টেস্ট পরীক্ষার নামে শিক্ষাবাণিজ্য বন্ধ হোক
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় টেস্ট পরীক্ষার নামে শিক্ষাবাণিজ্য একটা বড় নৈরাজ্য। শুধু যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে টেস্ট পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হয় তা নয়, বর্তমানে এই বাণিজ্য প্রাথমিক পর্যায়েও বহাল। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে টেস্ট পরীক্ষার নামে প্রায়ই অতিরিক্ত ফি আদায় করা হয়। সম্প্রতি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে টেস্ট পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত ফি আদায় করলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অভিযোগ রয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে টেস্ট পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হচ্ছে, অ্যাডমিট কার্ড দেয়া থেকে বঞ্চিত করাসহ পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, টেস্ট পরীক্ষার নামে এবং পরীক্ষার কারণ দেখিয়ে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া থেকে বঞ্চিত করাসহ শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বিভিন্নভাবে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছে মর্মে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। টেস্ট পরীক্ষার নামে কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অরিরিক্ত ফি আদায় করা যাবে না এবং পরীক্ষার কারণ দেখিয়ে অ্যাডমিট কার্ড দেয়া থেকে বঞ্চিত করা যাবে না বলে শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।
বহু বছর ধরেই বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এটা একটা বড় ধরনের অনিয়ম। বিশেষ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে আগে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ ধরনের অতিরিক্ত ফি আদায়ের কার্যক্রম শুরু করে। এতে করে অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী বিপদে পড়ে। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ সামলে বাড়তি ফি জোগানো অনেক পরিবারের পক্ষেই সম্ভব হয় না।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক চূড়ান্ত পরীক্ষা ছাত্রছাত্রীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দুটি পরীক্ষা সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জগতে প্রবেশ করে। স্বাভাবিকভাবেই এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর নানা ধরনের চাপ থাকে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ সুযোগটি নিয়ে টেস্ট পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত ফি আদায় করে। শিক্ষার্থীরাও বিনা প্রশ্নে ফি দিতে বাধ্য হয়। প্রথমত, তারা ভাবে টেস্ট পরীক্ষা না দিতে পারলে চূড়ান্ত পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এমনো হুমকি দেয়া হয়, টেস্ট পরীক্ষা না দিলে চূড়ান্ত পরীক্ষাতেই অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না। চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে অবশ্যই টেস্ট পরীক্ষা নিতে হবে; কিন্তু তার জন্য অতিরিক্ত ফি আদায় কেন করা হয়, তা অনেকেরই বোধগম্য নয়। এটা তো ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত বেতন ও সরকারি ভাতার মধ্য থেকেই আয়োজন হতে পারে।
আমরা আশা করছি, শিক্ষামন্ত্রীর এ নির্দেশনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ধরনের শিক্ষাবাণিজ্য বন্ধ হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পবিত্র স্থান। সেখানে এ ধরনের অনিয়ম হলে শিক্ষার্থীদের মনোবল ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে খারাপ ধারণারও জন্ম হবে। উল্লেখ্য, আগামী জুন থেকে শুরু থেকে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে এ ধরনের আর কোনো অভিযোগ উঠবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে