Views Bangladesh Logo

ডিজেল থেকে সর্বোচ্চ শুল্ক আদায়

লতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। যদিও এ সময়ে আদায় হয়েছে ২৯ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। লক্ষ্যের তুলনায় ঘাটতি থেকে গেছে ৪ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এনবিআরের শুল্ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, পণ্য আমদানি-রপ্তানি পর্যায়ে আলোচ্য সময়ে সবচেয়ে বেশি শুল্ক আহরণ হয়েছে হাইস্পিড ডিজেল থেকে।

হাইস্পিড ডিজেল ছাড়াও এ সময় শুল্ক আহরণের দিক থেকে শীর্ষে থাকা অন্যান্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে চিনি, ফার্নেস অয়েল, সিমেন্ট ক্লিংকার, পাম অয়েল, বিটুমিন, কয়লা, পাথর, সুপারি ও স্টিল শিট। শীর্ষ ১০ পণ্য থেকে গত অর্থবছর এনবিআর শুল্ক আদায় করেছে ৯ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের এ সময়ে শুল্ক আদায়ে শীর্ষ ১০ পণ্য থেকে আহরণ হয়েছিল ৭ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ডলার সংকট, বিনিময় হারে অস্থিতিশীলতা ও এলসি খোলায় কড়াকড়ির মাধ্যমে আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে পণ্য আমদানি-রপ্তানি থেকে লক্ষ্যমাফিক শুল্ক আহরণ করা যায়নি। পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন তারা।

শুল্ক খাতে ২০২১-২২ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৬ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। এরপর গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা আরও বেড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে এই ঘাটতি ৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ঘাটতি বেড়ে যাওয়াকে সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক হিসেবে দেখছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সামনের দিনগুলোয়ও যদি শুল্ক আহরণে ঘাটতির হার সম্প্রসারিত হতে থাকে, তাহলে তা গোটা রাজস্ব ব্যবস্থায় চাপ বাড়াবে। একই সঙ্গে হয়ে উঠবে সরকারের ঋণনির্ভরতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে হাইস্পিড ডিজেল আমদানি হয়েছে ১১ লাখ ৯৬ হাজার ৫১৩ টন। এতে শুল্ক আহরণ হয়েছে ১ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে আদায় হয়েছিল ১ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা। এ পণ্যে শুল্ক আহরণ কমেছে ১ শতাংশ। ফার্নেস অয়েল আমদানি হয়েছে ৯ লাখ ৮৪ হাজার ২১১ টন। এর বিপরীতে শুল্ক আদায় হয়েছে ১ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। ফার্নেস অয়েল, জেট ফুয়েল, ডিজেল ও অকটেনের মতো প্রধান জ্বালানি তেল থেকে সরকার ১০ শতাংশ শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর আদায় করে।

দেশে সরকারি পর্যায়ে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলসহ অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানি করে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এর বাইরে বেসরকারি খাতের বেশ কয়েকটি কোম্পানিও বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি হিসেবে বিপুল পরিমাণ ফার্নেস অয়েল আমদানি করে।

আমদানি পর্যায়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শুল্ক আদায় হয়েছে চিনি থেকে। এ সময় এ পণ্য থেকে ১ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। যদিও গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় পণ্য আমদানি কমেছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৬৬ টন। সিমেন্ট ক্লিংকার থেকে শুল্ক আহরণ হয়েছে ১ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯৭ কোটি টাকা বেশি। তবে ৮ লাখ ২৩ হাজার ৯১২ টন ক্লিংকার কম আমদানি হয়েছে।

পাম অয়েল আমদানিতে শুল্ক আদায় হয়েছে ৮৩৫ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৭০ কোটি টাকা বেশি। বিটুমিন আমদানি ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩১ টন বেশি আমদানি হয়েছে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায়। আলোচ্য সময়ে আহরিত শুল্কের পরিমাণ ৭৭৬ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫০৭ কোটি টাকা বেশি।

দেশে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ায় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ লাখ ৫৭ হাজার ২০ টন বেশি কয়লা আমদানি হয়েছে। ফলে জীবাশ্ম জ্বালানি পণ্যটি থেকে শুল্ক আদায় হয়েছে ৫৮৪ কোটি টাকা, যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১২৭ কোটি টাকা বেশি।

পাথর আমদানির পরিমাণ বেড়েছে ৮২ শতাংশ। নির্মাণ খাতের এ পণ্যটি থেকে মোট শুল্ক আহরণ হয়েছে ৫৫১ কোটি টাকা, যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮২ কোটি টাকা বেশি। এ তালিকার নবম স্থানে আছে সুপারি। এ পণ্যটি আমদানি হয়েছে ১৬ হাজার ৩৩৩ টন। এর বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪৬৯ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে এ পণ্যটি আমদানি হয়েছিল ৮ হাজার ১৫৬ টন। রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১১৭ কোটি টাকা।

এ ছাড়া স্টিল শিট আমদানিতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪১৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৫৬৮ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় কমার পাশাপাশি পণ্য আমদানি কমেছে ৬৯ হাজার ৫৫৭ টন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ