উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় 'রিমাল', আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে মানুষকে
দেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় 'রিমাল'। এ জন্য কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি)। এ জন্য এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিযানে নেমেছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইতোমধ্যেই ব্যাপক হারে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করা হয়েছে। সব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকদেরকে স্বল্প সময়ের মধ্যে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।‘
সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় 'রিমাল' উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং রবিবার সন্ধ্যা বা মধ্যরাত নাগাদ মংলার কাছে পশ্চিমবঙ্গ-খেপুপাড়া উপকূলের সাগর দ্বীপ অতিক্রম করতে পারে।
এতে আরও বলা হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার বন্দর থেকে ৩৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা বন্দর থেকে ৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং ২৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত হওয়ায় একই এলাকায় তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।
এর আগে শনিবার এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ ধেয়ে আসছে। আমরা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি এবং তা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের মূল আঘাত পুরো উপকূলীয় অঞ্চলের ওপর পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী মহিবুর যোগ করেন, ‘জেলা প্রশাসন উপকূলীয় জেলাগুলোতে ৪ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি সামাজিক, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত করেছে। যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী ব্যক্তিসহ বিপুল সংখ্যক লোকের থাকার ব্যবস্থা করা যায়।’
এ ছাড়াও গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় জেলায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) জন্য মোট ৭৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উপকূলীয় জেলাগুলোতে প্রায় ৪ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রায় ৮ হাজার ৬০০ জন রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবক এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা যখন ঝুঁকিতে থাকা লোকদেরকে নিরাপদে যেতে একটি প্রচারাভিযানে যোগ দিয়েছিলেন তখন জেলা প্রশাসন তাদেরকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করছিল।
আবহাওয়ার সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
বুলেটিনে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল থাকবে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। আর ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো।
ঘূর্ণিঝড় রিমাল ও গ্রেডিয়েন্টের পেরিফেরালের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, কুমিল্লার নিম্নাঞ্চল এবং চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তাদের উপকূলীয় দ্বীপ ও চরগুলো স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট উচ্চতার বায়ুচালিত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিমি) বৃষ্টিপাত হতে পারে।
এদিকে অতি ভারী বর্ষণের কারণে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে বলেও জানিয়েছে বিএমডি। সেই সঙ্গে তাদের পক্ষ থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে