নারীদের আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
এ জয় ‘উপভোগ’ করুক জ্যোতিরা
মারুফা আক্তারের করা ম্যাচের শেষ বলে ২ রান নিয়ে প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটলেন সারাহ ব্রায়েস। বাংলাদেশ শিবিরে তখন প্রবাহিত হচ্ছে স্বস্তির সুবাতাস! ১০ বছরের মধ্যে জিততে না পারার বোঝা কাঁধ থেকে নামানোর স্বস্তি, নারীদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিগত চার আসরে খেলা টানা ১৬ ম্যাচ হারের দুঃখ ঘোচানোর স্বস্তি!
নারীদের আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আর বাংলাদেশের হার এতদিন ছিল মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ২০১৪ সালের আসরে প্রথমবারের অংশগ্রহণ করেছিল লাল-সবুজরা। সে আসরের গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে ১১৫ রান করা বাংলাদেশ জিতেছিল ৩ রানে। এতদিন বিশ্বকাপে ওটাই ছিল পুঁজি। তারপর থেকে জয়ের পথটা হারিয়ে বসেছিল টাইগ্রেসরা। ২০১৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত আসরে ‘বি’ গ্রুপে চার ম্যাচের সব হারতে হয়েছে। ২০১৮ সালে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে আয়োজিত আসরেও দৃশ্যটা বদলায়নি- ‘এ’ গ্রুপে থাকা বাংলাদেশ ৪ ম্যাচে শতভাগ হার নিয়ে মাথা নিচু করে দেশে ফিরেছে। ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়া আসরেও ভরাডুবি এড়ানো যায়নি-‘এ’ গ্রুপে চার ম্যাচের সব হারতে হয়েছে। ২০২৩ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা আসরের এক নম্বর গ্রুপ থেকে ৪ ম্যাচে শতভাগ হার নিয়ে ফিরতে হয়েছে।
স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল বাংলাদেশ । ছবি: আইসিসি
টানা ১৬ হারের দুঃখ ঘোচানোর ম্যাচটা আবার নিগার সুলতানা জ্যোতি এবং নাহিদা আক্তারের জন্য বিশেষ উপলক্ষ নিয়ে এসেছিল। দুজনেই ‘সেঞ্চুরি’ মাইলফলক ছুঁয়েছেন এ ম্যাচে- বাংলাদেশ ক্যাপ্টেন জ্যোতির টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শততম ম্যাচ ছিল এটা; এ ম্যাচ দিয়েই শততম উইকেট পূর্ণ করলেন নাহিদা আক্তার। ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে ক্যাথরিন ফ্রেজারকে রাবেয়া আক্তারের ক্যাচে পরিণত করে নাহিদা আক্তার যখন শততম উইকেটের আনন্দে মাতেন, বাংলাদেশ তখন জয়ের সুবাস পাচ্ছে। শেষপর্যন্ত ১৬ রানের জয়ে মাইলফলকের ম্যাচ রাঙিয়ে নেন জ্যোতি-নাহিদারা।
জয় যে গোটা বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তির উপলক্ষ নিয়ে এসেছে, সেটা পোস্ট-ম্যাচ কনফারেন্সে পরিষ্কার করলেন জ্যোতি, ‘আমরা দীর্ঘ সময় ধরে এমন এক জয়ের প্রতীক্ষায় ছিলাম। ভাবছিলাম এটিই আমাদের বন্ধ্যত্ব ঘোচানোর মুহূর্ত। এ জয় অবশ্যই অর্থবহ।’ রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ আয়োজক স্বত্ব হারিয়েছে, আসরের খেলা হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। আসরের বাকি অংশ থেকে বাংলাদেশ আদৌ জয়ের উপলক্ষ আর খুঁজে পাবে কি না- সময়ই বলতে পারে। আপাতত কিন্তু আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না।
কারণ ‘বি’ গ্রুপে থাকা বাকি দলগুলো টাইগ্রেসদের চেয়ে শক্তিশালী, সব মানদণ্ডে এগিয়ে। ‘ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা’- এ কথাতেই কেবল আশাবাদী হতে পারেন বাংলাদেশি সমর্থকরা। কারণ প্রতিপক্ষ দলগুলোর নাম যে ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ইংল্যান্ড ২০০৯ সালে শুরু হওয়া নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অভিষেক আসরের চ্যাম্পিয়ন। ২০১৬ সালে শিরোপা জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ছেলেদের মেগা আসরে ‘চোকার্স’ তকমা পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বশেষ আসরের ফাইনালিস্ট। বাকি তিন ম্যাচে বাংলাদেশকে কিছু করতে হলে অঘটনের জন্ম দিতে হবে।
ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। ছবি: রয়টার্স
নিগার সুলতানা জ্যোতি হয়তো অঘটনের হিসাব মেলাচ্ছেন, ‘ঘুরে দাঁড়ানোর একটা উপলক্ষ প্রয়োজন ছিল। আমরা সেটা পেয়েছি। ঘুরে দাঁড়াতে পারায় আমরা খুশি। মেয়েদের মুখেও হাসি ফুটেছে, যা আমাদের অনুপ্রাণিত করছে, এগিয়ে যাওয়ার শক্তি জোগাচ্ছে।’ বাংলাদেশ যে অঘটনের অঙ্ক কষছে, তার যোগফল আদৌ মিলবে কি না- বলা কঠিন! কে জানে হয়তো এ জয়টাই টাইগ্রেসদের চলার গতিপথ বদলে দেবে।
শারজাহ ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ খেলবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। আরব আমিরাতের রাজধানীতেই ১০ অক্টোবর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলবে লাল-সবুজরা। ১২ অক্টোবর দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিগার সুলতানা জ্যোতির দলের প্রতিপক্ষ গত আসরের ফাইনালিস্ট দক্ষিণ আফ্রিকা। সব মানদণ্ডে পিছিয়ে থাকা স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে ‘মোমেন্টাম’ পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি তিন ম্যাচে দলটির কিন্তু হারানোর কিছু নেই। উপভোগের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ম্যাচগুলো থেকে কিছু পেলে সেটা হবে বোনাস। জ্যোতি, নাহিদা, মারুফাদের উচিত ম্যাচগুলো উপভোগ করা। সুযোগ থাকলে কিছু অর্জন করা, ভবিষ্যৎ পথচলার রসদ সংগ্রহ করা।
মাহবুব সরকার: ক্রীড়া সাংবাদিক ও বিশ্লেষক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে