Views Bangladesh Logo

জাপানে কয়েক দশকের সবচেয়ে বড় দাবানলে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত

জাপানের উত্তর-পূর্ব উপকূলের ওফুনাতো শহরের হনশুর দ্বীপে চলমান ভয়াবহ দাবানলে অন্তত একজনের মৃত্যু হয়েছে। ওই এলাকা থেকে হাজার হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশকিছু বাড়িঘরও।

দেশটির প্রধান এই দ্বীপটিতে চারদিন ধরে আগুন জ্বলছে। টোকিও থেকে ৪৮০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বের ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি শহর ঘন ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে। আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ে উত্তর ও মধ্যঞ্চলীয় সানরিকু-চো রিওইরির পশ্চিম দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।


কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে, দাবানল আরও ছড়িয়ে ওফুনেতো ৩৫ বছরের মধ্যে জাপানের বৃহত্তম দাবানল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। 

সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকে-র আকাশচুম্বী ফুটেজে দেখা গেছে, প্রায় ৪০ হাজার জনসংখ্যার শহর ওফুনাতোর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ভবনগুলোর পুড়ে যাওয়া ফ্রেম এবং অন্য স্থাপনা থেকে আগুন এবং ঘন সাদা ধোঁয়া বের হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ছবিগুলোতেও দেখা গেছে, বহু বাড়ি আগুনে পুড়ছে।

২০১১ সালের মার্চ মাসে ভূমিকম্প ও সুনামিতে ধ্বংসপ্রাপ্ত ওফুনাতোর সীমান্তবর্তী ঘন বনাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই হাজার জনেরও বেশি আত্মরক্ষা বাহিনীর (এসডিএফ) সদস্য এবং অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা লড়াই করছেন।

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) পর্যন্ত আগুন প্রায় পাঁচ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে, ৮৪টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক হাজার ৩০০ পরিবারের তিন হাজার ৬০০ জনেরও বেশি সদস্যকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

আরও এক হাজার ২০০ জন বাসিন্দা স্কুল, জিমনেসিয়াম ও অন্য আশ্রয়কেন্দ্রসহ বেসরকারি সামাজিক স্থাপনাগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন এবং দুই হাজার জন বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়দের সাথে অবস্থান করছেন। জনগণের নিরাপত্তা বিবেচনায় ওই এলাকার স্কুল ও ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, গত সপ্তাহের শেষের দিকে সানরিকু-চো রিওইরির রাস্তায় মৃতদেহ পাওয়া একজনের মৃত্যুর জন্য আগুন দায়ী হতে পারে।

সংবাদপত্র আসাহি শিম্বুন জানায়, ওফুনাতো শহরের মেয়র কিয়োশি ফুচিগামি এই সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগুনের তীব্রতা উল্লেখযোগ্য। আমরা উদ্বিগ্ন, এটি আরও ছড়িয়ে পড়বে’।

প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ক্ষয়ক্ষতি সীমিত করতে যতোটা সম্ভব অগ্নিনির্বাপক এবং এসডিএফ কর্মী মোতায়েনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

পার্লামেন্ট সদস্যদের তিনি বলেছেন, ‘যদিও আগুন কিছুটা ছড়িয়ে পড়বে তা অনিবার্য, তবে আমরা জনগণের ঘরবাড়িতে যেন কোনো প্রভাব না পড়ে, তা নিশ্চিতে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেব’।

অগ্নিনির্বাপণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার মতে, ১৯৮০ সালের পর থেকে জাপানে এই দাবানল সবচেয়ে বড়। এই শীতে পাহাড়ি নাগানো প্রিফেকচার সহ অন্যান্য অঞ্চলেও আগুন লেগেছে, তবে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে, স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।

ফেব্রুয়ারি জুড়ে ওফুনাতোতে মাত্র ২.৫ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা আগের বছরগুলোতে একই মাসে গড়ে ৪১ মিমি ছিল। ১৯৪৬ সালে আবহাওয়া সংস্থা রেকর্ড রাখা শুরুর পর থেকে উত্তর-পূর্ব জাপানের অঞ্চলগুলোতে সবচেয়ে শুষ্ক শীতকাল দেখা গেছে।

আবহাওয়া কর্মকর্তাদেরও অনুমান, এই অস্বাভাবিক শুষ্ক শীত এবং তীব্র বাতাস এই দাবানলের জন্য দায়ী। তবে স্বস্তিও আসতে পারে। কেননা, বুধবার (৫ মার্চ) ভোর থেকে তুষারপাত শুরু এবং দুপুরের দিকে বৃষ্টিতে পরিণত হবে।

কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের জলসম্পদ গবেষণার অধ্যাপক ইয়োশিয়া টোগে জাপান টাইমসকে বলেন, ‘আবহাওয়া শুষ্ক, বাতাস তীব্র এবং ভূখণ্ড খাড়া এবং গাছগুলো, যার মধ্যে অনেকগুলো অত্যন্ত দাহ্য। এই কারণগুলোও দ্রুতগতিতে আগুন ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে’।

সরকারি তথ্য অনুসারে, ১৯৭০-এর দশকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর থেকে জাপানে দাবানলের সংখ্যা কমেছে। তবে ২০২৩ সালে দেশজুড়ে প্রায় এক হাজার ৩০০টি ছিল, যা ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল সময়কালে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল, যখন বাতাস শুকিয়ে যায় এবং বাতাস বেড়ে যায়।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ