বই উৎসব ২০২৪
সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে হবে
বিনামূল্যে বই পাওয়ার উৎসব ছোট শিক্ষার্থীদের জন্য খ্রিষ্টীয় নববর্ষের শ্রেষ্ঠ উপহার। নতুন শ্রেণিতে নতুন বই পাওয়ার আনন্দই অন্যরকম। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ ফুলের ঘ্রাণের মতো শিক্ষার্থীদের মনে দোলা দেয়। তা ছাড়া এ উৎসবের মধ্যে সর্বজনীনতাও রয়েছে। কেননা খ্রিষ্টীয় নতুন বছরের শুরুতে এই বই ধনী-দরিদ্র সবাই পেয়ে থাকে। নিঃসন্দেহে এটি সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ; কিন্তু এ বছর অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সব বই দেশের অনেক উপজেলায় এখনো পৌঁছায়নি, যা এমন মহতী উৎসবের পক্ষে অনভিপ্রেত।
অতীতে বই বিপণন করা নিয়ে নানা ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। সে ক্ষেত্রে প্রকাশকরা নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছাতে ব্যর্থ হতেন। পাঠ্যপুস্তকে নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার করা হতো এবং ছাপা ছিল অস্পষ্ট। আবার দেখা যেত বিনামূল্যে বিতরণের বই কালোবাজারে বিক্রি হতে। ২০০১ সালে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান ও বই ছাপার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের অসততার কারণে যথাসময়ে বই ছাপা সম্ভব হয়নি। যে কারণে ওই বছর শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে বই পায়নি। এসব সমস্যার সমাধানে সরকার ২০০৯ সালে বিনামূল্যে বই বিতরণের উৎসব করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমবারের মতো এই উৎসব হয় ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি। সেই থেকে সরকার সাফল্যের সঙ্গে বই বিতরণের উৎসব পালন করে আসছে। বিগত ১৩ বছরে সোয়া ৪ কোটি শিক্ষার্থীর মাঝে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ৪৫০ কোটি বই, যা সারা বিশ্বের মধ্যে বিরল দৃষ্টান্ত।
রাজধানীসহ সারা দেশে গত সোমবার (১ জানুয়ারি) উদযাপিত হয়েছে বই উৎসব দিবস। শিক্ষাবছরের প্রথম দিন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৬ কোটি ছাত্রছাত্রীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে নতুন বই। ইতোমধ্যে নতুন বইয়ের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশের সব বিদ্যাপীঠে। শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন বিদ্যালয়ে এসে নতুন বই হাতে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা শিক্ষার্থীরা। তাদের উচ্ছ্বাস আর উল্লাসে মুখর হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
তবে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বলছে, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে এবার নতুন কারিকুলামের বই যাবে। এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরিতে দেরি হওয়ায় এই দুটি বইয়ের ছাপার কাজ মাত্র শুরু হয়েছে। তাই এই দুটি শ্রেণির বই পেতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এনসিটিবির দীর্ঘবছরের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও কেন সব বই দেশের সব উপজেলায় সময়মতো পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
এ ক্ষেত্রে কারও কোনো গাফিলতি থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া বাঞ্ছণীয়। এত বড় কর্মযজ্ঞে কিছু ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা থাকতেই পারে। কর্তৃপক্ষের উচিত এসব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা। তাই এসব সীমাবদ্ধতা ও ভুলত্রুটি শুধরে এ মহতী উদ্যোগকে কীভাবে পুরোপুরি সফল করা যায়, সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে