Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

কিংবদন্তি সালাহউদ্দিনের ‘অম্ল-মধুর’ ফুটবল

Mahbub  Sarkar

মাহবুব সরকার

রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ফুটবল এবং ক্রিকেট- দুই খেলাতেই পটু ছিলেন কাজী মো. সালাহউদ্দিন। একটা সময় বিপুল দর্শক ফুটবলে আকৃষ্ট ছিলেন। ওই সময়কার জনস্রোত এবং উন্মাদনার কারণে ক্রিকেট ছেড়ে ফুটবলকে বেছে নেয়া।

২. বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে হাজারো স্মৃতি থাকলেও ফুটবল ক্যারিয়ার গুটিয়ে নেওয়ার মুহূর্তটাকে সেরা হিসেবে উল্লেখ করেন দেশের ফুটবল ইতিহাসের সেরা তারকা। যার পেছনেও রয়েছে বিপুল লোক সমাগমের ঘটনা- ১৯৮৪ সালের ১৯ অক্টোবর আবাহনীর জার্সিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানের বিপক্ষে ম্যাচে স্টেডিয়ামে (গ্যালারি ও বাইরে) উপস্থিত ছিলেন প্রায় ৫০ হাজার দর্শক! বিদায় বেলায় দুই ক্লাবের সমর্থকদের ভালোবাসায় সিক্ত ছিলেন সাবেক এ তারকা।

৩. বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি হিসেবে ১৬ বছরের ইতি টানার ঘটনায়ও মিলে যাচ্ছে লোক সমাগমের বিষয়- রাষ্ট্র ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর নিয়মিতই কাজী মো. সালাহউদ্দিনের পদত্যাগের দাবি একাট্টা হতে দেখা গেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, সমর্থকদের জোট, সাবেক ফুটবলার এবং বিভিন্ন ব্যক্তিদের।

৪. কাকতালীয়ভাবে সাবেক এ তারকা ফুটবলারের বাফুফে মসনদে আসীন হওয়ার পেছনেও বিপুল সমাগমের যোগসূত্র খুঁজে পাবেন। বাফুফে সভাপতির পদ থেকে কাজী মো. সালাহউদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে করা বিক্ষোভে যাকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে, সেই পিএনপি নেতা আমিনুল হক খেলোয়াড়ীয় জীবনে নিয়মিত লিগ আয়োজনের দাবিতে সতীর্থদের সঙ্গে বাফুফে ভবনের সামনে আন্দোলন করেছেন, যা তৎকালীন ফুটবল নিয়ন্তাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি করেছিল; একইভাবে কাজী মো. সালাহউদ্দিনের বাফুফে সভাপতি হওয়ার পথটাও পরিষ্কার করেছিল।

এমন মিল খুঁজতে গেলে অনেক ঘটনাই সামনে আসবে- ২০০৮ সালে কাজী মো. সালাহউদ্দিন যখন প্রথমবারের মত বাফুফে সভাপতি নির্বাচিত হন, তখন দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছিল। কাকতালীয়ভাবে ১৬ বছরের বাফুফে অধ্যায় শেষ করার সময়ে এসেও দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। ঘটনাবহুল জীবনে নানা ইস্যুতে দারুণ মিল থাকলেও ফুটবলার সালাহউদ্দিনকে বাফুফে সভাপতি সালাহউদ্দিনের সঙ্গে কোনভাবেই মেলানো যাচ্ছে না। কারণ খেলোয়াড়ী জীবনে ছিলেন বিস্ময়কর জনপ্রিয়- দর্শকদের স্বপ্নের নায়ক। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পেশাদার ফুটবলে পা রাখা সাবেক এ তারকার সাংগঠনিক অধ্যায়টা কিন্তু তেমন নয়। এখানে ব্যর্থতার সঙ্গে ছিল বিতর্ক। ২০২২ সালের বিশ্বকাপ খেলার ভিশন চূড়ান্ত করার মত হাস্যকর ঘোষণা। নানা ইস্যুতে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মুখোমুখী অবস্থানে দাঁড়ানোর মতো ঘটনায় বরাবরই আলোচনায় ছিলেন তিনি।

ফুটবলার এবং কোচ হিসেবে দারুণ সাফল্য ও জনপ্রিয়তার পর খেলাটির প্রশাসক হিসেবে ব্যর্থতার বেশকিছু কারণও আছে। যার অন্যতম নিশ্চয়ই বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর অতি নির্ভরতা। এ নির্ভরতার সুযোগ নিয়ে বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ দুর্নীতির সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। সহযোগী হিসেবে ছিলেন ফিফার নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া সাবেক প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেন, অর্থ কর্মকর্তা অনুপম হোসেন, ম্যানেজার অপারেশন্স মিজানুর রহমানরা।

আপাদমস্তক দুর্নীতিবাজ একটা পেশাদার কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে কাজী মো. সালাহউদ্দিনের জন্য ফুটবল এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটা বেশ কঠিন ছিল। কারণ দেশের ফুটবলে প্রধান সমস্যাই হচ্ছে অর্থ সঙ্কট। সে অর্থ যদি ফুটবলীয় কর্মকাণ্ডের বাইরে কারোর পকেটে যায়, উন্নয়নটা হয়ে দাঁড়ায় অসম্ভব! বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হয়তো সেটাই ঘটেছে। অর্থ সংকট ও দুর্নীতির মাঝেও সহকর্মীদের পূর্ণ সমর্থন প্রয়োজন ছিল। বিগত ১৬ বছরে সে সমর্থন খুব কম সময়ই পেয়েছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে সহকর্মীদের অভিযোগ আছে- নারী বিভাগের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণকে অতিরিক্ত স্বাধীনতা দেওয়ার কারণে অন্যদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে কাজী মো. সালাহউদ্দিনের।

কেবল ফুটবল নয়, দেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে অন্যতম সেরা তারকার জন্ম ১৯৫৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার আগে বিএএফ শাহীন স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৬৯ সালে ওয়ারী ক্লাব দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু। পরের বছর মোহামেডানে খেলেছেন। ১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের হয়ে খেলেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত আবাহনীর হয়ে খেলেছেন। আবাহনীতে খেলার সূত্রে শেখ কামালের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, বন্ধুত্ব। সে সূত্র ধরে বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন ছিলেন কাজী মো. সালাহউদ্দিন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কটা বোঝাতে একটা উদাহরণ টানা যাক- বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আবাহনী-মোহামেডানের মধ্যেকার সুপার কাপ ফাইনাল দেখছিলেন শেখ হাসিনা। যে কক্ষ থেকে খেলা দেখছিলেন, সেখানে শেখ হাসিনাসহ ৮ জনের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল; কিন্তু কাজী মো. সালাহউদ্দিনসহ সেখানে উপস্থিত ৯ জন। সাবেক এ তারকা ওই কক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিলেন। কিছুক্ষণ পর শেখ হাসিনা দেখলেন পাশে কাজী মো. সালাহউদ্দিন নেই। ডাকলেন ‘এই... তূর্য (কাজী মো. সালাহউদ্দিনের ডাক নাম)’। পরে তিনি এক প্রতিমন্ত্রীকে তুলে দিয়ে সেখানে কাজী মো. সালাহউদ্দিনকে বসান।

শেখ হাসিনার সঙ্গে এ সম্পর্কটা ফুটবলাঙ্গনে কাজী মো. সালাহউদ্দিন অবশ্য কখনোই বিক্রি করেননি; যেমনটা অন্যান্য ক্রীড়া সংগঠকদের বেলায় দেখা গেছে। তারপরও সাবেক এ তারকার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার যে অভিযোগ আনা হচ্ছে। সেটা কতটুকু বাস্তবসম্মত- এ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারেও কিন্তু বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন টানা চার মেয়াদে বাফুফে সভাপতির দায়িত্ব পূরণ করতে যাওয়া সাবেক এ ফুটবলার। যেখানে তিনি বলেছেন, ‘আমি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ঠিক আছে। সম্পর্কটা ব্যক্তিগত। আমি কি কখনও রাজনীতি করেছি?’

বিগত ১৬ বছরে কাজী মো. সালাহউদ্দিন দেশের ফুটবলকে খাদের কিনারায় নিয়ে গেছেন- মর্মে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, শীর্ষ ফুটবল প্রশাসক হিসেবে দায় অবশ্যই তাকে নিতে হবে। কিন্তু এ ব্যর্থতার একমাত্র কারণ কিন্তু কাজী মো. সালাহউদ্দিন নন। একটু পেছনে ফিরে যাওয়া যাক, ২০০৮ সালের ২৮ এপ্রিল নির্বাচনের মাধ্যমে কাজী মো. সালাহউদ্দিন ক্ষমতায় আসার আগের কয়েক বছর দেশের ফুটবলে চরম অস্থিরতা চলেছে। ঘরোয়া লিগ নিয়মিত ছিল না বলে ফুটবলারদের আয়ের পথ বন্ধ ছিল। আন্দোলন-সংগ্রাম-ভিক্ষোভ করেই দিন কাটত ওই সময়কার ফুটবলারদের। প্রথম দফা নির্বাচনে কাজী মো. সালাহউদ্দিনের ঘোষণা ছিল, ‘ঢাকার ফুটবল সচল করব’। সেটা তিনি করতে পেরেছেন।

সুফল হিসেবে বিগত কয়েক মৌসুম স্থানীয় ফুটবলারদের পারিশ্রমিক ৮০-৯০ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছিল! কাজী মো. সালাহউদ্দিনের বাকি ফিরিস্তি টানার আগে ফুটবলারদের প্রসঙ্গে একটু বলে নেয়া যাক। ৭-৮ মাসের এক মৌসুমে যিনি ৮০-৯০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নেন; পরের মৌসুমে নৈপুণ্য শানিত করতে সে ফুটবলার উচিত কিছু অর্থ নিজের পেছনে ব্যয় করা; কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে পুষ্টিবিদ, ফিজিও কিংবা ট্রেইনারের পেছনে ফুটবলারদের বিনিয়োগের নজির এ দেশে নেই বললেই চলে। মান্ধাতা আমলের মতো এখনো জাতীয় দলের কার্যক্রমের জন্য বাফুফের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় ফুটবলারদের।

জাতীয় দলের কার্যক্রম নির্ভর করে একটি দেশের ক্লাব কাঠামোর ওপর; কিন্তু এক বসুন্ধরা কিংস বাদ দিলে বাংলাদেশের ক্লাব কাঠামো এখনও পেশাদারিত্বের ছোঁয়া পায়নি। সেখানে পেশাদার কাঠামো গড়তে না পারার দায় অবশ্যই বাফুফের, সে দৃষ্টিকোণ থেকে কাজী মো. সালাহউদ্দিনও ব্যর্থ। পেশাদার ক্লাব কাঠামো না থাকায় ঘরোয়া ফুটবল কার্যক্রম চলেছে একভাবে, জাতীয় দলের কার্যক্রমে ছিল ভিন্নতা। এমন বিচ্ছিন্ন পথচলায় আর যাই হোক, আপনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। বাংলাদেশ ফুটবলের ক্ষেত্রে সেটা নিষ্ঠুর বাস্তবতা হয়ে এসেছে। যে কারণে ফিফা র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৪!

পরের নির্বাচনে কাজী মো. সালাহউদ্দিনের ঘোষণা ছিল, তৃণমূলে যাওয়ার। ফুটবলের তৃনমূল পর্যায়ে গিয়েছিলেন বটে, কিন্তু সেখানে গতিশীলতা আনতে পারেননি। এ ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করেছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের তৃণমূলের কাঠামো। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল এসোসিয়েশন (ডিএফএ) গড়ার মাধ্যমে তৃনমূল পর্যায়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থা (ডিএসএ) থেকে আলাদা হয়ে গেছে ফুটবল। জেলা স্টেডিয়ামগুলো ডিএসএর অধীনে থাকে। তাই ডিএফএ ফুটবল কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে সঠিক সময়ে মাঠ বরাদ্দ পায় না। যে কারণে অধিকাংশ জেলায় লিগ আয়োজন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে, জটিলতা এখনো বিদ্যমান।

তৃণমূল ফুটবলকে বাঁচিয়ে রাখতে ভূমিকা আছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা হাজারো একাডেমির; কিন্তু সেখানে সঠিক ফুটবলজ্ঞান সম্পন্ন কোচ, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নেই। যে কারণে তরুণরা বেড়ে ওঠার পথে আধুনিক ফুটবলের ধ্যান-ধারণা পাচ্ছে না। এভাবে যারা বেড়ে উঠছেন, তারা নিশ্চয়ই আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেড়ে ওঠা ফুটবলারদের সঙ্গে পেরে উঠবে না!

তৃনমূল, সাংগঠনিক ব্যর্থতা থেকে শুরু করে ফুটবল সংশ্লিষ্ট সবার মাঝেই নানা সমস্যা বিদ্যমান; কিন্তু এ দেশের ফুটবলের প্রকৃত সমস্যা হচ্ছে অর্থায়নে। পৃষ্ঠপোষকতা খাত থেকে যে অর্থ আসছে, তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। উল্টো ধারাবাহিকভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে আর্থিক স্বচ্ছতার বিষয়। ফুটবলে সরকারি-বেসরকারি বড় বিনিয়োগ না আসার অন্যতম কারণ এটি।

প্রতিবেশী দেশ ভারতের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ফুটবল বাজেট ছিল ১৩৪ কোটি রুপি। ভারতের বাজেটের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা টানতে গেলে মুখ লুকানোর জায়গা খুঁজতে হতে পারে! ফুটবলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারলে বাফুফে মসনদে কাজী মো. সালাহউদ্দিনের পরিবর্তে যেই আসুক, ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙা কঠিন নয়- অসম্ভব!

১৯৮২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ফুটবলীয় এক ঘটনায় জেলে যেতে হয়েছিল কাজী সালাউদ্দিন, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু, কাজী আনোয়ার হোসেন এবং গোলাম রাব্বানী হেলালকে। সে ক্ষোভে নিজের কাছে থাকা জাতীয় দলের জার্সি এবং অন্যান্য স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংস করে ফেলেছিলেন কাজী মো. সালাহউদ্দিন! এ প্রসঙ্গে সাবেক এ তারকা বলছিলেন, ‘শুধু একটাই প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরছিল- কেন আমি কারাগারে ছিলাম? আমি তো ডাকাতি করিনি বা চুরি করিনি।’ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে ব্যর্থতার একমাত্র কারণ কাজী মো. সালাহউদ্দিন নন, তারপরও নানামুখী চাপের মুখে তাকে নতি স্বীকার করতে হলো। এ জেদের বহিঃপ্রকাশ কোন প্রক্রিয়ায় ঘটে- হয়তো ভবিষ্যতে জানা যাবে!

মাহবুব সরকার: ক্রীড়া সাংবাদিক ও বিশ্লেষক

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ