চিকিৎসা ইস্যুতে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা পেছাল
চিকিৎসার জন্য শুক্রবার বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডনে যাবার কথা থাকলেও তিনি আজ দেশ ছাড়ছেন না। এই যাত্রা কিছুদিনের জন্য পেছাতে পারে বলে জানিয়েছেন বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার চিকিৎসকেরা। তবে কি কারণে এই আকস্মিক পরিবর্তন তা জানাতে পারেনি কেউ।
বিএনপির চেয়ারপার্সন এর মিডিয়া উইং মেম্বার সামসুদ্দিন দিদার খালেদা জিয়া আজকে বিদেশ যাচ্ছেন না তা নিশ্চিত করে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে আজকে বিদেশযাত্রার সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছিলো। কোনো কারণে আজকে হচ্ছে না। সকল প্রক্রিয়া এবং আনুসাংগিকতা কম্পলিট করে ম্যাডামকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়া হবে। তার বিদেশযাত্রার আগে সকলকে এ বিষয়ে জানানো হবে।
দলের পক্ষ থেকে কোন কারণ এখনো জানানো হয়নি। পরবর্তীতে কবে যাবেন, তাও কেউ নিশ্চিত করতে পারছেন না। এর আগে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সবকিছু ঠিক থাকলে শুক্রবার তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যেতে পারেন। সেখান থেকে অন্য কোনো দেশের উন্নত সেন্টারে যাবেন লিভার প্রতিস্থাপনে।
খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নেয়ার ব্যবস্থা করতে বিএনপির পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে চিকিৎসক-নার্সসহ আত্মীয়-স্বজন যারা যাবেন, তাদের ভিসা প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে। তবে অজ্ঞাত কারণে তা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান বিএনপির এক নেতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য জানান ম্যাডামের বিদেশযাত্রা দেরি হবে। বিদেশযাত্রা আগামী সপ্তাহেও হতে পারে কিংবা আরও পরে হতে পারে। বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে।
কিছুদিন আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছিলেন, খালেদা জিয়া প্রথমে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যাবেন। সেখান থেকে পরে তাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কিংবা জার্মানির কোনো মাল্টিডিসিপ্লিনারি হেলথ সেন্টারে নেয়া হতে পারে।
উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে সিসিইউতে থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে তাকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের অক্টোবরে হাইকোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় তার।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। এরপর থেকেই গুলশানের বাসা ফিরোজায় আছেন তিনি।
এরপর থেকে পরিবারের আবেদনে প্রতি ছয় মাস পরপর বিএনপি নেত্রীর মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে আসছিল বিগত সরকার। এর মধ্যে তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার আবেদন করা হলেও বারবার তা প্রত্যাখ্যান করা হয়।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিনই রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বিশেষ ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন। এভারকেয়ার হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসাধীন থেকে সর্বশেষ ২১ আগস্ট গুলশানের বাসায় ফেরেন তিনি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে