Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

বাংলাদেশের ক্রিকেট মুক্তি পাক তথাকথিত ব্যক্তিগত কোটারি থেকে

Ekramuzzaman

ইকরামউজ্জমান

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪

বাংলাদেশ দল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের খেলায় অংশ নেওয়ার জন্য দেশ ছেড়েছে আশঙ্কা, উদ্বেগ, অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা ভঙ্গুর আত্মবিশ্বাস, নেতিবাচক মানসিকতা, টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ফর্মহীনতা, প্রস্তুতিতে ঘাটতি এবং আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়ে আক্রান্ত হয়ে। খেলোয়াড়রা দল হিসেবে ভাবতে পারেননি তাদের যে সামর্থ্য আছে এটি সময় মতো সম্মিলিতভাবে প্রতিফলিত করতে পারলে ভালো খেলা অবশ্যই সম্ভব।

খেলায় জয়-পরাজয় আছে। ভাগ্যেরও সাহায্যের দরকার আছে, তবে খেলায় কিন্তু সচরাচর যোগ্য গলায় মালা পরে। খেলোয়াড়দের যেটি দরকার, সেটি ইচ্ছা শক্তি জয়ের ইচ্ছা, দৃঢ় মনোবল, সাহস এবং ইতিবাচক মানসিকতা। ক্রিকেটে চাপ থাকবেই চাপ সামাল দিয়েই খেলোয়াড়রা মাঠে পারফর্ম করেন। খেলা উপভোগ করেন। আগে মিডিয়াতে অনেকেই মওকা পেয়ে অনেক কথাই বলেছেন। বুঝতে অসুবিধা হয়নি মুখে এক কথা ভেতরে আবার অন্য ঝড় বইছে। খেলা কখনোই নিজের জন্য নয়। খেলা দেশের জন্য।

ক্রিকেট ‘ম্যান্টাল’ গেম। এখানে মানসিক শক্তি, মনের দৃঢ়তা, সাহস, আত্মবিশ্বাস, মনোসংযোগের মাধ্যমে একাগ্রতার কোনো বিকল্প নেই। নিজের খেলার ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস না থাকলে তো পারফর্ম করা সম্ভব নয়। খেলা মানেই জয়ের ক্ষুধা নিয়েই লড়াই। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই। এখানেই পেশাদারিত্বের বাস্তবায়ন।

স্কোয়াড গঠন নিয়ে সাধারণ এবং অসাধারণ মহল প্রচুর কথা বলেছেন। আমাদের সংস্কৃতিতে আবার এ ক্ষেত্রে ভিন্ন ধরনের বাড়াবাড়ির গন্ধ সব সময় টের পাওয়া যায়। সম্পদ তো সীমিত। নির্বাচকরা তো অসহায়। তাদের ‘অপশন’ কোথায়? অনেক কিছু চিন্তা ভাবনার সমন্বয়ে স্কোয়ার্ড গঠন করা হয়। তাছাড়া বৈশ্বিক আসরে তো হঠকারিতা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ নেই। মিডিয়া তাদের দায়িত্ব পালন করেছে, নতুবা বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। সচেতনতা আগের তুলনায় বেড়েছে বলেই এখন অনেক কিছুই স্পষ্ট। সাদাকালো খেলা সহজেই বোঝা যায়। বোঝা যায় সময়ের সঙ্গে ‘ভোল পাল্টানো’ খেলা!

পুরো অবস্থাটা পর্যবেক্ষণ করে ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান মিডিয়াকে বলেছেন, আমাদের টার্গেট পরবর্তী বিশ্বকাপ। দলের অধিনায়ক নাজমুল শান্ত কি ভেবে বলেছেন জানি না দলের কাছে কোনো কিছু প্রত্যাশা করবেন না। এটা কেমন কথা, দেশের খেলা নিয়ে মানুষ ভালো-মন্দ নিয়ে কথা বলবে না, এটা কোন ধরনের বক্তব্য। মানুষের প্রত্যাশার তো সীমাবদ্ধ আর সেটা হলো বৈশ্বিক আসরে বাংলাদেশ ভালো খেলুক। প্রধান কোচ হাথুরে সিংহে বলেছেন আগে প্রথম রাউন্ডের বেড়া পার হই, তারপর ভাবা যাবে কি করা হবে। এদিকে কিন্তু দেশের একজন সাবেক ক্রিকেটার এবং বিশ্লেষক বলেছেন দলের খেলোয়াড়রা যদি সম্মিলিতভাবে সঠিক সময়ে তাদের সামর্থ্যের প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হন- তাহলে তিনটি ম্যাচে জিতে সুপার এইটে যাওয়া খুবই সম্ভব, যা এর আগে কখনো সম্ভব হয়নি।

আইসিসির গ্রুপ নির্ধারণ করার পর থেকেই একটি নেতিবাচক বাজনা সব সময় বাজানো হয়েছে সেটি হলো বাংলাদেশ ‘ডি’ গ্রুপটি খুব শক্তিশালী। এই গ্রুপে আছে শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস এবং নেপাল। শক্তিশালী দলগুলোর মোকাবিলা করা এই নেতিবাচক চিন্তার প্রভাব দেশ ছাড়ার আগে থেকেই খেলোয়াড়দের মনের ওপর প্রভাব ফেলেছে। ক্রিকেটে কখনো প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভাবার সুযোগ নেই। আর টি-টোয়েন্টি তো দুই-তিন বলেই খেলার রঙ্গ পাল্টে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে দ্বিপক্ষীয় তিন ম্যাচের সিরিজে হেরেছে বাংলাদেশ ২-১ ম্যাচে স্বাগতিক দলের কাছে বাজেভাবে। অভিবাসীদের নিয়ে গঠিত যুক্তরাষ্ট্র দল দেখিয়ে দিয়েছে তারা ‘পার্ট টাইম’ ক্রিকেট খেলে অভ্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে গুছিয়ে খেলতে হয়। শেষ ম্যাচে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র তাদের পাঁচজন নিয়মিত খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দিয়েছিল এই খেলায় জিতেছে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ দল। যুক্তরাষ্ট্রের সিরিজে লক্ষণীয় হয়েছে টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ফর্মহীনতা। ভাবা হয়েছিল তারা ফর্ম ফিরে পাবেন। সেই গুঁড়ে বালি। এরপর আইসিসির অনুশীলন ম্যাচ ভারতের বিপক্ষে সেখানে টপ-অর্ডাররা ফ্যাকাসে এবং রঙ্গহীন। বোলাররা তো দায়িত্ব পালন করেছে, তাদের তো একটা সীমাবদ্ধতা আছে। ব্যাটাররা তো তাদের দলকে এমন একটা অবস্থায় দলকে পৌঁছে দিয়ে তাদের দায়িত্ব দেবে বোলার ডিফেন্ড করতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের উইকেটে রানের খরা ছিল। বোলাররা দাপটের সঙ্গে পারফর্ম করেছেন। আইসিসির নিয়ন্ত্রণে উইকেট তৈরি হয়েছে- এটি নিয়ে কথা উঠেছে। বাংলাদেশ বিশ্বকাপ শুরু করেছে ডালাসে শ্রীলঙ্কার, এরপর দ্বিতীয় খেলা নিউইয়র্কে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজে উড়ে যেয়ে ভিনসেন্টে যথাক্রমে নেদারল্যান্ডস এবং নেপালের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ। চার ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ জিতেছে শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস এবং নেপালের বিপক্ষে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কেন লড়াই করে জিততে পারেনি এটি খেলোয়াড় এবং টিম ম্যানেজমেন্ট নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছে। তিন খেলায় জয় লাভের বদৌলতে বাংলাদেশ এবারই প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইটে স্থান করে নিয়েছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স। দলের খেলোয়াড়দের সামর্থ্য থাকাতেই সম্ভব হয়েছে সুপার এইটে পৌঁছানো। এ ক্ষেত্রে বোলিং ইউনিটের অবদান অবিস্মরণীয়।

বাংলাদেশ সুপার এইটে যেতে পারবে এই বিষয়টি আগে আত্মবিশ্বাস এবং আস্থার অভাবে আগে বলা হয়নি। সুপার এইটে যাবার সম্ভাবনা উদয় হওয়াতে বলা হয়েছে লক্ষ্য ছিল সুপার এইট। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বলা হয়েছে সুপার এইটে ওঠাটাই একটি বড় বোনাস। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বার্বাডোজে বাংলাদেশ যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের বিপক্ষে শক্ত প্রতিরোধ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েই হেরেছে। স্বাধীন ক্রিকেট খেলতে পারেনি। ভারতের বিপক্ষে কৌশলগত দিক থেকে বাংলাদেশ বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। তবে এই দুটি দল বাংলাদেশ দল থেকে মাঠের লড়াইয়ে সব ক্ষেত্রে অনেক বেশি এগিয়ে। আফগানিস্তানের সঙ্গে শেষ খেলা এটি নিয়ম রক্ষার খেলা বলার কোনো সুযোগ নেই। দেশের খেলার মূল্যায়ন তো ‘কোন যদি এবং হিসেব বাংলাদেশকে’ ফিরিয়ে আনতে পারবে না- এটাই সত্যি। তবে শেষ পর্যন্ত লড়াই তো ক্রিকেটের ধর্ম। আফগানিস্তান চলমান টি-টোয়েন্টিতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। তারা অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে।

বিশ্বকাপে প্রাপ্তি এবং অপ্রাপ্তি নিয়ে আলোচনা হবে। আমাদের ব্যাটাররা পারেননি সবাই মিলে ঝলসে উঠতে। অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে ব্যাটারদের যেভাবে খেলা উচিত দায়বদ্ধতার সঙ্গে এই ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে অস্পষ্ট তোষামোদ করে কথা বলার দিন শেষ হতে চলেছে। দল পুনর্গঠনে কারও কারও টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে সন্ধ্যা নামবে। এটাই রূঢ় বাস্তবতা। তৌহিদ হৃদয়, তানজিদ, রিশাদ, মুস্তাফিজ, নাজমুল এবং অন্যরা নতুন চিন্তা ভাবনার ক্রিকেটকে এগিয়ে যাবেন এটাই প্রত্যাশা। বাংলাদেশের ক্রিকেট মুক্তি পাক তথাকথিত ব্যক্তিগত কোটারি থেকে।

লেখক: কলামিস্ট ও বিশ্লেষক। সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি এআইপিএস এশিয়া। আজীবন সদস্য বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন। প্যানেল রাইটার ফুটবল এশিয়া।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ