সাম্য হত্যাকাণ্ডের পরেও ঢাবিতে ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত প্রায় ৬০০ মিটার পথজুড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এই এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা, পর্যাপ্ত আলো বা নিয়মিত নিরাপত্তা টহলের অভাবে শিক্ষার্থী ও পথচারীদের জন্য বাড়চ্ছে ঝুঁকি।
ঢাবির আইসিটি সেলের পরিচালক ড. মোসাদ্দেক হাসান কামাল জানান, টিএসসি মেট্রো স্টেশন থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। একই বিভাগের টেকনিক্যাল অফিসার হাবিবুর রহমানও নিরাপত্তা সংক্রান্ত পর্যাপ্ত তথ্য দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই এলাকায় মোট ছয়টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে, তবে সেগুলো টিএসসি মেট্রো স্টেশন, রমনা কালীমন্দির বা ঢাকা গেটের প্রবেশপথ কাভার করে না।
এ প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, ‘আপনারা যে ক্যামেরাগুলো দেখেছেন, সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, বরং অন্যান্য দপ্তরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্থাপিত।’
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, মেট্রোর পিলার ৫৪৩ থেকে ৫৬২ পর্যন্ত কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। ১৯টি ল্যাম্পপোস্ট থাকলেও একপাশে সাতটি বাতি বিকল হয়ে পড়ে আছে। মেট্রোর নিচে কিছু আলো ছড়িয়ে পড়লেও বেশিরভাগ এলাকা অন্ধকারে ঢাকা।
রমনা কালীমন্দির ও তিন নেতার মাজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসংলগ্ন এই পথ এখন ‘ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা’ হিসেবে পরিচিত। মেট্রো স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার সদস্য নিকুঞ্জ জানান, স্টেশনের গেট ‘এ’ ও ‘বি’তে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই।
দোয়েল চত্বরে মোতায়েন আনসার সদস্য আল-আমিন ও আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মধ্যরাত ৩-৪টার দিকে এখানে বসে থাকলে ভয় লাগে। ভবঘুরে ও মাদকসেবীরা বিপজ্জনক অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করে। আমাদের কাছে শুধু একটি ওয়াকিটকি আছে।’
রাত্রিকালীন পথচারী ও রিকশাচালকরা জানান, গভীর রাতে কিছু বাইকার মেট্রো স্টেশনের নিচে জড়ো হয়ে আড্ডা দেয়। মাঝেমধ্যে আলো হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, এমনকি কয়েক সেকেন্ডের জন্য এলাকা ব্ল্যাকআউট হয়, যা ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে।
ঢাবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রক্টরিয়াল টিম প্রতিদিন ভবঘুরে ও ছিন্নমূলদের ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে দেয়। তবে কিছুক্ষণ পর তারা আবার ফিরে আসে। সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে চূড়ান্ত উচ্ছেদের কথা থাকলেও তারা এখন কিছু প্রশাসনিক জটিলতায় রয়েছে। রোববার থেকে তাদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হবে।’
অথচ এই পথে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ চলাচল করেন। দায়িত্বহীনতা, সমন্বয়ের অভাব এবং যথাযথ পদক্ষেপের ঘাটতির কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এখন গুরুতর হুমকির মুখে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে