শান্তির বার্তায় দূর হোক পারমাণবিক যুদ্ধের শঙ্কা
বর্তমান বিশ্বের মানুষ সবচেয়ে ভয়াবহ যে আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটায়, তা হলো পারমাণবিক যুদ্ধের শঙ্কা। বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর মধ্যে যখন ঝগড়া লেগে যায়, তখনই বিশ্বের মানুষ আতঙ্কে অস্থির হয়ে ওঠে- এই বুঝি পারমাণবিক যুদ্ধ লেগে গেল! পারমাণবিক যুদ্ধ মানেই যে মানবসভ্যতার বিলুপ্তি, সেটি অনেকেই জানেন। পৃথিবীর বড় দেশগুলোর হাতে এত পরিমাণ পারমাণবিক বোমা সংরক্ষিত আছে, যে তা দিয়ে এই পৃথিবীকে চোখের নিমিষেই ধ্বংস করে দেয়া সম্ভব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে মানুষ পারমাণবিক বোমা হামলার ভয়াবহতা দেখেছে।
আশা জাগানিয়া সংবাদ, পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে জনমত গড়ে তোলার স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর শান্তিতে নোবেল পেয়েছে জাপানে পারমাণবিক বোমা হামলার ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সংগঠন নিহন হিদানকায়ো। সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যমতে, শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টায় এবারের শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে নরওয়ের রাজধানী অসলোর নোবেল ইনস্টিটিউট।
১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। নোবেল কমিটি বলেছে, সেই হামলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সংগঠন নিহন হিদানকায়ো বিশ্বকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার যে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, এবারের শান্তির নোবেল তারই স্বীকৃতি।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ইয়েরগেন ওয়াটনে ফ্রিডনেস বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার চিরতরে বন্ধে জনমত গড়ে তুলতে বহু বছর ধরে কাজ করছে নিহন হিদানকায়ো। এ লক্ষ্যে হামলার শিকার ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা দুঃসহ সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে এর ভয়াবহতা তুলে ধরার কাজটি করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র যে একটি নিষিদ্ধ বিষয়, তা প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে সংগঠনটি।
নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে প্রায় বছরই সমালোচনা হয়। কারণ, পুরস্কারটি অনেক সময় ব্যবহৃত হয় রাজনৈতিক স্বার্থে। হেনরি কিসিঞ্জারের মতো অনেককেই নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিল নোবেল কমিটি। এবারো নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া কঠিন ছিল। কারণ, বর্তমান বিশ্বে কয়েকটি স্পষ্ট মেরুকরণ চোখে পড়ছে। তার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে রাশিয়া-চীনের সঙ্গে পশ্চিমের শক্তিগুলোর টানাপড়েন চলছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের আশঙ্কায়ও অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে মধ্যপ্রাচ্য। এই সময় কোন প্রান্তের কাকে শান্তিতে নোবেল দিয়ে কোন সমালোচনায় তারা পড়েন, তা নিয়ে ভয় ছিল।
শেষ পর্যন্ত পুরস্কার ঘোষণা ভালোই হলো বলা যায়। বিশ্বজুড়ে যখন নতুন যুদ্ধের ডামাডোল, তখন এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে এই পুরস্কার দেওয়া হলো, যারা পারমাণবিক অস্ত্রের ভয়াবহতার শিকার এবং এর বিরুদ্ধে কাজ করছে দীর্ঘদিন।
আমরাও চাই, শান্তির এই বার্তা ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বজুড়ে। বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর বোধোদয় হোক, পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্কে রেখে তারা যেন বিশ্ববাসীকে পাগল না বানিয়ে ফেলে। আমরা চাই, পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে