প্লাস্টিক বর্জ্যে সড়ক নির্মাণ
আশার প্রদীপ জ্বলতে থাকুক
অনেক দিন ধরেই পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বর্জ্যে সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা চলছিল। এবার সেই পরিকল্পনা সফল হলো। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গাবতলী-সদরঘাট সড়কটি বেড়িবাঁধ নামে পরিচিত। এ সড়কের সম্প্রসারিত ২২৫ মিটার অংশ নির্মাণ করা হয়েছে ফেলে দেয়া প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে। দেখতে আর দশটি পিচ ঢালাই সড়কের মতো। এটি যে প্লাস্টিক মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছে, তা অনেকেই বুঝবে না।
উন্নত দেশে বিটুমিনে (পিচে) প্লাস্টিক মিশিয়ে সড়ক নির্মাণ পুরোনো হলেও দেশে এটিই প্রথম। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) সড়ক গবেষণা পরীক্ষামূলকভাবে এটি নির্মাণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্য, অন্য দেশে সড়কের শুধু উপরিভাগে (সারফেস কোর্সে) পিচের সঙ্গে প্লাস্টিক মেশানো হয়। সড়ক নির্মাণে যত উপাদান ব্যবহৃত হয়, এর মাত্র ৫ শতাংশ বিটুমিন। তাতে ৮ শতাংশ প্লাস্টিক মেশানো হয়, যা পরিবেশ রক্ষায় যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশে শুধু পিচ ঢালাইয়ের নয়, নিচের স্তরে (বেইজ কোর্স-১) পাথরের সঙ্গে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করা হয়েছে। তাই অন্য দেশের তুলনায় বেশি প্লাস্টিক ব্যবহৃত হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে সড়কটি নির্মাণ করা হয়। পরীক্ষামূলক হওয়ায় সওজ খবরটি প্রকাশ করেনি। গতকাল সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, সাত মাস পরও রাস্তাটি অটুট রয়েছে। কোথাও ভাঙাচোরা, খানাখন্দ নেই। পিচের মতোই মসৃণ।
সওজ কর্মকর্তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের কঠিন বর্জ্যের টেকসই ব্যবস্থাপনাবিষয়ক ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক শাহাদাত হোসেনের গবেষণা অনুযায়ী সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ল্যাবে প্লাস্টিক সড়কের স্পেসিফিকেশন তৈরি করা হয়। সড়ক গবেষণাগারের পরিচালক আহসান হাবীব সমকালকে বলেছেন, প্লাস্টিক মিশ্রিত সড়কটিও ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিনে নির্মিত। এর সঙ্গে ৮ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য মেশানো হয়েছে। আগে এ প্রচেষ্টা সফল হয়নি। কারণ, তখন পাথর প্লাস্টিক ও বিটুমিন একসঙ্গে গরম করে মেশানোর (ওয়েট মিক্সিং) চেষ্টা হয়েছিল। প্লাস্টিক ও বিটুমিনের গলনাঙ্ক ভিন্ন হওয়ায় সঠিক মিশ্রণ তৈরি হয়নি। এ সমস্যা সমাধানে ১৬০ থেকে ১৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপে পাথর গরম করা হয়। তারপর সাধারণ পলিথিন মেশানো হয়, যা গলে (ড্রাই মিক্সিং) পাথরের ওপর আবরণ তৈরি করে। তারপর বিটুমিন গলিয়ে মেশানো হয়। ১৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উত্তপ্ত থাকাবস্থায় সড়কে ঢালাই করা হয়। এ পদ্ধতি এখন পর্যন্ত সফল। শতভাগ সফল কি না, তা বুঝতে সময় লাগবে।
সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. আবদুল্লাহ আল মামুন সড়কটি নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, শুধু বিটুমিন মিশিয়ে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্যের সমাধান অসম্ভব। তাই পিচ ঢালাইয়ের নিচে বেইজ কোর্সেও উচ্চ ঘনত্বের পলিইথিলিন (এইচডিপিই) প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করা হচ্ছে, যা বেইজ কোর্সের মোট পাথরের ৫ শতাংশ। এর মাধ্যমে বৃহৎ পরিমাণে প্লাস্টিক ব্যবহার হচ্ছে।
নানা দিক থেকেই এটা আশার আলো জ্বালিয়েছে। প্লাস্টিকের বর্জ্য পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। প্লাস্টিকের বর্জ্য যদি এখন সড়ক নির্মাণে কাজে লাগে, তাহলে একদিক দিয়ে যেমন খরচও কমবে অন্য দিকে পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা পাবে। এখন দেখার বিষয় এটা কতদিন টিকে থাকে এবং এই পরিকল্পনা কতদিন বাস্তবায়ন হয়। আমাদের প্রত্যাশা একটাই, এই আশার প্রদীপ যেন জ্বলতে থাকে। যদি তা সত্যিই কার্যকরী হয়, তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়নে এটা হবে বিরাট এক মাইলফলক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে