অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বড় সংস্কার হোক অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রায় দুমাস ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। দুমাস মেয়াদকাল কোনো একটি সরকারের কার্যক্রম মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট সময়কাল নয়। তারপরও আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক মূল্যায়ন করা যেতে পারে। দায়িত্ব গ্রহণের পর যে দুমাস গত হতে চলছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমার প্রাথমিক মূল্যায়ন হচ্ছে এ সময়ে ভালো ভালো অনেক কথা বলা হয়েছে; কিন্তু কাজ তেমন কিছুই হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক লোক পরিবর্তন করেছে। বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য বেশ কিছু কমিশন গঠন করা হয়েছে। বিষধর সাপকে আঘাত করতে হলে শক্ত লাঠির প্রয়োজন; কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে সেই শক্ত লাঠিও তাদের নেই, শক্তিও নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তো নির্বাচিত সরকার নন। তাদের পেছনে রাজনৈতিক সমর্থনও তেমন একটা নেই। জনগণকে সংগঠিত করে তাদের সহায়তায় কার্যক্রম পরিচালনার মতো ক্ষমতা এবং সক্ষমতা এই সরকারের আছে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
সাম্প্রতি দেশের অর্থনীতিতে একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিরাজ করছে অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি। গত ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবার পর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়ার কারণে বিভিন্ন দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রবণতা দেখা দেয়। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো শীর্ষ অর্থনীতিতেও মূল্যস্ফীতি এক পর্যায়ে ৯ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। সে অবস্থা থেকে বিভিন্ন প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দেশটি তাদের মূল্যস্ফীতির হার সহনীয় পর্যায়ে (৩ দশমিক ৪ শতাংশ) নামিয়ে আনত সক্ষম হয়েছে; কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব ব্যবস্থা গহণ করেছে তার কোনোটিই (এখন পর্যন্ত) সঠিক ফল দিতে পারেনি। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কষাঘাতে সাধারণ মানুষ খুবই বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে রয়েছে। উৎপাদক ও ভোক্তা সমবায় গঠন এবং বাজারের তিন ভাগের এক ভাগ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতায় এনে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
আন্তর্জাতিক বাজারে গত সপ্তাহে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ৬৫ মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধির ওপর বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নির্ভর করে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ব্যাপকভাবে হ্রাস পেলেও অভ্যন্তরীণ বাজারে তার কোনো ইতিবাচক প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে না। আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য বাজারে তৎপর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অনেকটাই দায়ী। ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট সব সময়ই রাজনৈতিক সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। অথর্নীতিবিদরা আশা করেছিলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমলে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের তৎপরতা কমে যাবে। ফলে বাজারে বিভিন্ন জিনিসপত্রের মূল্য হ্রাস পাবে; কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। আগামীতে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়ে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক দিনের ব্যবধানে পলিসি রেট দুবার বৃদ্ধি করে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশে নির্ধারণ করা ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। এ মুহূর্তে যে কোনোভাবেই হোক মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে হবে।
গত কিছুদিনের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি কাজ করতে পেরেছে, তা হয়তো দেশের আর্থিক সেক্টরে নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এদের যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া যায় তাহলে আগামীতে আর্থিক খাতে নতুন নতুন অপরাধীর আবির্ভাব কিছুটা রোধ করা সম্ভব হতে পারে। তবে কাজটি খুবই কঠিন। আগামীতে এই সরকারকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। নির্বাচনি ব্যবস্থা সাম্প্রতিক সময়ে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। নির্বাচনের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ একেবারে কমে গেছে। গত তিনটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিতর্ক রয়েছে। এই তিনটি নির্বাচন কোনো মহলেই গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়নি।
আগামীতে নির্বাচন ব্যবস্থাকে এমনভাবে সংস্কার করতে হবে যাতে কোনো রাজনৈতিক দল তাতে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। নির্বাচেন সৎ এবং যোগ্য প্রার্থী জয়লাভ করতে পারে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এখন নির্বাচন মানেই টাকার প্রভাব। আগামীতে নির্বাচন যাতে টাকার প্রভাবমুক্ত হতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের দেশে স্বাধীনতা-পরবর্তী যতগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার মধ্যে একমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আয়োজিত নির্বাচনগুলোই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে; কিন্তু সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকেও নানাভাবে বিতর্কিত এবং কলুষিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই গ্রহণযোগ্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে। অতীতে কোনো রাজনৈতিক সরকারই গণপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না। তাই জনগণ বারবার পরিবর্তন কামনা করে। নির্বাচনের মাধ্যমে সেই গণ প্রত্যাশারই প্রতিফলন ঘটে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে কোনো রাজনৈতিক দলই পরপর দুবার সরকার গঠন করতে পারেনি। জনগণ রাষ্ট্রের মালিক। কাজেই সেই জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে এমন একটি স্থায়ী নির্বাচনি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ইচ্ছে হলো আর সরকার তার নিজের মতো করে নির্বাচনি ব্যবস্থাকে সাজিয়ে নিলেন এমন যেন না হয়। যে কোনো নির্বাচনকে পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। একই সঙ্গে পুলিশ এবং প্রশাসনের প্রভাবমুক্ত করতে হবে। বিগত জাতীয় নির্বাচনগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সরকারি দলের অনুকূলে ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে।
এমনকি প্রশাসনকে সরকারি দলের লেজুরবৃত্তি করতে দেখা গেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক উপায়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দিতে হবে। এবং যতটা সম্ভব স্বল্প সময়ের মধ্যে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে যদি কিংস পার্টি গঠনের চেষ্টা করা হয় তাহলে সেটা নিশ্চিতভাবেই একটি ভুল পদক্ষেপ হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছুসংখ্যক ব্যক্তিকে তাদের অপরাধের জন্য শাস্তিদান এবং বিভিন্ন স্থানে কিছু ভালো লোক বসিয়ে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণ মানুষ মনে করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি বিশেষ কাজ সম্পাদন করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাদের দৃশ্যত কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই; কিন্তু তারা যদি কিংস পার্টি গঠনের উদ্যোগ নেন তাহলে মানুষের ধারণা বদলে যেতে পারে।
গত সাড়ে ১৫ বছরে দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক দলীয়করণ করা হয়েছে। এটা চলতে পারে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বদলির সময় উপযুক্ততাকে বিবেচনায় নিতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানেই রাজনৈতিক বিবেচনায় কাউকে নিয়োগ দান বা বদলি করা যাবে না। নিয়োগ-বদলির ক্ষেত্রে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি অথবা হেফাজতে ইসলামের চাপের কাছে নতি স্বীকার করা যাবে না। অর্থাৎ যিনি যে পদের জন্য যোগ্য, তাকে সেই পদে নিয়োগ দিতে হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগদান করা হচ্ছে। এসব নিয়োগ নিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই বিতর্ক বা প্রশ্ন উত্থাপিত হতে শুরু করেছে। একাডেমিক ক্ষেত্রে যারা যোগ্য এবং যাদের বিরুদ্ধে কোনো বিতর্ক নেই এমন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি প্যানেল তৈরি করে সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে গণতান্ত্রিক আলোচনার মাধ্যমে ভিসি নিয়োগদান করা যেতে পারে।
রাজনৈতিক বিবেচনায় যদি ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগদান করা হয়, তাহলে তার পক্ষে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না; কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখছি সব স্থানে ভাগাভাগির একটি প্রবণতা শুরু হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠানে নীতিগতভাবে পদায়ন করা হচ্ছে না। এটা চলতে থাকলে তা কোনোভাবেই ভালো ফল দেবে না। প্রথমেই ত্রুটি হয়ে গেল। স্বৈরাচারকে হটিয়ে দিয়ে তদস্থলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একজন সঠিক লোককে বসানো সম্ভব হলো না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যেহেতু যোগ্য এবং বিতর্কহীন ব্যক্তিদের বসানো সম্ভব হচ্ছে না, তাই এসব প্রতিষ্ঠানে বিরাজমান বৈষম্য দূরকারী সংস্কার আর সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করে দেয়া যেত। সেই কমিটি উপযুক্ততার বিবেচনায় নিয়োগ-বদলি বা পদায়নের ব্যবস্থা করত।
আগের সরকার আমলে দায়িত্ব পেয়েছেন বলেই তাকে সরিয়ে দিতে হবে এটা নীতি হওয়া উচিত নয়। কারণ আগের সরকার আমলে যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যেও নিশ্চয়ই কিছু ভালো মানুষ আছেন। সেসব ভালো মানুষগুলোর সেবা গ্রহণের ব্যবস্থা করা যেত, যারা ব্যক্তি হিসেবে ভালো নন এবং নানা ধরনের দুর্নীতি-অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত তারা যে সরকার আমলেই নিয়োগপ্রাপ্ত হন না কেন, তাদের প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শন করা যাবে না। তাহলে বৈষম্য নিরসন করা তো সম্ভব হবেই না আরও বেড়ে যাবে। যিনি প্রতিষ্ঠানের কল্যাণ এবং স্বার্থ দেখবেন, যিনি ব্যক্তি হিসেবে সৎ এবং নিরপেক্ষ হবেন, তিনি যে সরকার আমলেই নিয়োগপ্রাপ্ত হন না কেন তাকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
আমাদের দেশে ভালো এবং দক্ষ অনেক কর্মকর্তা আছেন। অর্থাৎ দক্ষ কর্মকর্তার কোনো অভাব নেই; কিন্তু অভাব হচ্ছে সততা এবং নৈতিকতার। যারা নৈতিক বলে বলিয়ান নন, তারা কখনোই নির্মোহভাবে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সমুন্নত রেখে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত হন, তারা যদি সঠিকভাবে কাজ করতেন, তাহলে দেশের এই দুরবস্থার সৃষ্টি হতো না। প্রতিটি সেক্টরে নিয়োগের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকা তৈরি করে তার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানের সেবাগ্রহীতা ও উপদেষ্টা পরিষদ বসে যদি নিয়োগদানের জন্য প্রার্থী বাছাই করতেন, তাহলে ভালো, জনপ্রিয় এবং যোগ্য লোকদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগদান করা সম্ভব হতো।
আমাদের দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আবির্ভাব হয়েছিল যেহেতু দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হচ্ছিল না। তাই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাও বিতর্কিত হয়ে গেল বিএনপি সরকার আমলে মাগুরা উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে। তখন আমরা বিপদে পড়ে গেলাম। পরে আন্দোলনের মুখে বিএনপি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে; কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার দেখল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তারা হেরে যাবে তাই জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি কোনো গুরুত্ব না দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দেয়।
এরপর ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে যে তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা কোনো মহলের কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। নির্বাচন কোন পদ্ধতির আওতায় অনুষ্ঠিত হবে, সেটা যত না বিবেচ্য বিষয়, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এমন একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা, যারা সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের ওপর দায়িত্ব পালনে সক্ষম। নির্বাচন কমিশন যাতে কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে, এমন উপযুক্ত পরিবেশ তাদের দিতে হবে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, আমরা এমন পরিবেশ চাই কি না, যেখানে নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করুক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি ভাবে এক নির্যাতনকারীকে তাড়িয়ে দিয়েছি, এখন নির্বাচনে যে দলই ক্ষমতায় আসুক আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
অথবা তারা কি এটা চান যে, নতুন একটি রাজনৈতিক দল তৈরি করে নিজেরাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন থেকে যাবেন। অথবা যে রাজনৈতিক দল বিদায় নিয়েছে তাদের প্রতিপক্ষ কাউকে নির্বাচনে জয়লাভের সুযোগ করে দেবেন। এসব করলে কোনো সংস্কার হবে না। দেশের মানুষ চাইছে ব্যবস্থার পরিবর্তন। শুধু এক দলের পরিবর্তে আর এক দলকে ক্ষমতায় আনলে উদ্দেশ্য সাধিত হবে না। তেমন সংস্কার সাধনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাইছে কি না বা সক্ষম কি না, সেটাই দেখার জন্য দেশবাসী উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছে। এ লক্ষ্যে অনেক দেশে আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার মাধ্যমে অনেক বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র কায়েম সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে সে রকম চেষ্টাও করা যেতে পারে।
লেখক: অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
অনুলিখন: এম এ খালেক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে