মেট্রোরেলের টিকিটের নকশা বদল যাত্রীদের স্বার্থেই, বলছে ডিএমটিসিএল
পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে মেট্রোরেলের একক যাত্রার সিঙ্গেল টিকিটে। দেশের ঐতিহাসিক স্থাপনা জাতীয় স্মৃতিসৌধ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও জাতীয় সংসদ ভবনের ছবি বদলে টিকিটে দেয়া হয়েছে মেট্রোরেলের প্রতীকী ছবি।
এ নিয়ে সাধারণ যাত্রী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেনদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া। মেট্রোরেল পরিচালনাকারী ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) নকশা বদলের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, একক যাত্রার টিকিট ও এমআরটি পাসের নকশা একই রকম হওয়ায় যাত্রীদের মধ্যেকার বিভ্রান্তি দূর এবং এর ফলে চলমান দূর্ভোগ নিরসনেই এই উদ্যোগ।
সুষ্ঠু যাত্রী ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যেও একক যাত্রার টিকিটে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন নকশায় দুই কার্ডে পার্থক্য থাকায় যাত্রীরা বুঝে বা না বুঝে আর একক যাত্রার টিকিট নিয়ে যাবেন না বলেও মনে করছে সংস্থাটি।
নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া ব্যাখ্যায় সোমবার (১১ নভেম্বর) ডিএমটিসিএল বলেছে, মোট ৩ লাখ ১৩ হাজার একক যাত্রার টিকিট এবং ৮ লাখ ২৫ হাজার ৫০০টি এমআরটি (ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট) পাস সরবরাহ করা হয়েছিল। এমআরটি পাসধারী যাত্রীরা পাঞ্চিং মেশিনে কার্ড ছুঁইয়ে (টাচ) স্টেশন থেকে বের হন। একক যাত্রার টিকিটধারী যাত্রীদের জমা দিয়ে বের হতে হয়।
তবে দুই কার্ডেরই নকশা একই রকম হওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। একক যাত্রার টিকিটধারী যাত্রী এমআরটি পাসধারী যাত্রীকে অনুসরণ করে কার্ড যন্ত্রে প্রবেশ না করিয়ে টাচ করান। এতে ‘এক্সিট গেটে’ অ্যালার্ম বেজে ওঠে এবং সাময়িকভাবে অকার্যকর হয়ে যায়। ফলে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।
মেট্রোরেল চালুর পর থেকে দুই লাখের বেশি একক যাত্রার টিকিট খোয়া গেছে উল্লেখ করে ডিএমটিসিএলের ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়, যাত্রীরা টিকিটটি জমা না দিয়ে বের হয়ে গেলেও নকশা একই রকম হওয়ায় বিভান্ত হয়ে তা আটকাতে পারেননি কর্তব্যরতরা। সংস্থাটির দাবি, এ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া গত সরকারের সময়ে শুরু, নকশা চূড়ান্ত এবং সরবরাহের আদেশ দেয়া হয়।
তারা বলছে, যাত্রীরা ২ লাখের বেশি একক যাত্রার টিকিট নিয়ে যাওয়ায় সংকট তৈরি হয়। ফলে নতুন টিকিট সংগ্রহ ও নকশা বদলের সিদ্ধান্ত হয় গত বছরের শেষদিকে। গত ১ জানুয়ারি ৪ লাখ টিকিট সংগ্রহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয়া হয়। গত ২৮ জুলাই নতুন নকশাটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেয়া হয়। ১ নভেম্বর নতুন নকশার ২০ হাজার একক যাত্রার টিকিট সরবরাহ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে পাওয়া একক যাত্রার সেই টিকিটগুলোই এখন যাত্রীদের দেয়া হচ্ছে। তবে এসব ব্যাখ্যা মানতে নারাজ অনেক মেট্রোযাত্রী। সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজার মেট্রোস্টেশনে মিরপুরগামী যাত্রী সজিবুর রহমান ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘কোনো যুক্তিতেই মেট্রো বা রাষ্ট্রীয় কোনো কিছু থেকে দেশের ঐতিহাসিক স্থাপনা জাতীয় স্মৃতিসৌধ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও জাতীয় সংসদ ভবনের ছবি বাদ দেয়া ঠিক নয়।’
আরেক যাত্রী মশিউর রহমান বলেন, যদি আগের সরকার নকশা বদলেও থাকে, তাহলেও এই সরকারের সে ধারাবাহিকতা রক্ষা যুক্তিযুক্ত নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারতো গত সরকারের সবকিছুই বাদ দিয়ে দিচ্ছে। সেখানে তাদের করা নকশা কেন রাখতে হলো?’
তবে ডিএমটিসিএল বলছে, একক যাত্রার টিকিট ও এমআরটি পাসের মধ্যে পার্থক্য করতে ৫০ হাজার টিকিটের রং আগেই বদলানো হয়েছিল; কিন্তু তাতেও সুফল পাওয়া যায়নি। ফলে বাধ্য হয়ে নকশাও বদলাতে হয়েছে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ আশা করে, একক যাত্রার টিকিটের নকশা-সংক্রান্ত বিভ্রান্তির অবসান হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে