ঈগলের ব্যথা
সব প্রাণের প্রতি দরদ থাকুক মানুষের
আদিকাল থেকে প্রাণ-প্রকৃতির সঙ্গে সহ-অবস্থান করেই মানুষ টিকে থেকেছে। অন্য সব প্রাণের প্রতি দরদ না থাকলে মানুষও এ পৃথিবীতে টিকবে না। পুঁজিবাদের প্রবল দাপটে মানুষ সব প্রাণ-প্রকৃতিকেই ধ্বংস করে দিচ্ছে। আসলে সে নিজেরই ধ্বংসের আয়োজন করছে। অস্ট্রেলিয়ান নৈতিক দার্শনিক পিটার সিঙ্গার বলেছেন, মানুষ সত্যিই নীতিবান কি না, তার সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটে অন্যান্য প্রাণের প্রতি সে যত্নশীল কি না, তা দেখে। যদি আমরা অন্যান্য প্রাণের প্রতি দরদ দেখাতে পারতাম, তাহলে নিজেদের প্রতিও আরও যত্নশীল হতে পারতাম। মায়া-মমতা-ভালোবাসা কেবল নিজের পরিবার-গোষ্ঠী-দেশে-জাতির প্রতিই সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, বরং সব জগতের দিকেই বিকশিত হতে হবে- তাহলেই মানুষ মনুষ্যত্ব অর্জন করতে পারবে।
সম্প্রতি এমনই এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন জয়পুরহাটের বদলগাছি উপজেলার দুই কিশোর। সাব্বির হোসেন ও গোলাম রব্বানী নামে দুই কিশোর পড়ন্ত বিকেলে মাঠে গিয়েছিল নিজেদের ধানক্ষেত দেখতে। ক্ষেতের মধ্যে বড় একটি ঈগল পাখিকে পড়ে থাকতে দেখে তারা। মানুষ দেখে আতঙ্কিত হয়ে চোখ রাঙাতে থাকে পাখিটি। প্রথমে ভয় পেলেও সাহস করে কাছে যায় তারা। ব্যথা আর যন্ত্রণায় পাখিটি কাতরাচ্ছিল। ধানক্ষেত থেকে তুলে জমির আইলে আনলে দেখা যায় দুই ডানা রক্তাক্ত। গভীর ক্ষত দেখে দ্রুত চিকিৎসার জন্য ছোটে তারা। চার কিলোমিটার পথ দূরে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে নিয়ে যায় অসুস্থ ঈগলটিকে। সেখানে ঈগলটির চিকিৎসা দেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
আজ ১৩ এপ্রিল, সোমবার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ঈগলটির দুই ডানায় গুলি করা হয়েছিল বলে জানান উপজেলা উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হাসান। একটি পাখির প্রতি ওই দুই কিশোরের এমন ভালোবাসা দেখে স্থানীয় লোকজন তাদের প্রশংসায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যার পর ওই দুই কিশোর গুলিবিদ্ধ অসুস্থ ঈগল পাখিটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য প্রাণিসম্পদ দপ্তরে নিয়ে যায়। পাখিটিকে দেখতে উৎসুক লোকজন ভিড় করছিলেন। চিকিৎসার পর অসুস্থ ঈগলের দায়িত্ব নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন পৌর শহরের পুরোনো বাজার এলাকার মোশারফ হোসেন। এরপর ঈগল পাখিটিকে তার জিম্মায় দেয়া হয়।
দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, অনেক চেষ্টার পরও পাখিটিকে বাঁচানো যায়নি। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়ার পরও গত শনিবার পাখিটি মারা যায়। গুলির ক্ষত অনেক গভীর ছিল বলে জানান উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। পাখিটি মারা যাওয়ায় সাব্বির হোসেন ও গোলাম রব্বানী খুব কষ্ট পান। তারা দাবি করেন, যারা গুলি করেছে, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।
আমাদের প্রত্যাশা অপরাধীদের দ্রুত খুঁজে বের করা হোক এবং তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। এ ধরনের অপরাধ যারা করে, তাদের যেন কোনোভাবেই ছাড় দেয়া না হয়। বাংলাদেশে বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় তা সঠিকভাবে বলবৎ হয় না- আইন যথাযথভাবে কার্যকর হওয়া জরুরি। ভিউজ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাব্বির হোসেন ও গোলাম রব্বানীকে অনেক ভালোবাসা। প্রাণের প্রতি তাদের এই দরদ আরও অনেককে অনুপ্রাণিত করবে। তাই সব প্রাণের প্রতিই মানুষের দরদ অব্যাহত থাকুক। সব প্রাণের প্রতি দরদী হলে মানুষ মানুষের প্রতিও দরদী হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে