নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা, রাজধানীবাসীর অনেকেই ছাড়ছেন না ঢাকা
ঈদের লম্বা ছুটিতে রাজধানীবাসীর বড় একটি অংশ গ্রামে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছে। অন্যদিকে, এই ছুটির সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে অনেকেই ছাড়ছেন না ঢাকা। ফাঁকা ঢাকায় চুরি-ডাকাতির আশঙ্কা বাড়ায় তাদের মনে এই উদ্বেগ কাজ করছে।
এবারের রোজার ঈদে সরকারি ছুটি থাকছে ৯ দিন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার। আবার বুধবার ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটি উপলক্ষে অনেকেই বৃহস্পতিবার ২৭ মার্চ ছুটি নিয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ১৩ দিনের ছুটির ফাঁদে দেশ। এদিকে রোজার শুরুতেই বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশ আগেই ফাঁকা হতে শুরু করেছে রাজধানী ঢাকা। এই ফাঁকা ঢাকায় অপরাধ, বিশেষ করে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
এই লম্বা সময়ে নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন থাকবে তা নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে একধরনের উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যের পরেই অনেকেই চিন্তায় পড়েছেন। উনি বলেছেন, ‘পুলিশ থাকলেও বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিজ দায়িত্বে নিশ্চিত করতে হবে।’ তাছাড়াও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও ঢাকাবাসীর মনে আতঙ্ক রয়েছে।
আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা ফওজিয়া আকতারের পরিবার এই ঈদে বাসা ফাঁকা রেখে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার ঝুঁকি নিতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনার বাসার নিরাপত্তা নিজ দায়িত্বে নিশ্চিত করতে বলেছেন। ফলে আমরা পরিবার নিয়ে রাজধানীতেই ঈদ উদযাপন করব। দুশ্চিন্তা নিয়ে ঈদের আনন্দ সম্ভব নয়।’
অন্যদিকে, অনেকেই এই ঝুঁকির কথা মাথায় রেখেও ঢাকা ছাড়ছেন। মিরপুরের ব্যবসায়ী মুশফিকুর রহমান জানান, সম্প্রতি তার এলাকায় চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। ফলে বাড়ি ফাঁকা রেখে ঈদ করতে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলেও, পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের আনন্দের কাছে সেই শঙ্কা তুচ্ছ মনে হচ্ছে তার।
অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক মনে করেন, ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে অতীতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। তবে এবারের বাস্তবতায় নিরাপত্তা শঙ্কা আরও বেড়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে পুলিশের যে পরিস্থিতি, তাতে স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাই চ্যালেঞ্জের মুখে। ঈদের সময় বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
তিনি আরও পরামর্শ দেন, ঢাকায় যারা ঈদ করবেন তাদের সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি, নিরাপত্তা জোরদার করতে রাস্তায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, পুলিশের নিয়মিত টহল ও বিশেষ নজরদারির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, ঈদের ছুটিতে রাজধানীবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে পাড়া-মহল্লায় টহল, এটিএম বুথ ও চেকপোস্টে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশেই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পুলিশ বলছে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে ছুটির সময় ঢাকায় অন্তত ১৫ হাজার পুলিশ তৎপর থাকবে। রাস্তায় তল্লাশিচৌকি বসানোর পাশাপাশি বিপণিবিতান ও আবাসিক এলাকায় টহল জোরদার করা হবে।
এদিকে র্যাবের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখা থেকে জানানো হয়েছে, ঈদে মানুষের নিরাপত্তায় গোয়েন্দা কার্যক্রম ও টহল জোরদার করা হয়েছে। এ সময় সাদা পোশাকে গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা তৎপর থাকবেন। এছাড়াও এই বাহিনীর গোয়েন্দা, ফুট প্যাট্রল ও মোবাইল প্যাট্রলের নজরদারি থাকবে।
এদিকে প্রতিবারের চেয়ে কমসংখ্যক মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন বলে সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রীর সংখ্যা অন্যবারের চেয়ে তুলনামূলক কম ছিল।
বিভিন্ন টার্মিনাল ও রেলস্টেশন ঘুরে দেখা গেছে ঘরমুখী যাত্রীরা অপেক্ষা করলেও সংখ্যা ছিল কম। অনলাইনে টিকিট কাটা যাত্রীরা নির্ধারিত সময়ে এসে সরাসরি বাসে উঠছেন, ফলে কাউন্টারগুলোতে ব্যস্ততা কম দেখা গেছে। ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে মহাসড়কগুলোতেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে টহল টিম।
তবে ঈদের ছুটিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাধারণ মানুষকেও সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে