সংশোধন হচ্ছে নিকাহনামা
থাকছে না ‘কুমারী’ শব্দ, জানাতে হবে বরের স্ত্রীর সংখ্যা
মুসলিমদের বিয়ের ক্ষেত্রে নিবন্ধনের ফরম বা নিকাহনামার সংশোধন করা হচ্ছে। হাইকোর্টের নির্দেশে আইন মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ নিয়েছে। এতে হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী নিকাহনামার ফরম থেকে নারীর জন্য অবমাননাকর ‘কুমারী’ শব্দটি বাদ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বরের কতজন স্ত্রী বর্তমান আছে, তাও জানাতে হবে সংশোধিত ফরমে। চলতি মাসেই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলে জানা গেছে।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, হাইকোর্টের নির্দেশে মুসলিমদের বিয়ের ক্ষেত্রে নিবন্ধনের ফরম বা নিকাহনামার সংশোধন হচ্ছে। চলতি মাসেই প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। এরই মধ্যে খসড়া (সংশোধিত) ফরম প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া নিকাহ রেজিস্ট্রারদের (কাজি) শিক্ষাগত যোগ্যতা আলিম থেকে বাড়িয়ে ফাজিল এবং ইউনিয়ন ও পৌরসভায় সুবিধাজনক স্থানে নিজ খরচে একাধিক অফিস স্থাপনের পরিবর্তে একটি কাজি অফিস করতে বিধিমালা সংশোধন করা হচ্ছে।
বর্তমান নিকাহনামা ফরমের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে জানতে চাওয়া হয়, ‘বরের কোনো স্ত্রী বর্তমানে আছে কি না এবং থাকিলে অন্য বিবাহে আবদ্ধ হইবার জন্য বর ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ মোতাবেক সালিশি কাউন্সিলের অনুমতি লইয়াছে কি না?’ খসড়া ফরমে এই অনুচ্ছেদে জানতে চাওয়া হয়েছে, ‘বর বিবাহিত, অবিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত, বিপত্নীক কি না? স্ত্রী থাকিলে কতটি এবং অন্য বিবাহে আবদ্ধ হইবার জন্য বর ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ মোতাবেক সালিশি কাউন্সিলের অনুমতি লইয়াছে কি না?’ এ ছাড়া যে কজন স্ত্রী বর্তমান থাকবে, তাদের বিষয়েও তথ্য দিতে হবে নতুন ফরমে।
তবে হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী এখনো কাবিননামায় সংশোধনী না আনার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ের আলোকে কাবিননামার ফরমে এখন পর্যন্ত কোনো সংশোধনী আনা হয়নি। অথচ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ সংবেদনশীলতা ও জবাবদিহির অভাবে ফরমে সংশোধনী আসেনি। সংক্ষুব্ধ হয়ে ব্লাস্ট, নারীপক্ষ ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ যৌথভাবে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বিবাদীদের প্রতি একটি নোটিশ পাঠায়। দেখা যাক এখন আইন মন্ত্রণালয় কী করে।’
জানা গেছে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর নিকাহনামার ফরম সংশোধনবিষয়ক একটি চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, ফরমের খসড়া প্রস্তুত করেছে পিবিআই। খসড়া ফরমে কনে অবিবাহিত, বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত কি না; বর বিবাহিত, অবিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত, বিপত্নীক কি না এবং স্ত্রী থাকলে কয়জন আছে, এই স্ত্রীদের তথ্য জানানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ৫ নম্বর অনুচ্ছেদে নারীর জন্য অবমাননাকর ‘কুমারী’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়েছে।
মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) আইন, ১৯৭৪-এর আলোকে ২০০৯ সালে বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। নিকাহনামা ফরমে ২৫ ধরনের তথ্য চাওয়া হয়। ৫ নম্বর অনুচ্ছেদে ‘কন্যা কুমারী, বিধবা অথবা তালাকপ্রাপ্ত নারী কি না’ তথ্য চাওয়া হয়। ২০২২ সালে এক রায়ে এ ক্ষেত্রে পরিবর্তন ও সংশোধন করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। খসড়া ফরমে এটি সংশোধন করে ‘কন্যা অবিবাহিত, বিধবা অথবা তালাকপ্রাপ্ত নারী কি না?’ লেখা হয়েছে। অন্যদিকে বর্তমান নিকাহনামা ফরমের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে জানতে চাওয়া হয়, ‘বরের কোনো স্ত্রী বর্তমানে আছে কি না এবং থাকিলে অন্য বিবাহে আবদ্ধ হইবার জন্য বর ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ মোতাবেক সালিশি কাউন্সিলের অনুমতি লইয়াছে কি না?’ খসড়া ফরমে এই অনুচ্ছেদে জানতে চাওয়া হয়েছে, ‘বর বিবাহিত, অবিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত, বিপত্নীক কি না? স্ত্রী থাকিলে কতটি এবং অন্য বিবাহে আবদ্ধ হইবার জন্য বর ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ মোতাবেক সালিশি কাউন্সিলের অনুমতি লইয়াছে কি না?’ এ ছাড়া যে কজন স্ত্রী বর্তমান থাকবে, তাদের বিষয়েও তথ্য দিতে হবে নতুন ফরমে।
উল্লেখ্য, নিকাহনামা ফরম সংশোধন চেয়ে ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে জনস্বার্থে একটি রিট করে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), নারীপক্ষ ও মহিলা পরিষদ। ওই বছরই সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট রায়ে মুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে কাবিননামায় ৫ নম্বর অনুচ্ছেদে থাকা ‘কুমারী’ শব্দটি লেখা বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করেন। ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে নিকাহনামা ফরম থেকে ‘কুমারী’ শব্দ বাদ দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি কাবিননামার ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে বরের বর্তমান বৈবাহিক অবস্থা উল্লেখ করারও নির্দেশ দেন আদালত।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে