Views Bangladesh Logo

মেট্রোরেলে বাড়ছে দুই বগি, এপ্রিলে বদলানো হচ্ছে পোড়া যন্ত্রাংশ

প্রতিটি ট্রেনে দুটি করে বগি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল)। মতিঝিল-উত্তরা রুট বাড়িয়ে টঙ্গি পর্যন্ত স্টেশন চালু হলে এটি চালুর সিদ্ধান্ত থাকলেও ক্রমবর্ধমান যাত্রী চাহিদা বিবেচনায় শিগগিরই বাস্তবায়নের কথাও ভাবছে সংস্থাটি। তবে জনবল সংকট নিরসনের পাশাপাশি দুই স্টেশন থেকে স্থানান্তরিত পুড়িয়ে দেয়া যন্ত্রাংশ বদলানো হবে দুই মাসের মধ্যেই।

রাজধানীবাসীর কাছে জনপ্রিয় ব্যয় ও সময়সাশ্রয়ী পরিষেবা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেট্রোরেলে মাঝে-মধ্যেই তৈরি হচ্ছে জনদুর্ভোগ। এমআরটি-৬ লাইনের একাংশ দিয়ে চালুর ২৫ মাস পরে প্রায়ই হচ্ছে টিকিট কাটার বিড়ম্বনা, যান্ত্রিক ত্রুটিতে ট্রেন বন্ধ থাকাসহ নানা সমস্যা। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না দেয়ার অভিযোগ তুলে ২০০ জন কর্মী চাকরি ছাড়ায় দক্ষ জনবল সংকটে অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনায়ও হিমশিম খাচ্ছে ডিএমটিসিএল।


গত বছরের জুলাইয়ে গণআন্দোলনকালে পুড়ে যাওয়া মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন দ্রুত চালু করতে অন্য তিনটি স্টেশন থেকে খুলো আনা যন্ত্রাংশগুলোও এখনো বদলাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এসবের ফলে ট্রেন বন্ধে অনেক সময় স্থবির হয়ে উঠছে নগর জীবন। তবে দ্রুতই এসব সমস্যার সমাধানসহ প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা যাত্রীদের চাপ মাথায় রেখে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছে ডিএমটিসিএল।

জনবল সংকট

মেট্রোরেলের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ২০০ জন কর্মী চাকরি ছেড়েছেন বলে জানিয়েছেন ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ। তিনি বলেন, ‘আমাদের এক হাজার ৯১৯ জন জনবলের অর্গানোগ্রাম তৈরি করা ছিল। এর মধ্যে ৭৫১ জন নিয়মিত আর ৬২৮ জন আউটসোর্সিং কর্মীসহ কর্মরত এক হাজার ৩৭৯ জন। এখন পর্যন্ত চাকরি ছেড়েছেন প্রায় ২০০ জন। গত কয়েকদিনেই গেছেন ৫০ জন’।

‘এখন শূন্যপদ পূরণের পাশাপাশি বিদ্যমান জনবল কাঠামোও বাড়াতে হচ্ছে। চলমান প্রক্রিয়াটি নিয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি। সার্ভিস রুলসহ বর্ধিত জনবল কাঠামো গঠন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। আমাদের ধারণা, দুই হাজার ৪০০-৫০০ হতে পারে’।

মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, ‘আমাদের ট্রেন দরকার। পাশাপাশি দরকার ট্রেন অপারেটর, কাস্টমার অ্যাসিস্ট্যান্ট ও টিকিট মেশিন অপারেটর (টিওএম)। ২০৩ জন কাস্টমার অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং হেডওয়ে অপারেটর নিয়োগ দিয়েছি। তাদের প্রশিক্ষণও চলছে। এতে অনেকটা এগিয়েছি। বাকিটাও দ্রুতই পূরণ করবো’।

মেট্রোরেলের বগি বাড়ছে
২০৩৫ সাল পর্যন্ত সহজ চলাচলে স্টেশন ও মেশিনারি স্থাপিত হয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্পে। তবে প্রতিটি ট্রেনে আটটি বগি ও স্টেশনগুলোতে সেটি চালুর সক্ষমতা থাকলেও ছয়টি দিয়ে নগরবাসীকে পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। সরকারি ছুটি, ঈদ-পূজাসহ নানা উৎসব এবং রাষ্ট্রীয় দিবসগুলোতে উপচেপড়া ভিড় হচ্ছে ট্রেনগুলোতে।

মেট্রোরেলে প্রতিনিয়ত ভ্রমণকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক নূর উদ্দীন মাহমুদ বলেন, ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ও চাহিদা অনুসারে মেট্রোরেলের বগিও বাড়ানো উচিত। কর্মদিবসের শুরুতে এবং শেষভাগে বিশেষ করে সকাল আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত এবং সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত টিকিট কাটতে এবং ট্রেনে উঠতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এতে, গণপরিবহনের তুলনায় মেট্রোরেলে যাতায়াতে সময়ের ব্যয় প্রায় একই হয়ে যাচ্ছে।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, ‘বগি বাড়াতে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নির্দেশনা আছে। মানুষের চাহিদার পাশাপাশি আছে সরকারের সিদ্ধান্তও। আমরা সমন্বয় করছি। খুব দ্রুতই আটটি বগি দিয়ে ট্রেন চালানো শুরুর চেষ্টা চলছে’।

তিনি বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমার চাপ থাকায় ছয়টি অতিরিক্ত ট্রিপ দিয়েছি। এতে, ট্রেন সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, সময়টা কমে আসছে। ওই সময়টাতে আমরা পরীক্ষাও করে ফেলছি যে, সময় কমিয়ে ট্রেন বাড়ালে কি অবস্থা দাঁড়ায়। মহড়াও হয়ে গেছে। এটিও হেডওয়ে কমিয়ে ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানোর অংশ। এটি করতে পারলে অতিরিক্ত বগির দরকার এখনই থাকছে না। তবে যেহেতু সামনেই টঙ্গি পর্যন্ত রেলস্টেশন যুক্ত হচ্ছে। সেখানে যখন ট্রেন সেট নিয়ে আসবো, সেগুলো হবে আট বগির। তাহলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে’।

‘অথবা চলমান যে ট্রেনগুলো রয়েছে, সেগুলোতেও দুটি করে বগি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এখন ছয় কোচ, প্রয়োজনে ওই দুটি করে কোচ যেকোনো সময়ই যুক্ত করতে পারবো’- বলেন তিনি।

রিপ্লেস হচ্ছে পুড়ে যাওয়া যন্ত্রাংশ
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৮ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর মেট্রোস্টেশনে হামলা চালায় দুবৃত্তরা। পরদিন শুক্রবার (১৯ জুলাই) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে হামলা চলে কাজীপাড়া স্টেশনেও। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন দুটির কার্যক্রম জননিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। দুমাস পরে ২০ সেপ্টেম্বর কাজীপাড়া স্টেশন এবং প্রায় তিন মাস পরে ১৫ অক্টোবর মিরপুর-১০ স্টেশন ফের চালু হয়। ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট কম থাকার বিবেচনায় উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, বিজয় সরণি ও মতিঝিল স্টেশন থেকে যন্ত্রাংশ খুলে এনে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল স্টেশন দুটিতে।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, ‘চারটি স্টেশন থেকে খুলে আনা যন্ত্রাংশ ফের বদলাতে অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। জাপান থেকে আসতে চার মাস লাগে। ইতোমধ্যে তিন মাস চলে গেছে। আশা করছি, এপ্রিলের মধ্যে চলে এলে রিপ্লেস করে দেব’। তিনি বলেন, ‘জাপান থেকে অতিরিক্ত যন্ত্রপাতিও আনছি। যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো সমস্যা হলে, আমাদের কাছে ব্যাকআপ থাকে’।

ট্রিপ আরও বাড়ছে
বিশেষ প্রয়োজনে মাঝে-মধ্যেই ট্রেনের ট্রিপ সংখ্যা বাড়াচ্ছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। যাত্রীচাপ বিবেচনায় চালু আছে পিক আওয়ার ও অফ আওয়ারও। এখন পিক আওয়ারে আট মিনিট পর পর এবং অফ আওয়ারে ১০ মিনিট পর পর ট্রেন স্টেশনে আসে। তবে সাড়ে তিন মিনিট পর পর ট্রেন ছাড়ার সক্ষমতা ডিএমটিসিএলের আছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে শিগগিরই হেডওয়ে কমিয়ে স্থায়ীভাবে ট্রিপ বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে সংস্থাটি।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, ‘২০৩৫ সালে পর্যন্ত যাত্রী ধারণক্ষমতা বিবেচনায় স্টেশন ও ট্রেন চলাচল ব্যবস্থা চালু আছে। ট্রিপ বাড়িয়ে হেডওয়ে কমিয়ে আনলে ক্রমবর্ধমান যাত্রী চাহিদার অধিকাংশই পূরণ সম্ভব। পরীক্ষামূলকভাবে হেডওয়ে কমিয়ে ও ট্রিপ বাড়িয়ে ট্রেন পরিচালনা করেও সফল হয়েছি’।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ