Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ড

যেসব কারণে ঝরল এত প্রাণ

Kamrul  Hasan

কামরুল হাসান

শুক্রবার, ১ মার্চ ২০২৪

০০০ বছর আগে জুলিয়াস সিজার লিপ ইয়ার প্রথম চালু করার পর থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারিকে লিপ ডে হিসেবে উদযাপন করা হয়। গত কয়েক দশক ধরে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

অনেকের জন্য যেসব মুহূর্ত আনন্দের উপলক্ষ হতে পারত, তা আজ তাদের বা তাদের পরিবারের জন্য আজীবন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। রাজধানীর বেইলি রোডে গত বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এরইমধ্যে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১৩ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকরভাবে অনুসরণ করা গেলে মৃত ও আহতের সংখ্যা অনেক কম হতে পারত। একইসাথে তাঁরা এও বলছেন যে, মৃত্যুসংখ্যা বেশি হবার কারণ হাইড্রোকার্বন, কার্বন মনো অক্সাইডের বিষক্রিয়া নয়।

অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে পড়ে গেলে কী করতে হবে?

২০১৪ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে Economictimes.indiatimes.com উল্লেখ করেছে, কেউ যদি ভবনের ভেতরে আগুন দেখতে পান তবে প্রথম ব্যবস্থাটি হবে ফায়ার অ্যালার্ম বাজানো এবং সে স্থান থেকে অতিদ্রুত বের হওয়া।

যদি সে জায়গায় আটকে পড়ে তবে তাকে একটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র খুঁজে বের করতে হবে এবং ফায়ার অ্যালার্মের সুইচটি টানতে হবে। সাধারণত এই দুটো জিনিস কাছাকাছিই থাকে।

তবে যদি এই পদ্ধতি কাজ না করে, তবে তাঁকে মনে রাখতে হবে, গরম বাতাস সবসময় উপরে উঠে যায়। সুতরাং যদি সেখানে ধোঁয়া থাকে, তবে তাকে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়তে হবে, যা আগুনে তার এক্সপোজার কমিয়ে দেবে। আর যদি সেই মুহূর্তে ধোঁয়ায় কিছু দেখা না যায়, সেক্ষেত্রে তাঁকে দেয়ালে হাত রেখে হাঁটতে হবে যাতে তিনি পথ না হারান।

এরপর তাঁকে হামাগুড়ি দিয়ে লিফটে না গিয়ে কাছের সিঁড়ি ব্যবহার করে নিরাপদ স্থানে যেতে হবে তা তিনি যে তলায়ই থাকুন না কেন।

redcross.org অনুসারে ধোঁয়ার মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে যাবার সময়, নিচু হয়ে বের হতে হবে এবং পেছনের দরজা বন্ধ করে দিতে হবে।

ইলেকট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশনের পর্যবেক্ষণ

শুক্রবার (১ মার্চ) বিকেলে, ইলেক্ট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইসাব) একটি দল দুর্ঘটনার স্থান পরিদর্শন করে এবং তাদের কিছু পর্যবেক্ষণ উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান।

ইসাব-এর সাধারণ সম্পাদক জাকির উদ্দিন আহমেদ জানান, তাঁরা ভবনটিতে অগ্নিসতর্কতা ও অগ্নিনিরাপত্তার ন্যূনতম ব্যবস্থারও কোনও চিহ্ন খুঁজে পাননি।

ভবনটির প্রতিটি তলার প্রবেশ পথ খুবই অপর্যাপ্ত ও সংকীর্ণ। একইসাথে, এটাও স্পষ্ট যে সেখানকার ‘ফায়ার সিকিউরিটি সিস্টেম’ কোনও কাজে আসেনি। ফলে আগুন দ্রুত নিচ থেকে ওপরে ছড়িয়ে যায়।

এছাড়া ভবনে জরুরি দরজা ছিল না। এমনকি সিঁড়ির পাশে একটি গ্যাস সিলিন্ডারও পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আবার যেসব অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র আছে সেগুলোও ব্যবহার করা হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সুতরাং, কোনও সক্রিয় অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে থাকা মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন, যে কারণে এতগুলো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন ইসাব-এর সাধারণ সম্পাদক জাকির উদ্দিন।

কয়েকটি সহজ নিয়ম মানা হলেই বেঁচে যেত অনেক প্রাণ

সেফটি অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের বর্তমান ও বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের অপারেশন অ্যান্ড মেইন্টেনেন্সের সাবেক পরিচালক মেজর (অব.) একেএম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ভবনটির একমাত্র বেরুনোর পথে যখন আগুন লাগে তখন কারও পক্ষে শান্ত থেকে কাজ করা কঠিন। তবে এরকম করা গেলে মৃত্যু অনেক কম হতে পারত।

তিনি বলেন, তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো হত যদি রুমে ধোঁয়া দেখার পরেই হামাগুড়ি দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যাওয়া যেত। কারণ এ ধরনের বিষাক্ত ধোঁয়া কখনই মেঝের ১৮ ইঞ্চির মধ্যে আসে না। এবং সে সময়ে তাদের মুখ বন্ধ রেখে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে হত।

তিনি আরও বলেন, “বুঝতে হবে যে ভবনটিতে উপস্থিত পদার্থগুলো বেশিরভাগ প্লাস্টিক, রবার ও কাঁচের তৈরি। এবং এই উপাদানগুলোকে পোড়ালে অ্যালডিহাইড, কার্বন ফসফেট ও বেনজিনের মতো হাইড্রোকার্বন তৈরি হতে পারে। এবং এই পদার্থ ধারণকারী ধোঁয়া নাক দিয়ে ঢোকে না বরং মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করে।”

তাঁর মতে, যদি অ্যালার্ম সময়মত বেজে ওঠতো এবং সবাই ভবনের ছাদে উঠে যেতে পারত তবে তাঁদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আরও অনেক বেশি বেড়ে যেত।

ঢাকার বেইলি রোডের সাততলা গ্রিন কোজি কটেজ শপিং মলে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৪৬ জন নিহত ও ২২ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।

এদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৩ জন ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১০ জন মারা যান। ভবনটি থেকে ৭৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ওই ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি দোকানে আগুন লাগে।

গ্রিন কোজি কটেজ শপিং মলে অন্যান্য দোকান এবং ডিনার যেমন একটি স্যামসাং শোরুম, গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার, ইলিয়েন, খানা এবং পিজ্জার ইন রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রাত ১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।

পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন পরে জানান, ভবনটিতে মাত্র একটি দোকান ছিল, বাকি আউটলেটগুলি সবই রেস্তোরাঁ। পুরো ভবন জুড়ে গ্যাস সিলিন্ডার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। এর মধ্যে যে কোনো একটি বিস্ফোরিত হয়ে আগুন লাগতে পারে।

র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি খুরশীদ হোসেন জানান, রাজধানীর বেইলি রোডের সাততলা ভবনের নিচতলার ছোট একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। বেশ কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার থাকায় সেগুলো বিস্ফোরিত হয় এবং আগুন দ্রুত পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ