নিম্নমানের সেবা, মোবাইল অপারেটররা আর কতদিন দায় এড়িয়ে যাবে?
বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট সেবায় নিম্নমান নিয়ে অভিযোগ চলে আসছে বহুদিন ধরে। এ অভিযোগের যেন শেষ নেই। হাঁটি হাঁটি পা পা করে বাংলাদেশ ফোরজির যুগ পেরিয়ে ফাইভজি প্রযুক্তির দ্বারপ্রান্তে; কিন্তু মোবাইল টেলিযোগাযোগ সেবা, গ্রাহকের হাসিমুখ আজও নেই! ভয়েস কলে কল ড্রপ আর ইন্টারনেটে ধীরগতি কিংবা অতিমাত্রায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও যুক্ত হওয়ার খেলা (ফ্লাকচুয়েশন) যেন বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটরদের সেবার ক্ষেত্রে ধ্রুব সত্য!
মোবাইল অপারেটররা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। তারা অবশ্যই গ্রাহক সন্তুষ্টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেন। কারণ গ্রাহকের সন্তুষ্টিই ব্যবসায় লাভের মূলমন্ত্র; কিন্তু গ্রাহকের প্রতিকার পাওয়ার উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকে কিংবা যে কোনো কৌশলে ফাঁকি দিয়ে সন্তুষ্ট রাখা যায়, তাহলে সেই কৌশল অবলম্বন কোনো কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান করতেই পারে! মোবাইল অপারেটরদের সেবার ক্ষেত্রে সেই চিত্রটিই বছরের পর বছর ধরে দেখা যাচ্ছে।
মোবাইল অপারেটরদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশের ৯৯ শতাংশ এলাকায় তাদের নেটওয়ার্ক কাভারেজ আছে। বিটিআরসির সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী চারটি মোবাইল অপারেটরের বর্তমান গ্রাহকসংখ্যা ১৭ কোটি ৮৬ লাখ ১০ হাজার। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক ১২ কোটি ৬৯ লাখ ৭০ হাজার। এ ছাড়া আরআইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়া ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার গ্রাহকসংখ্যা ১ কোটি ৩৫ লাখ ৩০ হাজার। খোলা চোখে সংখ্যার দিকে তাকালে চারটি মোবাইল অপারেটরের গ্রাহকের বিচার আইএসপিদের গ্রাহকসংখ্যা নগণ্যই মনে হয়! বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন) গ্রাহকসংখ্যার তথ্য প্রকাশ করে; কিন্তু এই ১২ কোটি ইন্টারনেট গ্রাহক কি পরিমাণ ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করছেন, তার পরিসংখ্যান ওয়েবসাইটে দেয় না। ওই পরিসংখ্যান দিলে শুভংকরের ফাঁকির সমীকরণটা সহজে বোঝা যেত।
আসুন সমীকরণটা বোঝার চেষ্টা করি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার জিবিপিবিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে মোবাইল অপারেটরদের ১২ কোটি ৭০ লাখ গ্রাহক ব্যবহার করছেন ১ হাজার ৬৫০ জিবিপিএস। আরআইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়া ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার ১ কোটি ৩৫ লাখ গ্রাহক ব্যবহার করছেন ৪ হাজার ৩৫০ জিবিপিএস। অর্থাৎ ১২ কোটি গ্রাহক নিয়েও মোবাইল অপারেটরদের ইন্টারনেট সেবায় অংশীদারত্ব মাত্র ২৭ শতাংশ! আর ১ কোটি ৩৫ লাখ গ্রাহক সঙ্গে নিয়ে আইএসপিদের অংশীদারত্ব ৭২ দশমিক ৫ শতাংশ। অতএব, এটা একবারে স্পষ্ট, সম্পূর্ণ দেশি বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোই বাংলাদেশে ইন্টারনেট চার ভাগের মধ্যে তিন ভাগের অংশীদার। মজার ব্যাপার হচ্ছে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা নিয়ে গ্রাহকদের যত অভিযোগ, ব্রডব্যান্ড সেবা নিয়ে অভিযোগ সে তুলনায় নগণ্য।
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, সংখ্যায় অনেক কম গ্রাহক নিয়েও আইএসপির ক্ষেত্রে ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের পরিমাণ এত বেশি কেন? এর উত্তর আপনার নিজের কাছেই আছে। আপনি যে সময়ে বাসায় থাকেন, সে সময় আপনার স্মার্টফোন, ডেস্কটপ কিংবা ল্যাপটপ একটি রাউটারে সংযুক্ত করে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে থাকেন। এই নেটওয়ার্কে আপনার সংযোগ দিচ্ছে একটি আইএসপি প্রতিষ্ঠান। আপনার বাসায় পরিবারের সদস্যসংখ্যা পাঁচ হলে তারা প্রত্যেকেই ওই ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে যুক্ত আছেন। আবার আপনি বাসা থেকে বের হয়ে আপনার কর্মস্থলে যাওয়ার পর আবারও একটি ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে যান। মাঝখানে রাস্তায় চলাচলের সময়টুকুতে হয়তো মোবাইল নেটওয়ার্কে ইন্টারনেট চালু করেন! এর বাইরে আপনি দিনের চার ভাগের প্রায় তিন ভাগ সময়ই থাকছেন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগে।
এখন হিসাব করে দেখুন আপনার পরিবারের সদস্যসংখ্যা পাঁচ হলে একটি ওয়াইফাই রাউটার থেকে পাঁচজন ওই ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করেন। এখন ১ কোটি ৩৫ লাখ গ্রাহককে পাঁচ দিয়ে গুন করলে ফল হয় ৬ কোটি ৭৫ লাখ। অর্থাৎ হাউজহোল্ড সংযোগ হিসেবে আইএসপি গ্রাহকদের প্রকৃত সংখ্যা ৬ কোটি ৭৫ লাখ। আবার ধরুন আপনার অফিসে ২০ জন সহকর্মী আছেন। তারা যদি প্রত্যেককে একটি আইএসপির সংযোগের মাধ্যমে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকেন এবং তাহলে অফিস সংযোগ হিসাব করলে আইএসপিদের গ্রাহকসংখ্যা ২০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
আসলে গ্রাহকসংখ্যাও বড় কথা নয়। বড় বিষয়ে হচ্ছে আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো আপনাকে অনেক কম টাকায় আনলিমিটেড ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে। যে কারণে আপনি আইএসপি নেটওয়ার্কে ইন্টারনেট ব্যবহারে একদম স্বাধীন, কোনো নির্দিষ্ট ডাটা ভলিউম কিংবা মেয়াদের মায়াজালে বন্দি নন। এ কারণেই আমরা বলতেই পরি, যদি ব্রডব্যান্ড সংযোগের বিস্তারে দেশি বিনিয়োগের এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে আরও উৎসাহ দেয়া যায়, তাহলে আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতা আরও বেড়ে যাবে। এখানে আরও বলে রাখি, দেশীয় বিনিয়োগে যেসব ট্রান্সমিশন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (এনটিটিএন অপারেটর) আছে, তাদের নেটওয়ার্কের গ্রাহক সব মোবাইল অপারেটর এবং আইএসপি প্রতিষ্ঠান। ফলে সব মোবাইল ও আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর সব গ্রাহক কিন্তু এনটিটিএন অপারেটরদেরও গ্রাহক। ফলে এটাও বলা যায় যে, বাংলাদেশে টেলিযোযোগ সেবায় গ্রাহকসেবায় বৃহত্তম অংশীদার দেশীয় বিনিয়োগে গড়ে ওঠা কোম্পানিগুলোই। যদিও তাদের অবদান বিদেশি বিনিয়োগের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপুল বিজ্ঞাপনের ঝলকানির কারণে আমাদের চোখের সামেনে চট করে উদ্ভাসিত হয় না! অবশ্য দেশি কোম্পানিগুলো সেবা ব্যবস্থাপনায় বড় অংশীদার হলেও লাভের টাকার অঙ্কের খাতায় বিদেশি বিনিয়োগের অপারেটরদের তুলনায় একেবারেই ক্ষুদ্র।
একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, মোবাইল টেলিযোগাযোগসেবায় মান কেন সন্তোষজনক হচ্ছে না? এর উত্তরে মোবাইল অপারেটররা বার বার একটাই অভিযোগ করেন। সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ সেবার ভ্যালু চেনে তাদের কয়েকটি স্বতন্ত্র লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হয়। এই নির্ভরতার কারণেই সমস্যা হচ্ছে। তারা মূলত দায়ী করেন এনটিটিএন (ন্যাশনাল টেলিকম ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক), আইসিএক্স (ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ) এবং আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) প্রতিষ্ঠানকে। আসুন এবার দেখে নেওয়া যাক, মোবাইল অপারেটরদের এই অভিযোগ কতটা যুক্তিযুক্ত?
আসলে যে কোনো সার্ভিস অপারেটর সব সময়ই একাধিক দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পক্ষ প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল থাকে। যেমন ধরুন আমাদের পরিবহনসেবায় সোহাগ পবিবহন কিংবা গ্রিন লাইন বাস সার্ভিস অপারেটর। এখন এই বাস সার্ভিস অপারেটররা হিনো, ভলভো কিংবা হুন্দাইয়ের মতো মোটরযান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বাস ক্রয় করেন। এই বাস চলার জন্য সরকারের সড়ক ও জনপথ কিংবা কিছু ক্ষেত্রে অন্য কোনো উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ রাস্তা নির্মাণ করে। এই নির্মাণকাজ করে বেশ কিছু বড় বড় বেসরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এখন বাস সার্ভিস অপারেটররা সেই বাস রাস্তায় চালিয়ে যাত্রীসেবা দেয়ার বিনিময়ে উপার্জন করে। বাস অপারেটর মূলত যাত্রীর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বাসে আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সচেষ্ট থাকেন। ভালো মুনাফা হলে নতুন বাস ক্রয় করেন, সেবার ক্যাটাগরিতে বৈচিত্র্য আনেন। এখন সোহাগ কিংবা গ্রিন লাইন পরিবহন যদি দাবি করে, তারা যেহেতু যাত্রীসেবা দেয়, সে কারণে বাস নির্মাণ এবং রাস্তা তৈরির কাজ তাদেরই দিতে হবে! যদি ওই দাবি পূরণ না হয়, তাহলে তারা পুরোনো যন্ত্রাংশ মেরামত করবে না, নতুন বাস কিনবে না, প্রয়োজনীয় জ্বালানি নেবে না এবং রাস্তার গাড়ি ধীরগতিতে চালাবে! ধরুন বাস অপারেটরের সেবার মান নিম্নগামী হচ্ছে, আসনগুলো ছেঁড়া, গাড়ি সময়মতো ছাড়ে না, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া হচ্ছে। আর আপনি যখনই বাসে যাত্রী সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তখনই বাস অপারেটর দুহাতে মুখ ঢেকে বলছেন, ভাইরে আমার তো রাস্তা তৈরির ক্ষমতা নাই, বাসের ছেঁড়া সিট কাভার পাল্টে নতুন লাগাব কেমনে? এই যুক্তিটা নিশ্চয় আপনার কাছে হাস্যকর মনে হবে।
সেবার মান নিয়ে অভিযোগে মোবাইল অপারেটরদের উত্তরও অনেকটা একইরকম। বাস অপারেটরের মতোই মোবাইল অপারেটর একটি সার্ভিস অপারেটর। একইভাবে পৃথক কোম্পানির কাছ থেকে নেটওয়ার্কের যন্ত্রপাতি ক্রয় করেন, ব্যান্ডউইথ কেনেন এবং ব্যান্ডউইথ পরিবহনের জন্য ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন। এই ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কই টেলিযোগাযোগ সেবার হাইওয়ে। বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ নীতিতে অপারেটর, যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যান্ডউইথ সরবরাহকারী এবং ট্রান্সমিশন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে পৃথক লাইসেন্স দেয়া হয়েছে এবং নিজেদের কাজের পরিধি নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে।
সারা দেশে যেমন ৯৯ শতাংশ মোবাইল নেটওয়ার্ক আছে, তেমনি প্রায় সমপরিমাণ অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করেছে এনটিটিএন অপারেটররা। ফলে মোবাইল অপারেটরদের অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে কোনো সংকট নেই; কিন্তু তারপরও ২০২০ সাল পর্যন্ত মোবাইল অপারেটরদের বিটিএস বা সাইটগুলোর মাত্র ৩০ শতাংশ ফাইবার নেটওয়ার্কে যুক্ত ছিল। এখনো এই সংযুক্তি টেলিটক ছাড়া অন্য তিনটি অপারেটরের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশের বেশি নয়। এর নেপথ্যে মূল কারণটা হচ্ছে ব্যবসায়িক মাঠ দখলের প্রতিযোগিতা। শুরু থেকেই বাংলাদেশে তিনটি বিদেশি বিনিয়োগের কোম্পানি ৩৬০ ডিগ্রি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যাচ্ছিল; কিন্তু ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিটিআরসি আইএলডিটিএস পলিসির মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ খাতে ট্রান্সমিশন ও ব্যান্ডউইথ সরবরাহ ব্যবস্থা পৃথক লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে এলে মোবাইল অপারেটরদের সেই চেষ্টা ব্যাহত হয়। বিশেষ করে মোবাইল সংযোগের পাশাপাশি ট্রান্সমিশন এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। বরং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবায় দেশি উদ্যোক্তা তৈরি হতে থাকে। এরপর থেকেই সেবার মানের ক্ষেত্রে যে কোনো প্রশ্নের উত্তরে মোবাইল অপারেটররা ট্রান্সমিশন এবং ব্যান্ডউইথ সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় তাদের একক নিয়ন্ত্রণ না থাকার বিষয়টিই অভিযোগ কিংবা অজুহাত আকারে সামনে নিয়ে আসছে।
বাংলাদেশে এখন ব্যান্ডউইথ সরবরাহের কোনো ধরনের ঘাটতি নেই। দুটি সাবমেরিন কেবল এবং ছয়টি আইটিসি কোম্পানি চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পর্যাপ্ত ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করছে। সারা দেশে অপটিক্যাল ফাইবার কানেকশন রয়েছে। তাহলে কোনো মোবাইল ইন্টারনেটে যথাযথ মান নিশ্চিত হচ্ছেন না? বিটিআরসি ২০২১ সালে যে পরিমাণ বেতার তরঙ্গ মোবাইল অপারেটরদের বরাদ্দ দিয়েছে, তার কত অংশে এখন পর্যন্ত রোল আউট (নেটওয়ার্কে ব্যবহারের জন্য নিয়োজিত) করা হয়েছে? বিগত বছরগুলোতে ক্রমাগত ব্যান্ডউইথ এবং ট্রান্সমিশন সেবার দাম কমেছে। তাহলে মোবাইল ইন্টারনেটের প্যাকেজের দাম কেন কমেনি? এসবের একটা নিবিড় টেকনিক্যাল অনুসন্ধান হওয়া দরকার। সব সামর্থ্য থাকার পরও কোনো মোবাইল টেলিযোগাযোগ সেবায় দৈন্য অবস্থা, তার যথাযথ কারণ চিহ্নিত না করা গেলে সমাধানও পাওয়া যাবে না।
দেশি আইএসপিগুলো ব্যবসায়িক দিক বড় করে না দেখে কর্তৃপেক্ষের এক দেশ এক রেট মেনে নিয়েছে। অথচ মোবাইল অপারেটররা জটিল অঙ্কের প্যাকেজের বাইরে আসতে পারেনি। ব্রডব্যান্ড সেবায় আনলিমিটেড ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ আছে; কিন্তু মোবাইল ইন্টারনেট সেবায় গ্রাহক প্রতারণার সহজ পথ হিসেবে সমালোচিত তিন দিনের প্যাকেজ বন্ধ হলে, অপারেটররা ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে মায়া কান্না জুড়ে দিয়ে কর্তৃপক্ষকে সেই প্যাকেজ পুনরায় চালু করতে বাধ্য করেছে।
ভ্যালু চেইনে নিরবচ্ছিন্ন ও মসৃণ সেবা পাওয়া নিয়ে অভিযোগ থাকতে পারে। যেমন বাস অপারেটররা রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে দেখল রাস্তা ভাঙা কিংবা চলাচল যোগ্য নয়। তাহলে ওই বাস অপারেটর নিশ্চিতভাবেই নিজেই বিনিয়োগ করে রাস্তা নির্মাণ করবে না। বরং রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের কাছে রাস্তা মেরামতের জন্য চাহিদাপত্র দেবে। ভ্যালু চেনে যেসব সেবার ওপর মোবাইল অপারেটররা নির্ভরশীল, সেসবের কোনো একটিতে সমস্যা থাকলে সেটা সুনির্দিষ্টভাবে সামনে নিয়ে আসা উচিত এবং তার দ্রুত সমাধানের জন্য সোচ্চার হওয়া উচিত; কিন্তু সেটা না করে ভ্যালু চেনের পুরো ব্যবসা দখলের চেষ্টা করা এবং চেষ্টা সফল না হলে সেই ব্যর্থতাকে সেবার মান বাড়ানোর সীমাবদ্ধতা হিসেবে উপস্থাপন করা অনৈতিক। সেবার নিম্নমানের জন্য অপারেটররা আর কতদিন দায় এড়িয়ে যাবে?
আমাদের মনে রাখতে হবে নিকট আগামীতে প্রযুক্তির এগিয়ে যাওয়ার যে গতি প্রকৃতি সেখানে নিরবচ্ছিন্ন এবং উচ্চগতির ইন্টারনেট অপরিহার্য। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত, দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের ভ্যালু চেনের অপারেটরদের মধ্যে ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা সেটা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া এবং সুস্থ ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার পরিবেশ গড়ে তোলা। সুস্থ ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার পরিবেশ গড়ে উঠলেই গ্রাহকসেবার যথাযথ মানও নিশ্চিত হবে।
রাশেদ মেহেদী: টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত বিশ্লেষক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে