বাংলাদেশি পর্যটকদের অপেক্ষায় দিন গুনছে কলকাতার মার্কুইস স্ট্রিট
মার্কুইস স্ট্রিট। কয়েকমাস আগেও বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড়ে জমজমাট হয়ে থাকত এই জায়গাটি; কিন্তু এখন ভিড় প্রায় তলানিতে ঠেকেছে। বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন ও তৎপরবর্তী ঘটনার জেরে পর্যটক কমে যাওয়ায় বেজায় বিপত্তির মুখে এখানকার ব্যবসায়ীরা। কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে ধর্মতলার কাছেই মির্জা গালিব স্ট্রিটের গা ঘেঁষে মার্কুইস স্ট্রিট। জায়গাটিকে বলা চলে কলকাতার মধ্যে এক টুকরো বাংলাদেশ। এ অঞ্চলে পা রাখলেই মনে হবে যেন ঢাকা শহরের প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশ থেকে আসা পর্যটকদের সত্তর শতাংশের বেশি মানুষ এখানেই এসে ওঠেন।
ঢাকা-কলকাতার অধিকাংশ বাসের বুকিং কাউন্টার রয়েছে এখানে। এই অঞ্চল থেকেই ছাড়ে ঢাকাগামী অধিকাংশ বাস। এ ছাড়াও বাংলাদেশি মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র থেকে শুরু করে বাংলাদেশি খাবার, পোশাক-আশাকসহ সবই উপলব্ধ মার্কুইস স্ট্রিটে। ঈদের শপিং হোক বা চিকিৎসা- সবকিছুর জন্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে কলকাতার এই বাংলাদেশি পাড়াই যেন বড্ড বেশি কাছের। করোনার ক্ষত সারিয়ে ধীরে ধীরে পর্যটকদের আনাগোনায় আবার জমে উঠেছিল এ এলাকা।
তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে পর্যটক আসা কমে যাওয়ায় হোটেল ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে খাবারের রেস্তোরাঁগুলো, জামাকাপড়ের দোকানদার সবাই ফের বিপত্তির মুখে পড়েছেন। দিন-রাত যে রাস্তায় বাংলাদেশিদের আনোগোনায় গমগম করত, সেখানে দোকানপাট এখন খাঁ খাঁ করছে। মুরগিপোলাও থেকে হালিম, সকালের সুস্বাদু নাস্তা থেকে কচুপাতা চিংড়ির গন্ধ ফিকে হয়ে গিয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে বাংলাদেশিদের মূলত চিকিৎসা, কেনাকাটা ও ভ্রমণের জন্য যাতায়াত।
কলকাতা নিউ মার্কেট । ছবি: পাউল হ্যামিল্টন
ভারতীয় সংবাদসংস্থা ইকোনমিক টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে গত বছর ৯ দশমিক ২৩ মিলিয়ন পর্যটকের আগমন ঘটেছে। যার মধ্যে শুধু বাংলাদেশের পর্যটক ২২ দশমিক ৫ শতাংশেরও বেশি। ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের এক পরিচালক জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যারা বিভিন্ন কারণে দেশের বাইরে যান, তাদের ৪০-৫০ শতাংশ মানুষের গন্তব্যই ভারত। ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ চিকিত্সার জন্য, ১৫ শতাংশ কেনাকাটার জন্য এবং বাকি ৫ শতাংশ ভ্রমণ বা অবকাশযাপনের জন্য ভারতে যান।
এক্ষেত্রে কলকাতা একটি পছন্দের শপিংয়ের জায়গা, বিশেষ করে উৎসবের আগে। অন্যদিকে সিকিম, উত্তর-পূর্ব ভারত এবং কাশ্মীরও বাংলাদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করে।’ চিকিত্সার তুলনামূলকভাবে সীমিত ব্যয়, শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসার সুবিধাসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ কলকাতা তথা ভারতমুখী হন। আর তাদের একটা বড় অংশের গন্তব্য কিন্তু মার্কুইস স্ট্রিট। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা রোগীর সংখ্যা ২০২২ সালে ছিল ৩০৪০৬৭ এর কাছাকাছি ২০২৩-এ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪৯৫৭০।
এই পরিসংখ্যানের একটা অংশের মানুষের প্রাথমিক গন্তব্য হয় কলকাতা। তাদের আনাগোনাই মূলত বাঁচিয়ে রেখেছিল মার্কুইস স্ট্রিট সংলগ্ন এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য। সেন্ট্রাল কলকাতা হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারমিত সিংয়ের সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া বিবৃতি অনুযায়ী, ‘বাংলাদেশ অশান্ত হয়ে ওঠার পর থেকেই এই অঞ্চলে হোটেলের বুকিং খুবই কমে গিয়েছে, যা ব্যবসায়ীদের কাছে বড়ই আশঙ্কার।’
স্থানীয় একটি খাবারের হোটেলের মালিক আশরাফ আলী ভিউজ বাংলাদেশের ভারতীয় প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, ‘আমাদের ব্যবসা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল। যারা এই আশপাশের হোটেলগুলোতে থাকেন। বাংলাদেশিদের পছন্দসই খাবারই আমরা তৈরি করি। বেশ কিছুদিন ধরে বিক্রি অনেক কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে বড়সড় অসুবিধায় পড়তে হবে। হয়তো কর্মীও কমাতে হবে।’ এখন কবে আবার বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড়ে গমগম করবে মার্কুইস স্ট্রিট সেই আশায় দিন গুনছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে