জনস্বার্থে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করতে হবে
রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে আমরা ওষুধ ব্যবহার করি। যথাসময়ে সঠিক ওষুধের অপূর্ব ক্ষমতায় আমরা সুস্থ হয়ে উঠি। পৃথিবীতে ক্রমবর্ধমান সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবের করণে জীবন বাঁচাতে সব ধরনের ওষুধের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়; কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধগুলোর দাম সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই এবং নেই কোনো হালনাগাদ তথ্য; যা দেশের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে সব অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম নির্ধারণ করার ক্ষমতা থাকার কথা বাংলাদেশের; কিন্তু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ওষুধ কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শর্তাবলির কিছু মানছে, কিছু মানছে না। আমরা বলব, এটা চলতে পারে না। হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সব শর্ত মানতে হবে, নয়তো কোনোটাই মানা যাবে না। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাক্ষরকারী হিসেবে তার শর্ত মানা বাধ্যতামূলক।
জাতীয় ওষুধনীতি ২০১৬ অনুযায়ী, দেশে নিয়মিতভাবে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করতে হবে; কিন্তু ওষুধনীতির সেই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। তাই সরকারকে জনস্বার্থে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের সময়োপযোগী তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। সেইসঙ্গে ওষুধ ক্রয়-বিক্রয়, মজুত, মূল্য নির্ধারণ, চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্রে বাস্তবায়নযোগ্য নীতিমালার ভেতরে আনতে হবে। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জাতীয় ওষুধনীতি অনুযায়ী সরকারকে আরও কঠোর নজরদারি করতে হবে। আমরা মনে করি, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের নীতি যথাযথ বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে শক্তিশালী স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা গড়ে উঠবে। সেইসঙ্গে দেশের সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের অভিযাত্রা সফল হবে।
অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় যে ১১৭টি ওষুধ আছে, সেগুলোর ব্যবহার তেমন নেই বললে চলে। অথচ কম ব্যবহারের এসব ওষুধের দাম বাড়াতে সরকারের অনুমোদন নিতে হয়।
১৯৮২ সালের ওষুধনীতিতে ১৫০টি ওষুধের তালিকা করা হয়েছিল অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ হিসেবে। সেখান থেকে পরবর্তী সময়ে ১১৭টিকে এই তালিকায় রাখা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অত্যাবশ্যকীয় তালিকার যে ১১৭টি ওষুধ রয়েছে, তার মধ্যে এখন রোগীদের ব্যবস্থাপনাপত্রে থাকা ওষুধ থাকে খুবই কম। বরং মানুষ এখন যেসব রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, সেই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা বা ক্যান্সারের মতো ক্রনিক অসুখগুলোতে যেসব ওষুধ ব্যবহার হয়, সেগুলো সরকারের অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় নেই। তাই সরকার এসব ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এসব ওষুধের বেশির ভাগ দামই কোম্পানি নির্ধারণ করে থাকে।
১৯৮২ সালে ওষুধনীতি হওয়ার পর ২০০৫ ও ২০১৬ সালে ওষুধনীতি হয়েছে; কিন্তু দেশ চলছে সেই ১৯৮২ সালের ওষুধনীতিতে। ১৯৮২ সালের অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের যে তালিকা করা হয়, সেই তালিকার অনেক ওষুধই এখন আর বাজারে পাওয়া যায় না। অনেক কোম্পানি তৈরিও করে না। তাই চিকিৎসকরা সেসব ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লেখেন না।
গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, দেশে স্বাস্থ্য খাতে মোট ব্যয়ের দুই-তৃতীয়াংশই ওষুধের পেছনে। আর বছরে ৩৫ হাজার কোটি টাকার ওষুধের বাজারে সরকারি ব্যয় মাত্র ৩ থেকে ৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৯৫ শতাংশই যায় মানুষের পকেট থেকে।
বস্তুত ক্রমাগত ওষুধের দাম বাড়ায় সাধারণ রোগীরা বিপাকে পড়েছেন, যা অনভিপ্রেত। একদিকে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, অন্যদিকে ওষুধের চড়া দাম সাধারণ মানুষের জীবনে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ১৯৮২ সালের পরিমার্জিত ২০০৫ ও ২০১৬ সালের ওষুধনীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হলে রোগী ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান উভয়ের স্বার্থ রক্ষা হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে