নতুন পাঠ্যবইয়ে এসেছে যেসব পরিবর্তন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষা খাতের পাঠ্যবইতে সাবেক সরকারের চালু করা সৃজনশীল শিক্ষাক্রম বাদ দিয়ে চালু করা হয়েছে ২০১২ সালের শিক্ষা কারিকুলাম। বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে জুলাই আন্দোলনের নানা ঘটনা। নতুন বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে সীমিত পরিসরে তুলে দেয়া হয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত নতুন শিক্ষাবছরের পাঠ্যবই। সংশোধিত ও পরিমার্জিত সব বইয়ের অনলাইন ভার্সন পাওয়া যাচ্ছে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে।
এতে দেখা গেছে, বিভিন্ন শ্রেণির পরিবর্তিত পাঠ্যপুস্তকে স্থান পেয়েছে ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানের বিভিন্ন গল্প, ছবি, কার্টুন, গ্রাফিতিসহ বিভিন্ন বিষয়। ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে গত ১৫ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে। নবম-দশম শ্রেণির বইতে তুলে ধরা হয়েছে শেখ হাসিনার পতনের গল্পও। নতুন কারিকুলামের পাঠ্যবইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পাশাপাশি পরদিন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আরও একবার সেই ঘোষণাপত্র ইথার তরঙ্গে ভেসে এসেছিল মেজর জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে।
এ দুই শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ে স্থান দেয়া হয়েছে ‘আমাদের নতুন গৌরবগাঁথা’ অধ্যায়। এ অধ্যায়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের গল্প তুলে ধরা হয়েছে এভাবে- সেদিন ৫ আগস্ট ২০২৪- ৩৬শে জুলাই। বাংলাদেশের ক্যালেন্ডার জুলাইতে থেমে গেছে। শুধু দেশ নয় সারা দুনিয়ার মানুষ তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের দিকে। আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা এক দফা দাবি পেশ করেছে। সারা দেশ থেকে মানুষ ঢাকায় ছুটছে। ঘেরাও করবে গণভবন। মূলোৎপাটন করবে শাসনক্ষমতা আঁকড়ে থাকা ফ্যাসিবাদী শাসককে। কারফিউ উপেক্ষা করে ঢাকার উত্তরার পথে মানুষের দেখা মিলল। যাত্রাবাড়ীর দিকে মানুষ জড়ো হতে থাকল ধীরে ধীরে। নামল মানুষের ঢল। জনতা গণভবনে পৌঁছে যায় দুপুর নাগাদ। পতন অত্যাসন্ন টের পেয়ে স্বৈরাচার সরকারপ্রধান পালিয়ে যান দেশ ছেড়ে।’
অধ্যায়টিতে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের শুরুতে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সরকার। উঠে আসে হাসিনা সরকার উৎখাতে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অবদানের কথাও। সেখানে বলা হয়, সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বন্ধ করে দেয়ার পর আন্দোলন কর্মসূচি গতি হারাতে পারত। কিন্তু বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা তখন ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসেন।
‘আমাদের নতুন গৌরবগাঁথা’ অধ্যায়টিতে উঠে এসেছে আওয়ামী লীগের আমলের দীর্ঘ দুঃশাসনের কথাও। সামান্য দাবির কারণে নির্বিচারের নির্যাতন আর গুম-খুন করা হয়েছে- বলে উল্লেখ করা হয়েছে এতে। যুক্ত করা হয়েছে বছরের পর বছর ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুট হওয়ার কথাও।
এতে আরও বলা হয়েছে, সাবেক সরকারের দানবীয় শাসন চালানোর জন্য প্রধান অবলম্বন ছিল মুক্তিযুদ্ধের গল্প। কিন্তু লোকে দেখল, হাজার সার্টিফিকেটধারী মুক্তিযোদ্ধার জন্ম হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পরে। জাল সনদ সংগ্রহ করে চাকরির সুবিধা নিয়েছে অনেকে। সরকার সব অনিয়ম-অবৈধতাকে ঢেকে দিতে চেয়েছে অবকাঠামোগত ‘উন্নয়নের গল্প’ দিয়ে।
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য ছাড়াও উল্লেখযোগ্য বহু পরিবর্তন এসেছে অন্যান্য শ্রেণির বিভিন্ন পাঠ্যবইয়েও। এর মধ্যে বিশেষভাবে পাঠ্যবই থেকে বাদ দেয়া হয়েছে অতিরিক্ত শেখ মুজিববন্দনা। চার নেতার বিবরণীতে স্থান পেয়েছেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, নতুন পাঠ্যবইতে বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন এসেছে। ইতিহাসের অংশ থেকে অতিবন্দনা, অতিকথন বাদ দেয়া হয়েছে। আগে যাদের অবদান বই থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল, এমন অনেকের তথ্য যুক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া বয়স উপযোগী করে অনেক লেখা সহজবোধ্য করা হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নতুন পরিস্থিতিতে যোগ করা হয়েছে এগুলো। বইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় যুক্ত করা হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে