ছাত্র-শিক্ষকের স্নেহ ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক বজায় থাকুক
‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ নিয়ে কাজী কাদের নেওয়াজের একটি অপূর্ব কবিতা আমরা পাঠ্যপুস্তকে পড়েছিলাম ছোটবেলায়। বাদশাহ আলমগীর একদিন দেখেন তার পুত্র মৌলভীর পায়ে পানি ঢেলে দিচ্ছে, আর মৌলভী নিজেই হাত দিয়ে পায়ের ধুলি পরিষ্কার করছেন। পর দিন বাদশাহ মৌলভীকে ডেকে নিয়ে গেলেন দরবারে। বললেন, এ কেমন বেয়াদবি আপনি শিখাচ্ছেন আমার ছেলেকে? সে কেন নিজের হাতে আপনার পায়ের ধুলি পরিষ্কার করে দিল না? এ শুনে শিক্ষক বললেন, ‘আজ হতে চির উন্নত হলো শিক্ষাগুরুর শির।’
কিন্তু আজকের বাংলাদেশ আর সেই অবস্থায় নেই। ছাত্র-শিক্ষকের স্নেহ-শ্রদ্ধার সম্পর্ক নেই অনেক দিন ধরেই। শিক্ষা এদেশে বাণিজ্য হয়ে গেছে। বেশির ভাগ শিক্ষকই আজ কেরানি আর বেশির ভাগ ছাত্রই বড় জোর পণ্য ক্রেতা। শিক্ষার যে মহৎ উদ্দেশ্য- জ্ঞান অর্জন, তা অনেকটাই বিলুপ্তপ্রায়। এখানে তাই ছাত্র-শিক্ষকের স্নেহ-শ্রদ্ধার সম্পর্কটা আর অটুটু থাকেনি।
সম্প্রতি ক্ষমতার পালাবদল ঘটায় এই দৃশ্য আরও ব্যাপকভাবে দেখা গেল। আওয়ামী লীগ সরকারের লেজুরবৃত্তি করার অভিযোগে কিছু শিক্ষককে জোরপূর্বক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। আবার কোনো কোনো বিদ্যানিকেতনে মব তৈরি করে বিশেষ একটা গ্রুপের স্বার্থ হাসিল করার জন্য শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে। কোথাও কোথাও শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
দেশের সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি মত প্রকাশ চলছে। কেউ বলছেন, শিক্ষক যতই অপরাধ করুক তার গায়ে হাত তোলা চলে না। অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন, আবার কিছু কিছু শিক্ষক এতটাই অনিয়ম-দুর্নীতিগ্রস্ত যে, তাদের ক্ষমার চোখেও দেখা যায় না। ঘটনা যা-ই ঘটুক, এর জন্য কেবল ব্যক্তি মানুষকেই দায়ী করা যায় না। এর জন্য আমাদের সামগ্রিক শিক্ষা, রাজনীতি, সাংস্কৃতিক পরিবেশই এ জন্য দায়ী।
আমরা জানি, বিগত সরকারের সময় অনেক শিক্ষককে বাধ্য করা হয়েছে দলীয় রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার জন্য। শিক্ষকরা সময়মতো মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পারেননি। পাশাপাশি আমাদের শিক্ষকদের দক্ষতারও অভাব আছে। তারা উপযুক্ত ছাত্র তৈরি করতে পারেননি। এক শিক্ষক বলেছেন, আমাকে ঘাড় ধাক্কা না, আঙুল তুলে বললেই আমি বেরিয়ে যেতাম। ভালো শিক্ষকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশের নজিরও আমরা দেখেছি।
দেশে আজ এক পরিবর্তনের ডাক পড়েছে। শিক্ষাব্যবস্থা আমূল পাল্টে দেয়ার কথা হচ্ছে। আমরা চাই, ছাত্র-শিক্ষকের স্নেহ-শ্রদ্ধার সম্পর্ক অটুটু থাকুক। শিক্ষকদের যেন কোনো নির্দিষ্ট দলের তাঁবেদারি করতে না হয়, সেরকম এক সমাজব্যবস্থা কায়েম হোক। পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ শিক্ষক গড়ে তোলা হোক। শিক্ষকরাই গড়ে তুলবেন এক যোগ্য প্রজন্ম।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে