্জীবিত হবে। এদিকে তারেক রহমান এখনো দেশের বাইরে আছেন; কিন্তু নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে তার দেশে ফেরার পথ আরও সহজতর হচ্ছে। ফলে বিএনপির রাজনৈতিক পরিকল্পনা ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্যও এটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজায় কারাজীবন শুরু হয় খালেদা জিয়ার। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তার সাজার রায় হয়। ২৫ মাসের বেশি সময় কারাবন্দি থাকার পর ২০২১ সালের মার্চ মাসে খালেদা জিয়া পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মানবিক বিবেচনায় সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে ৬ মাসের জন্য মুক্তি পান। গুলশানে ভাড়া বাসায় থাকলেও কার্যত গৃহবন্দি ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত হলেও পরের চার বছরের বেশি সময় হাসপাতালে কাটে নানা রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার। বারবার আবেদনেও আওয়ামী লীগ সরকার চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেয়নি।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে ৬ আগস্ট খালেদা জিয়া গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি পান। মুক্তির পর গত ৭ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতাল থেকে এক ভিডিও বার্তায় আন্দোলনকারী ছাত্র-তরুণদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এর আগে খালেদা জিয়া ২০১৮ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে সর্বশেষ রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তব্য রেখেছিলেন।
বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার পূর্বে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন।
ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে আইসিইউতে রেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে তাকে দীর্ঘ সময়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে এবং যথাযথ চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেয়া অত্যন্ত জরুরি বলে মত দেন তিনি। ফলে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে প্রায় চার মাস আগে যুক্তরাজ্যে যান খালেদা জিয়া।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে