Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

আসুন মানবিক মূলবোধে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াই

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

রবিবার, ২৫ আগস্ট ২০২৪

সাম্প্রতিক বন্যায় ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ ১১টি জেলা প্লাবিত হয়ে গেছে। ৫০ লাখ মানুষ পানিবন্দি। বন্যার্তদের সহায়তায় বিভিন্ন ধরনের সংগঠন, সমিতি, শিক্ষার্থী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সাধারণ মানুষ হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ত্রাণ সংগ্রহে এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সর্বমহলে তা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে; কিন্তু এই দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ নিচ্ছেন।

গতকাল শনিবার (২৪ আগস্ট) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, চাহিদা বেড়েছে দেখে শুকনা খাবারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রাপ্ত তথ্যমতে, বন্যার্তদের সহায়তার জন্য তিন দিন ধরে চিড়া, মুড়ি, গুড়, বিস্কুট, মোমবাতি, ম্যাচ, ওরস্যালাইন, বোতলজাত পানি, লাইফ জ্যাকেট ইত্যাদি পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি বন্যার্তদের উদ্ধারের জন্য অনেকে নৌকা, ইঞ্জিনচালিত নৌকা, ট্রলার, স্পিডবোট নিয়ে গেছেন, সেসবের ভাড়াও অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দিয়েছেন মালিকপক্ষ। প্রশ্ন হচ্ছে, এমন দুর্যোগের সময় চাহিদার সুযোগ নিয়ে কেন ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াবেন? তাদের কি মানবিক বোধ নেই? প্রশাসন থেকেও কেন এসব নিয়ন্ত্রণ করা হলো না?

বাংলাদেশে একটা প্রবাদবাক্য আছে, কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ। যে কোনো দুর্যোগের সময়ই আমরা এটা দেখে থাকি। মানবিক বিপর্যয়ের সুযোগ নিয়ে একদল ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা হাতিয়ে নেন। দেশের এমন দুর্যোগে এ ধরনের কর্মকাণ্ড একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার মানে তো এই নয় যে, ওই সব পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। আগে থেকেই তৈরিকৃত পণ্য ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেছেন। সেখানে এক ডজন মোমবাতির দাম কীভাবে ২০ টাকা বেড়ে যায়? চিড়া-মুড়ির দাম কেজিতে ৫-৬টাকা বেড়ে যায়? এটা অতিরিক্ত লাভ করার পাঁয়তারা ছাড়া আর কিছুই না।

আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে, ত্রাণ দিতে গিয়ে অনেকে অসহায় মানুষের ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। ত্রাণ সহায়তা একটি মানবিক কাজ। এখানে কেন নিজেকে শো-অফ করতে হবে? বিপদে পড়ে অনেক মর্যাদাবান ব্যক্তি ত্রাণ নিতে আসতে পারেন, তিনি হয়তো নিজেকে এভাবে উপস্থাপন করতে চান না, তাকে কেন এভাবে উপস্থাপন করা হবে?

এসব ছবি নিশ্চয়ই ভুক্তভোগীদের অনুমতি নিয়ে প্রকাশ করা হয় না। অনেক নারী-শিশুর অপ্রীতিকর অবস্থার ছবিও আমরা এভাবে দেখতে পাচ্ছি। ত্রাণকর্তাদের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে, বিনা অনুমতিতে কারও ছবি এভাবে প্রকাশ না করার। ত্রাণ সহায়তা যদি প্রদর্শনযোগ্য হয়ে উঠে, তাহলে তা মানবিক না হয়ে অমানবিক হবে। এক দিকে তা স্পষ্টতই মানবাধিকার লঙ্ঘন। আমাদের মনে রাখতে হবে প্রত্যেক মানুষেরই সম্মান আছে। তাকে সাহায্য করার বিনিময়ে সেই সম্মান আমরা ক্ষুণ্ণ করতে পারি না।

একটা কথা আছে, কাউকে সাহায্য করার সময় এক হাতের কথা যেন অন্য হাত জানতে না পারে। এখন দেখা যাচ্ছে ত্রাণকার্য অনেকের লোক দেখানো কাজ হয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করব, তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। বর্তমান দুর্যোগে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীও ভীষণ তৎপরতার সঙ্গে উদ্ধার কাজ কাজ চালিয়েছে, যা সবার কাছে প্রশংসিত হয়েছে।

আমরা আশা করব, বাংলাদেশের যে কোনো দুর্যোগে তাদের এই কর্মতৎপরতা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ দুর্যোগ প্রবণ দেশ, যে কোনো মুহূর্তেই এখানে যে কোনো দুর্যোগ এসে হানা দিতে পারে। বর্তমান সরকারকেও সে ব্যাপারে আরও সচেতন থাকতে হবে। এরকম অপ্রত্যাশিত দুর্যোগ যেন বাংলাদেশে আর না নেমে আসে- সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ