নারীর অভিভাবকত্বের অধিকার নিশ্চিত হোক
আমাদের সংবিধানের ২৮(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করবে।’ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের প্রচলিত আইন, প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ড এবং সামাজিক আচরণে নারীর এই অধিকারের বিষয়টি এখনো সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যদিও অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, সন্তান জন্মদান থেকে লালন-পালনে নারীর গুরুত্ব সীমাহীন। তবু নারী বা একজন মায়ের এসব গুরুত্বকে ছাপিয়ে সমাজে পুরুষ বা একজন পিতার অধিকারবোধ অনেক বেশি প্রতিষ্ঠিত।
কিন্তু আশার কথা হচ্ছে, গতকাল মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সাংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, ১৯৯০ সালের অভিভাবকত্ব আইনে সন্তানের অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে মাকে কেন স্বীকৃতি দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রুলে ১৯৯০ সালের অভিভাবকত্ব আইনে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মাকে স্বীকৃতি দিয়ে কেন নীতিমালা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত সোমবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
আমরা হাইকোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানাতে চাই। কারণ এই রায়ের মাধ্যমে সমাজে নারীর অধিকার আরও প্রতিষ্ঠিত হলো। আর পিতৃপরিচয়হীন, যৌনকর্মীদের সন্তানসহ পরিচয়হীন যে কোনো শিশুর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত হলো।
একসময় শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসেবে শুধু বাবার নাম লেখা বাধ্যতামূলক ছিল; কিন্তু ২০০০ সালে নিয়ম পরিবর্তন করে শিক্ষা ফরমে পিতার নামের পাশাপাশি মায়ের নাম লেখাও বাধ্যতামূলক করা হয়। তা ছাড়া সন্তানের অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে সমাজে চলছে নানাবিধ বৈষম্য। বৈষম্যমূলক এই বিধান চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে উচ্চ আদালতে একটি রিট করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে সেই রিটের চূড়ান্ত শুনানিতে শিক্ষা, পাসপোর্টসহ সরকারি যে কোনো ফরম পূরণের ক্ষেত্রে বাবার নামের পাশাপাশি মায়ের নাম ও আইনগত অভিভাবকের নাম যুক্ত করার নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সরকারও এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেছে। তবুও সমাজে নারীর অভিভাবকত্বে রয়ে গেছে নানাবিধ জটিলতা।
তাই আমরা বলতে চাই, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরও সমাজের সব ক্ষেত্রে দেশের নারীর অংশগ্রহণ এখনো কেন নিশ্চিত নিশ্চিত করা হয়নি, এটা দেশের জন্য অপ্রত্যাশিত। কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলেও তা খুব উল্লেখযোগ্য নয়। অথচ এ দেশের অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠী নারী। তাই হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে নারীর অধিকার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আরও শক্তিশালী হলো। সমাজের নারীর অধিকার ফিরিয়ে দিতে এমন ধারা অব্যাহত থাকুক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে