পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি বন্ধ হোক
মাছ, মাংস, সবজি- যা-ই রান্না করা হোক না কেন, পেঁয়াজ তাতে অপরিহার্য। সেই পেঁয়াজেরই পাইকারি ও খুচরা বাজারে হঠাৎ করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। পারদে তাপ দিলে যেমন তার উত্তাপ বাড়ে, সে রকমভাবে দিন দিন একটু একটু করে কেজিপ্রতি ২৮ টাকা উৎপাদন খরচের পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৬০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। পুরাটাই একটি বিশেষ মহলের করসাজি। আর যদি সেই কারসাজিরা পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ভারতের নিষেধাজ্ঞার খবর পায় তাহলে তাদের পায় কে!
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ভারত যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, তা অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়ানো হয়েছে। গত ডিসেম্বরে দেয়া এ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ৩১ মার্চ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে গত শুক্রবার দেশটির ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) এক আদেশ জারির মাধ্যমে জানায়, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকবে।
ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশ। বাংলাদেশকে প্রতি বছরই পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়, যার সিংহভাগই আসে ভারত থেকে। তাই পণ্যটির রপ্তানি নিষেধাজ্ঞায় দেশটির এমন সিদ্ধান্তে আমদানিকারক অনেক দেশেই এর দাম বাড়তে পারে। অন্যদিকে ভারতের স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও পড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় বাংলাদেশে কোনো প্রভাব পড়বে কি না? উত্তর হচ্ছে, পড়বে। কারণ আমাদের অতীতের বাজার পরিস্থিতি সেই সাক্ষ্য দেয়।
মূলত পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে ধরনের সরকারি উদ্যোগ থাকা দরকার, সেগুলো দেখা যায়নি। যেমন কৃষক যেন দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে অগ্রিম পেঁয়াজ বিক্রি না করেন, সে জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সুবিধা দরকার ছিল। এখন মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে স্টক থাকার কারণে তারাই কারসাজি করছে। তাই বাজারে গিয়ে ক্রেতাদের হিমশিম অবস্থা। এটা যেন দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতার সামাজিক সংক্রমণ।
আমাদের দেশের অধিকাংশ ব্যবসায়ীর মধ্যে অতি মুনাফার প্রবৃত্তি ও জনগণের পকেট কাটার প্রবণতা আছে। এ কারণে সমস্যাগুলো ঘুরেফিরে আসে। কখনো আমদানি জটিলতা, কখনো ফলন কম, কখনো রপ্তানিকারক দেশে দাম বৃদ্ধি ইত্যাদি অজুহাত দাঁড় করিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ নিয়ে প্রতি বছর তুঘলকি কাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা জানি, গত কয়েক বছর দেশে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা নিরসনে স্থল-নৌ, এমনকি আকাশপথেও এই নিত্যপণ্যটি আনতে হয়েছে।
আবার নতুন করে নানা অজুহাতে পেঁয়াজের বাজার যেভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, তাতে ভোক্তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। অতীতে বহুবার দেখা গেছে, সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বাজারে যখন অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, ঠিক তখনই এর প্রতিকারে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সব মহলের তরফ থেকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে থাকেন; কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীদের দৃষ্টান্তযোগ্য কোনো শাস্তি নিশ্চিত করা হয় না। তাই এই ব্যর্থতার মাশুল গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
এমন পরিস্থিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কী পদক্ষেপ নেয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়। যেসব অসাধু ব্যবসায়ীর স্বেচ্ছাচারিতায় ফিরে ফিরে ভোক্তাদের এমন নাভিশ্বাস ওঠে, তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তাই ঈদ আসার আগে পরিস্থিতি সহনীয় রাখতে ব্যবসার নামে নৈরাজ্য ঠেকাতে সরকারকে নির্মোহ ও কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি আগেভাগে ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে