Views Bangladesh Logo

টিকিট সংকটে ভোগান্তি বাড়ছে মেট্রোযাত্রীদের

এককযাত্রার সিঙ্গেল টিকিট সংকটে ভুগছে রাজধানীতে চলাচলের সহজতম এবং সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মাধ্যম হয়ে ওঠা মেট্রোরেল। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট না পেয়ে সময়মতো গন্তব্যে যেতে না পারাসহ নানা ভোগান্তিতে ট্রেনযাত্রীরা। আবার হঠাৎ পাঞ্চ মেশিন বন্ধসহ অভূতপূর্ব কিছু সমস্যায় সময়ের অপচয় ও হিসাবের গরমিলে দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটার অভিযোগও তুলছেন নগরবাসী।

মেট্রোরেল পরিচালনাকারী ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ জানান, একক যাত্রার তিন লাখ ১৩ হাজার টিকিট ছিল। এর মধ্যে ২ লাখ টিকিটই নিয়ে গেছেন যাত্রীরা। ১৩ হাজার টিকিট নষ্ট। মেট্রোরেলে এখন ১ লাখ টিকিট আছে। ২ লাখ খোয়া যাওয়ায়ই দেখা দিয়েছে টিকিটের এই চরম সংকট।

যাত্রীরা বলছেন, মেট্রোরেলের উত্তরা সেন্টার, মিরপুর ১০ নম্বর, কারওয়ানবাজার, সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সমস্যা হচ্ছে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট পাঞ্চ দেয়ার সময়টাতেই মেশিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে হরহামেশাই।

তবে এসব সংকটের পেছনে একে অন্যকে দোষারোপ করছেন ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ ও যাত্রীরা। ডিএমটিসিএল বলছে, যাত্রীদের অসচেতনতায় বাড়ছে দুর্ভোগ। আরা যাত্রীদের দাবি, ডিএমটিসিএলের গাফিলতিতেই এ সংকটের সৃষ্টি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় থাকলেও প্রায় প্রতিটি স্টেশনেই চার থেকে ছয়টি টিকিট পাঞ্চ মেশিনের মধ্যে ইন (প্রবেশ) অথবা আউট (বাহির) এর মধ্যে অন্তত একটি বিকল থাকছেই। যাত্রীদের অভিযোগ, স্টেশন থেকে চেকআউটের সময় পাঞ্চ মেশিনের আগে থাকে না নির্দেশনা। দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে এসে মিলছে বিকল বা হঠাৎ বন্ধ হওয়া মেশিন। পাঞ্চ মেশিনের এই জটিলতায় সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বাড়তি জরিমানাও গুণতে হচ্ছে কোনো কোনো যাত্রীকে।

কারওয়ানবাজারসহ একাধিক স্টেশনে হাতে টিকিট সংগ্রহ করতে দেখা গেছে দায়িত্বে থাকা স্টাফ বা আনসার সদস্যদের। তাদেরও অভিযোগ, এ সুযোগে সিঙ্গেল টিকিট জমা না দিয়েই বের হয়ে যান অনেক যাত্রী।

মিরপুরের বাসিন্দা করিম শেখ বলেন, ‘মতিঝিলে আমার অফিস। আগে সকাল সাতটায় বাসা থেকে বের হয়ে নয়টার অফিস ধরতাম। মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর থেকে অফিস শুরুর ৪০ মিনিট আগে বাসা থেকে বের হলেই সময়মতো পৌঁছাতে পারছিলাম। কিন্তু টিকিট সংকটে স্টেশনের লাইনেই এক ঘণ্টার বেশি সময় কেটে যাচ্ছে। তাই এখন হাতে আরও ৪০ বা ৪৫ মিনিট বেশি সময় নিয়ে বের হতে হয়’।

মেট্রোরেলের এক কর্মকর্তা বলেন, একক যাত্রার সিঙ্গেল টিকিট যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশ বা বের হওয়ার নির্দিষ্ট গেট বা অটোমেটেড ফেয়ার কালেকশন (এএফসি) আছে। টিকিট পাঞ্চ করা যাত্রীর শরীরে যেন ধাক্কা না লাগে, সেজন্য প্রতিটি গেটই কিছু সময় খোলা থাকে। এ সময়টাতেই টিকিট পাঞ্চ না করেই অন্য যাত্রীর সাথে বের হয়ে যান অনেকে। এ কারণেও অনেক টিকিট খোয়া গেছে।

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ও সরকার সব বিষয়ে মনিটরিং করে দ্রুত সব সমস্যাগুলোর সমাধান করবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক বলেন, এটা সত্য যে, ভ্রমণ শেষে যাত্রীরা যখন সিঙ্গেল টিকিট নিয়ে অটোমেটেড গেট পার হন, তখন প্রক্রিয়াগত কারণে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গেটটি খোলা থাকে। এ সুযোগে চাইলে পরের যাত্রী বের হয়ে যেতেই পারেন। অটোমেটেড গেট নষ্ট থাকলেও ভিড়ের সুযোগে টিকিট জমা না দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারেন কিছু যাত্রী। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের উচিত, কতোজন যাত্রী সিঙ্গেল টিকিট নিয়েছেন আর কতোটি টিকিট জমা পড়েছে, তা প্রতিদিন মিলিয়ে দেখা।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বলেন, ‘এএফসি গেট কিছু সময় খোলা থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে টিকিট না রেখেই চলে যান অনেক যাত্রী। এভাবে মেট্রোরেল চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত দুই লাখের মতো সিঙ্গেল টিকিট স্টেশন থেকে নিয়ে গেছেন তারা। আমাদের লোকবলের ঘাটতি আছে। যাত্রীদের বেশি চাপ হলে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সঠিকভাবে মনিটরিংও সম্ভব হচ্ছে না। মনিটরিং আরো বাড়ানো হবে, যেন নতুন করে একটি কার্ডও বাইরে চলে না যায়’।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ