Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি

বগুড়ায় আগের তুলনায় বেশি ভিক্ষুক দেখা যাচ্ছে, বলছেন স্থানীয়রা

Masum   Hossain

মাসুম হোসেন

রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে বগুড়া এবং তার আশপাশের জেলাগুলোতে নিম্নআয়ের মানুষ এক চরম সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। এসব এলাকার শ্রমজীবী মানুষ এখন দিশেহারা, তাদের দৈনন্দিন জীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ ও অশান্তি। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না থাকায় এসব স্বল্প আয়ের মানুষ নিজ নিজ এলাকা ছেড়ে অপেক্ষাকৃত উন্নত শহর বগুড়ায় এসে ভিড় করছেন। তাদের অনেকেই বাধ্য হয়েই বেছে নিচ্ছেন ভিক্ষাবৃত্তি, ফলে শহরে আগের তুলনায় বেশি ভিক্ষুক দেখা যাচ্ছে বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।

শহরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষুকরা পালা করে ভিক্ষা করতে আসেন। এক এলাকায় নির্দিষ্ট একটা দিনেই ভিক্ষুকরা যান। নির্দিষ্ট দিনে আগে প্রতি বাড়িতে ৫-৬ জন ভিক্ষুক আসতেন। মাসখানেক হলো তাদের সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে ১০-১৫ জনের মতো ভিক্ষুক আসছেন। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া গ্রামের বাসিন্দা শামীম হোসেন জানান, প্রতি বুধবার তার এলাকায় ভিক্ষুকরা আসেন। আগের তুলনায় ভিক্ষুকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে।

বগুড়া পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফুলতলা এলাকার বাসিন্দা রিক্তা বেগম জানান, তার এলাকায় মঙ্গলবার ভিক্ষুকরা আসেন। মাসখানেক হলো আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে ভিক্ষুক। একসঙ্গে এতজনকে সাহায্য করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। শুধু তা-ই নয়, সড়কে বের হলেও আগের চেয়ে অনেক বেশি ভিক্ষুকের দেখা মিলছে। তারা পথচারীদের ধরে ধরে সাহায্য প্রার্থনা করছেন, ফলে অনেককেই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে বলে দাবি করছেন এলাকার লোকজন।

এদিকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিসের প্রবেশপথেও তাদের দেখা যাচ্ছে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে দেখা মেলে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভিক্ষুকের। তাদের মধ্যে আব্দুল লতিফ, তোফাজ্জল হোসেন ও হামিদা বিবিসহ অন্তত ১৫ জন ভিক্ষুকের সঙ্গে কথা হয়। তারা গাইবান্ধা ও রংপুরের বাসিন্দা হলে বগুড়ায় এসে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন বলে জানান। তারা জানান, আগের তুলনায় তাদের পেশায় আরও লোকজন বেড়েছে। বগুড়াসহ আশপাশের জেলার অনেকে ভিক্ষাকে নতুন করে পেশা হিসেবে নিয়েছেন।

বগুড়ার বনানী সোনার দেশ হোটেলের সামনে মর্জিনা বেগম ও আমুনি বিবি নামে দুজন ভিক্ষুককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ দুজনই বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাসিন্দা। তারা জানান, আগে তারা অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন; কিন্তু এই পেশায় যা আয় করছেন, তা দিয়ে বর্তমানে সংসার চলছে না। এ কারণে তারা ভিক্ষাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন।

শহরে এরকম তুলনামূলকভাবে বেশি ভিক্ষুকের উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোস্তফা কামাল ‘ভিউজ বাংলাদেশ’কে বলেন, হঠাৎ করে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভিক্ষুকের সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। উত্তরবঙ্গের বগুড়া, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম বন্যাকবলিত এলাকা। বন্যার কবলে পড়ে অনেক মানুষ কর্মসংস্থান বা আয়ের উৎস হারিয়েছেন। উত্তরবঙ্গের মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়লে সারা দেশ থেকে তেমন সহযোগিতা পান না।

এ বিষয়টি এবার পরিষ্কারভাবে লক্ষ্য করা গেছে। এ কারণেও অনেকে জীবন বাঁচানোর তাগিদে ভিক্ষাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, অনেকে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন বা দিনমজুর। তাদের আয়ের টাকা দিয়ে সংসার আগের মতো চলছে না। এ কারণেও সময় পেলে বা কাজ না থাকলে অনেকেই পাশের জেলায় গিয়ে ভিক্ষা করছেন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ