Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

শুধু নির্দেশনা নয়, যানজট নিরসনে চাই বাস্তব পদক্ষেপ

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ত দুই দশক ধরে দেখা যাচ্ছে যানজট নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে কেবল নির্দেশনাই হয়, তার বাস্তব প্রয়োগ খুব কমই দেখা যায়। ঢাকার যানজট নিরসনে একের পর এক ভুল পদক্ষেপ রাজধানীবাসীকে দিনের পর দিন আরও ভয়াবহ যানজটের মধ্যেই ফেলেছে। অফিস চলাকালীন এমনিতেই ঢাকা শহর স্থবির হয়ে যায়, আর বৃষ্টি হলে তো আরও ভয়াবহ অবস্থা, পুরো শহরই কার্যত অচল হয়ে যায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও কয়েকদিন আগে নির্দেশনা দিয়েছেন, রাজধানী ঢাকার যানজট সমস্যার দ্রুত ও কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে।

এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। যেখানে সেখানে গাড়ি না থামানো, যাত্রী নামানো-ওঠানোর সময় বাস স্টপজে দুই মিনিটের বেশি গাড়ি না দাঁড়ানো, গণপরিবহন বৃদ্ধি করা, ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা সংস্কার ইত্যাদি পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে যানজট কমানোর পরিকল্পনা চলছে। এর কিছু মাঝে মধ্যে প্রয়োগ করা হয়, তারপর যেই-সেই, সবই চলতে থাকে আগের দশায়। সবচেয়ে বড় কথা, রাস্তা না বাড়িয়ে গাড়ি বাড়ালে যত পদ্ধতিই প্রয়োগ করা হোক, এই যানজট কোনোদিন কমবে না।

এখন ঢাকা শহরে আর রাস্তা বাড়ানোর উপায় নেই। যা করতে হবে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস-আদালতগুলো সরিয়ে নিতে হবে ঢাকার বাইরে। দেশের সব বড় প্রতিষ্ঠানই ঢাকার মধ্যে। একই জায়গায় বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকা। বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, সুপার মার্কেট, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন সব এক জায়গায়। এর সঙ্গে প্রতিদিন ঢাকায় নামছে নতুন প্রায় ৫০০টি গাড়ি। প্রতিদিন নতুন করে ঢাকায় ঢুকছে প্রায় ২ হাজার মানুষ। অর্থাৎ বছরে প্রায় ৬ লাখ নতুন মানুষ যুক্ত হচ্ছে ঢাকায়। মেগা পরিকল্পনা গ্রহণ ছাড়া কীভাবে ঢাকার যানজট দূর করা সম্ভব?

যানজটের কারণে প্রতিদিন ঢাকায় নষ্ট হচ্ছে ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা। বিপুল এই সম্পদের অপচয় একটি রাষ্ট্রের জন্য কতটা ক্ষতি চিন্তা করা যায়। তাও ঢাকার যানজট দূরীকরণ নিয়ে যে খুব বেশি আলাপ-আলোচনা হয়, তা না। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ও রাষ্ট্র-সংবিধান-সমাজ-রাজনীতি নিয়ে যতটা আলাপ হচ্ছে, ঢাকার যানজট নিয়ে ততটা হচ্ছে না। যেন সংবিধান ঠিক হলেই ঢাকার যানজট আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যাবে। সংবিধানের আলাপও জরুরি বটে; কিন্তু অচল রাজধানীকে সচল করার বিষয়ে আলাপও জরুরি। আমরা চাই, সরকারের নীতি-নির্ধারকরা, রাষ্ট্রের চিন্তা নায়করা, নাগরিক ও বুদ্ধিজীবীরা ঢাকার যানজট নিয়ে আরও বেশি সচেতন হবেন।

যানজট প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা কদিন আগে এক আলোচনা সভায় বলেছেন, ‘প্রায়ই ঢাকায় যানজট হচ্ছে। গুলশান-বনানীতেও দেখি উল্টো পথে গাড়ি চলছে। ১৮ কোটি মানুষের জন্য তো ১ কোটি ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ করা যাবে না। প্রয়োজন সিভিক সেন্স (নাগরিক শিষ্টাচার বোধ) জাগ্রত করা। বাণিজ্য উপদেষ্টার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলি, ঢাকার যানজট এখন এতটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যে, সিভিক সেন্স উন্নত করেও কিছু করা যাবে না। এটা ট্রাফিক পুলিশেরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

পুরো সিস্টেম অচল হয়ে গেছে, বড় ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ ছাড়া এটা কোনোভাবেই বদলানো সম্ভব নয়। গণপরিবহন বাড়িয়েও এখানে কিছু করা যাবে না। কারণ, যার টাকা আছে, সে ব্যক্তিগত গাড়ি কিনবেই। পুঁজিবাদী সমাজে নীতির আলাপ করে ফল হবে না, যা করতে হবে, তা হলো ঢাকা শহরকে আরও বিস্তৃত করতে হবে। বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। দেশের সব জায়গায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সুলভ, সহজ-সুন্দর ও যুগোপযোগী করতে হবে, যেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ যে কোনো প্রয়োজনে ঢাকা ছুটে না আসেন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ