Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

ভূমিহীন ও গৃহহীন- এসব কেমন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়!

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে যতই জানা যাবে ততই আশ্চর্যান্বিত হতে হবে। এমন অদ্ভুত শিক্ষাব্যবস্থা বোধহয় পৃথিবীর আর কোথাও নেই। একবিংশ শতাব্দীর দুই দশক পেরিয়ে গেছে। মানুষ এখন মঙ্গলগ্রহে গিয়ে জায়গা কেনার স্বপ্ন দেখছে। আর আশ্চর্য হতে হয়, বাংলাদেশের ১৪টি অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিও নেই, ভবনও নেই। ১৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চলছে কলেজের শ্রেণিকক্ষে, বিদ্যালয়ের ভবনে ও ভাড়া করা জায়গায়।

গতকাল বুধবার (৮ মে) সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেল, এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আছে- রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, নিজস্ব ক্যাম্পাসহীন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৮।

যার মধ্যে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ডিজিটাল এবং কৃষিশিক্ষার মতো বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। সরকার ২০১৩ সাল ও তারপর বিভিন্ন বছরে এসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আইন করেছে। এরপর শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে; কিন্তু সব কটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের ব্যবস্থা হয়নি। তিনটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ চলছে। এর বাইরে কোনোটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তবে ১৪টির জমিও নেই, ভবনও নেই।

প্রশ্ন হচ্ছে, জমি অধিগ্রহণ না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয় কী করে, আর তা দিলেও নিজস্ব ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা না করে শিক্ষক নিয়োগ করে, ছাত্রছাত্রী ভর্তি করে পড়াশোনার কার্যক্রমই বা কী করে শুরু করে? এসব তো সাধারণ স্কুল-মাদ্রাসা নয়, যে প্রথমে অস্থায়ী কোনো ভাড়া করা ঘরে ক্লাস শুরু করে পরে সুবিধা মতো নিজের জায়গায় চলে যাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বৃহৎ ধারণাটি তা-ই তো এর সঙ্গে পরিপন্থি। তা ছাড়া, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরও, এত বছরে কেন জমি অধিগ্রহণ হয়নি, বা নিজস্ব ভবন প্রতিষ্ঠা হয়নি- এটা তো কোনো যুক্তিতেই আসে না।

এ কথা সত্য যে, একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসের জন্য যেসব প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে বিপুল টাকা ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে। যেমন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২২৫ একর জমি অধিগ্রহণ ও নিজস্ব ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। সরকার এখন আর্থিক চাপে রয়েছে, তাই বিপুল ব্যয়ের এসব প্রকল্প কবে অনুমোদন পাবে, তা নিয়ে অনেকেই সংশয়ে আছেন।

আইন পাসের পরেই যেনতেনভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শুরু করে দেয়ার পর দক্ষ শিক্ষকও নিয়োগ দেয়া হয় না। ফলে ছাত্রছাত্রীরা নামমাত্র স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষা শেষ করছেন। কৃষি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যবহারিক শিক্ষা না থাকায় পুঁথিগত শিক্ষা হলেও নানা দিক থেকেই শিক্ষার্থীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে। ইউজিসি জানিয়েছে, দেশে এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৫৫টি। অনুমোদন (আইন) হয়েছে আরও ছয়টির।

সংখ্যায় অসংখ্য হলেও অভিযোগ আছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে। কয়েক দিন আগে (১ মে) যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত তালিকায় এশিয়ার সেরা ৩০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আসেনি দেখে অনেকেই হাহাকার করেছেন। এভাবেই যদি অবস্থা চলতে থাকে, তাহলে কী দাঁড়াবে!

দেশের শিক্ষা বিস্তারে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও প্রসারে সরকার বিরাট ভূমিকা রাখছে বলে প্রায়ই প্রচার করে; কিন্তু কাগজে-কলমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আইন পাস করাই তো কেবল প্রকৃত শিক্ষাপ্রসার নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলে যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে। আমরা আশা করব, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, মন্ত্রণালয় দ্রুত জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ