বান্দরবানে সাংগ্রাই উৎসব
পানি খেলায় মেতেছে মারমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা
বান্দরবানে মারমা জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব সাংগ্রাইয়ে পানি খেলায় মেতেছে মারমা তরুণ-তরুণীরা। প্রচলিত আছে মৈত্রী পানি বর্ষণ বা জলকেলীর মাধ্যমে মারমা তরুণ তরুণীরা ভাবের আদান প্রদান করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। অতীতের সকল দুঃখ কষ্ট গ্লানি ধুয়ে মুছে পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার উৎসব সাংগ্রাই'কে ঘিরে ৪দিন ব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালা আয়োজন করা হয়েছে। আজ সোমবার বিকালে সাগ্রাই উৎসবের তৃতীয়দিনে বান্দরবান সদরে স্থানীয় রাজার মাঠে তরুণ-তরুণীদের জল ছিটিয়ে মৈত্রী পানি বর্ষণ বা জলকেলী প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি।
এসময় অন্যান্যদের মনে বান্দরবান পৌরসভা মেয়র মো: সামসুল ইসলাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কেএসমং মারমা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক মংহ্নচিং মারমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জলকেলী বা মৈত্রী পানি বর্ষণ প্রতিযোগিতায় বান্দরবান সদর ও রোয়াংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পাহাড়ি মারমা জনগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে দলবদ্ধ ভাবে জলকেলী বা মৈত্রী পানি বর্ষণ খেলায় মেতে উঠে। এছাড়াও রাজারমাঠসহ পাহাড়ি পল্লীগুলোতে জলকেলীতে মেতে উঠেছে শিশু-কিশোরেরাও। অপরদিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং তৈলাক্ত বাঁশ আরোহণের আয়োজন চলে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মারমা শিল্পী গোষ্ঠী এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের শিল্পীরা নাচে-গানে উৎসব মাতিয়ে তুলেন।
অপরদিকে বান্দরবানে রাতব্যাপী উজানিপাড়া, জাদীপাড়াসহ পাহাড়ি পল্লী গুলোতে চলে হরেক রকমের পিঠা তৈরির প্রতিযোগিতা। রাতে বানানো পিঠা পাড়াপ্রতিবেশী আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বাড়িতে বিতরণ করে তরুণ-তরুণীরা।
এদিকে গতরোববার উৎসবের দ্বিতীয় দিন সাঙ্গু নদীর চড়ে ধর্মীয়ভাবে বুদ্ধমূর্তি স্নান অনুষ্ঠানে মিলিত হয় পাহাড়ের মারমা সম্প্রদায়'সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজারো নারীপুরুষ। তারআগে কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষু, শ্রমণ এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী পুরুষেরা খালি পায়ে হেটে সাঙ্গু নদী চড়ে মিলিত হয় বুদ্ধমূর্তির স্নান অনুষ্ঠানে। কষ্টিপাথরের কয়েকশ বছরের পুরনোয় বুদ্ধমূর্তিতে পবিত্র জল ঢালা হয় পূর্ণের আশায়। সবশেষে বিশ্ববাসীর মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা অংশ নেয় শতশত নারী পুরুষ, তরুণ তরুনী, কিশোর কিশোরীরা।
উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি মংমংশৈ মারমা জানান, সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে ৪ দিন বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন চলছে। উৎসবের তৃতীয়দিন মৈত্রী পানি বর্ষণ বা জলকেলি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিঠা তৈরির প্রতিযোগিতা চলেছে। মঙ্গলবারও সাংগ্রাই উৎসবের মূল অনুষ্ঠানমালা চলবে জেলা সদরে। তবে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে উৎসব চলবে আরও কয়েকদিন। বর্ষবরণ এবং বর্ষবিদায় অনুষ্ঠানকে মারমা সম্প্রদায় প্রধান সামাজিক উৎসব সাংগ্রাই নামে পালন করে আসছে বহুবছর ধরে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে