Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

নিলামে উঠছে ৭ মার্চে ব্যবহৃত কল রেডীর সেই মাইক্রোফোন

Rokonuzzaman Moni

রোকনুজ্জামান মনি

বুধবার, ৬ মার্চ ২০২৪

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। এদিন সকাল থেকেই রেসকোর্স ময়দানে মানুষের ঢল। দুপুর গড়াতেই মঞ্চে উঠলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বজ্রকণ্ঠে ডাক দিলেন স্বাধীনতার। বঙ্গবন্ধুর ১৮ মিনিটের ভাষণের প্রতিটি বাক্যই এ জাতিকে করেছিল উদ্বেলিত, যা শুনে রক্তে প্রবাহিত হতে শুরু করেছিল পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার আগুন। সেই আগুন উপস্থিত ১০ লাখ মানুষের কাছ থেকে পৌঁছে গিয়েছিল গ্রামগঞ্জে, নগর-বন্দরে। তারপরের ইতিহাস সবারই জানা। বঙ্গবন্ধুর যে ভাষণের মাধ্যমে এ জাতি স্বাধীনতা পেল, সেই ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যে স্বীকৃতি পেয়েছে। শুধু তাই নয়, আজও যে কোনো অন্যায়-অবিচার আর অনিয়মের বিরুদ্ধে যখন মানুষ কথা বলে তখন বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ একই রকমভাবে মানুষকে আন্দোলিত করে।

ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে কল-রেডীর অফিস । ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধুর সেই দিনের ঐতিহাসিক ভাষণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে যে মাইক সার্ভিসটি চরম ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছিল, তার নাম কল রেডী। আজও যখন বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি কোথাও বাজে তখন অবচেতন ভাবেই বঙ্গবন্ধুর তেজদীপ্ত মুখের সামনে থাকা মাইক্রোফোনে লেখা কল রেডি শব্দটি আমাদের ভাবনায় চলে আসে। তবে স্বাধীনতার ৫২ বছর অতিক্রম হলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো স্বীকৃতি মেলেনি কল রেডির। শুধু তাই নয়, যে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই মাইক্রোফোনটিরও জায়গা হয়নি জাতীয় জাদুঘরে, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কিংবা বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে। বরং এখন সেটি উঠতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক নিলামে।

এই জাতির গৌরবের ইতিহাসের অংশ কল রেডীর সেই মাইক্রোফোনটি বর্তমানে কোথায় আছে, কীভাবে আছে- সেটা অনুসন্ধান শুরু করে ভিউজ বাংলাদেশ। সরেজমিন চলে যায় পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত কল রেডির দোকানে। সেখানে প্রবেশ করেই চোখে পড়ে কয়েকজন কর্মচারীর কর্মব্যস্ততার দৃশ্য। তবে ওই সময় বর্তমান স্বত্বাধিকারী সাগর ঘোষ না থাকায় কথা খুব বেশি দূর এগোয়নি। কর্মচারীদের অনেকেই দোকানটিতে কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। তবে এ প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে কেউ কথা বলতে চাননি। সাগর ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করার কোনো মাধ্যমও তারা দেখাতে চায়নি। তবে নানাভাবে চেষ্টার পরে তাদের কেউ-কেউ একটা দুইটা কথা বলতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে দোকানটিতে প্রবেশ করেন কল রেডির মালিক পক্ষের একজন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলতে শুরু করলেও তিনিও এ ব্যাপারে খুব বেশি কিছু বলতে চাননি। তবে তাদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সেই মাইক্রোফোন ও স্ট্যান্ড এখনো কল-রেডীর তত্ত্বাবধানেই আছে।

ফিরে এসে এবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় সাগর ঘোষের ছেলে বিশ্বনাথ ঘোষের (বিশু বাবু) সঙ্গে। এ সময় তিনি ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, “মাইক্রোফোনটি এখন দেশে নেই। জার্মানিতে আছে। জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠান এটি নিলামে ওঠানোর জন্য প্রস্তুত করছে।”

জার্মানির প্রযুক্তি ও ব্যবসায়িক সমস্যা সমাধানকারী প্রতিষ্ঠান এনটিটি এটিকে নিলামে তুলবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘মাইক্রোফোনটি প্রতিষ্ঠানটিকে দলিল করে দেওয়া হয়েছে।

সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করেও মাইক্রোফোনটিকে রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে নেয়া যায়নি উল্লেখ করে বিশ্বনাথ ঘোষ আরও বলেন, ‘সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পর্যন্ত যোগাযোগ করা হয়ছে। তবে আমরা কোনো রেসপন্স পাইনি। সে জন্য আমরা ৩ মাস আগে এটা পাঠিয়ে দিয়েছি।’

মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হলেও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে ব্যবহৃত কল-রেডির সেই মাইক্রোফোন উঠতে যাচ্ছে নিলামে। এ বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? জানতে চাওয়া হয় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের কাছে। তিনি বলেন, ‘এটি অবশ্যই জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কিংবা বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে নেয়া উচিত ছিল। কল রেডি হয়তো ব্যবসায়িক কারণে এটি বাইরে নিলামে দিতে যাচ্ছে। তবে এটি কোনোভাবেই দেশের বাইরে যেতে দেয়া ঠিক হবে না।’

উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে কল রেডি মাইক্রোফোনটি জাতীয় জাদুঘরের কাছেই দিতে পারত উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘কল রেডী মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করছে। তাদের দেশপ্রেম নিয়েও সন্দেহ আছে। তারা জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কিংবা বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের কাছে জানাতে পারত। জাতীয় জাদুঘর উপযুক্ত প্রমাণ পেলে টাকা দিয়েই এটি সংগ্রহ করত। জাতীয় জাদুঘর অনাগ্রহ প্রকাশ করলে, তখন তারা বাইরে নিলামে দিতে পারত।’

৭ মার্চের সেই মাইক্রোফোন আগলে রেখেছে কল-রেডী । ছবি: সংগৃহীত

তবে মাইক্রোফোনের বিষয়টি জাতীয় জাদুঘরের কাছে অনেকবার আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্বনাথ ঘোষ। এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সঙ্গেও কথা বলে তারা কোনো সুরাহা পাননি বলেও জানান তিনি।

১৯৭১ সালের ২৫ অথবা ২৬ মার্চ কল রেডীর অফিস ও মালিকের বাড়িতে আক্রমণ চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। সে সময় এই মাইকটা তারা লুকিয়ে অন্যত্র সংরক্ষণ করে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত কোনো সরকারই এটি উদ্ধার করে সংরক্ষণ করার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

তবে কল রেডী কর্তৃপক্ষের ধারণা, বিষয়টি বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে সেভাবে আনা হয়নি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ