স্মার্ট করনীতি ছাড়া টেলিকম খাতের কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে: পলক
স্মার্ট করনীতি ছাড়া টেলিকম খাতের কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তিনি বলেন, টেলিকম খাতকে ঢেলে সাজিয়ে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং দেশের জিডিপিতে অবদান রাখতে টেলিকম খাতের প্রস্তুতি হিসেবে এনবিআরকে স্মার্ট করতে হবে।
যৌক্তিক করপোরেট কর নির্ধারণের বিষয়ে এনবিআরের সঙ্গে আলোচনার কথাও বলেন তিনি। ঈদের পর এনবিআর চেয়ারম্যান, বিটিআরসি চেয়ারম্যান ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিকম খাতে পিএসআরসহ দীর্ঘ মেয়াদী যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
দেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর ব্যাপ্তিতে খুশি হলেও সন্তুষ্ট নন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু যেভাব শিক্ষায় খরচ নয়, বিনিয়োগ বলেছেন; ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, টেলিকম খাতেও খরচ নয় বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করি।”
রোববার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে টেলিকম এন্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সংগঠনের সভাপতি রাশেদ মেহেদী সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যামটব মহাসচিব লে. কর্নেল (অব.) মোহম্মদ জুলফিকার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ। সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ ও গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন গ্রামীণফোনের সিনিয়র ডিরেক্টর হোসেন সাদাত, রবি’র চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার সাহেদ আলম, বাংলালিংকের ভারপ্রাপ্ত সিইও তৈমুর রহমান, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির ও টিআইএম নূরুল কবির।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, কর কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হলে এই ইকোসিস্টেমের সঙ্গে জড়িত সবাইকে নিয়ে বসতে হবে। আলোচনার সব কথা যেমন উড়িয়ে দেয়া যাবে না, তবে সব কথার সঙ্গে এক নই। তবে রিফর্ম করতেই হবে। টেলিকম খাতের টোটাল সিস্টেম রিভিউ করে আরও সিমপ্লিফাই করতে হবে।
ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, “দেশের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে জিরো সাম পলিসিতে কর কাঠামো ঢেলে সাজানো উচিত। স্বচ্ছতার মাধ্যমে এনবিআর-কে টেলিকম খাতের কর কাঠামো ঠিক করা উচিত।”
গ্রামীণফোনের সিনিয়র ডিরেক্টর হোসেন সাদাত বলেন, “স্টেকহোল্ডারদের মত নিয়ে একটি সাপোর্টিং পলিসি গ্রহণ করতে পারলে স্মার্ট বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে। গত বছরেই আমরা সরকারকে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি। তাই আমরা সাপোর্টিং পলিসি চাই। ট্যাক্স রেসনালাইজেশন করলে বাজারে বিদ্যমান গ্যাপ মোচন করা সম্ভব হবে।”
রবির চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহেদ আলম বলেন, “নন ট্যাক্স খাতে সর্বোচ্চ কর দিয়ে আমরা গৌরব করি। আমাদের কর দেয়ার সক্ষমতাও রয়েছে। জাতীয় উন্নয়নের জন্য কর দরকার। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যবহারকারী পর্যায়ে বাধা সৃষ্টির মতো কোনো কর থাকা উচিত নয়। আমাদের বিশেষ সম্মানীয় বলা হলেও বিশেষ কোনো সুবিধা দেয়া হয় না। উপরন্তু অনিষ্পত্তি বিষয়ে আমাদের দিনদিন দায় বাড়ছে।”
বাংলালিংকের ভারপ্রাপ্ত সিইও তৈমুর রহমান বলেন, আইসিটি ও টেলিকমে এখন কার্যত কোনো দূরত্ব নেই। তাই এক্ষেত্রে স্মার্ট ট্যাক্সেশন জরুরি। প্রতিবছর একই জায়গা থেকে বারবার ট্যাক্স নিচ্ছে, এর বদলে ট্যাক্সের পরিধি বাড়ানো উচিত।
টিআইএম নুরুল কবির বলেন, এনবিআরের সিদ্ধান্তে অনিশ্চয়তায় দেশে এখন বিদেশি বিনিয়োগ কমছে। সিগারেট আর টেলিকম দুটোতেই একই পরিমাণ ট্যাক্স কেন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ট্যাক্স জিডিপি রেশিওতে বাংলাদেশের অবস্থান পাকিস্তানের চেয়েও খারাপ। ইন্টারনেটের উপর ট্যাক্স-ভ্যাট জিরো করে দিলে সেটা হবে বাংলাদেশের উন্নয়নের মাইলফলক।
সব জায়গা থেকে কর আদায় করতে হবে এই ধারণা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে টেলিযোগাযোগ খাত বিশ্লেষক সুমন আহমেদ সাবির বলেন, সরকারি নীতিগত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যখন কম্পিউটারকে করমুক্ত ঘোষণা করা হলো, তখন থেকেই খাতটি উন্নতি করেছে। তাৎক্ষণিক কর না পেলেও এরচেয়ে অনেকবেশি অর্জণ হয়েছে। অতিরিক্ত করারোপ উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্তরায়। তাই এই করহারকে যৌক্তিক করার আহ্বান জানান তিনি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে