জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
বড় অপরাধে ছোট সাজা গ্রহণযোগ্য নয়
প্রশাসন দেশের মানুষকে সেবা দেবে। পাশাপাশি মানুষ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে শোভন আচরণ প্রত্যাশা করে; কিন্তু তাদের কাছ থেকে যখন অশোভন ও জনবিরোধী আচরণের অভিযোগ ওঠে, তখন সরকারের বিব্রত হওয়া ছাড়া কোনো পথ থাকে না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বিগত ১০ বছরে (২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত) ৩৫১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অশোভন ও জনবিরোধী আচরণের অভিযোগ ওঠে। তাদের মধ্যে গুরুদণ্ড পেয়েছেন ৪১ এবং লঘুদণ্ড পেয়েছেন ১৪০ জন। বাকি ১৭০ জনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, নৈতিক স্খলন, দায়িত্বে অবহেলা, ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ না দেয়া, ঠিকমতো অফিসে উপস্থিত না থাকা, অনুমতি না নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ, পত্রিকা ও ফেসবুকে লিখে এবং অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে শাস্তি পাচ্ছেন জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাদের কেউ কেউ গুরুদণ্ডের অপরাধ করেও পাচ্ছেন লঘুদণ্ড। কেউবা লঘু অপরাধ করেও পেয়েছেন বড় সাজা।
প্রশ্ন হচ্ছে, আগের চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হলে কাউকে চাকরিতে রাখার সুযোগ ছিল না; কিন্তু ২০১৮ সালে প্রণীত নতুন বিধিমালায় দুর্নীতিগ্রস্তদেরও লঘুদণ্ড দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। ফলে তদন্ত কর্মকর্তা চাইলে যে কোনো অপরাধের জন্য যে কাউকে লঘুদণ্ড দিতে পারেন। কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে, সেটি মাথায় রেখে অনেক সময় দণ্ডের মাত্রায় হেরফের হচ্ছে।
আবার বড় অপরাধে কয়েকজনকে লঘুদণ্ড দেয়া হলেও দণ্ড পুনর্বিবেচনার আবেদন করার পর রাষ্ট্রপতি তাদের সাজা মওকুফ করে দিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ আছে। সাধারণত কোনো কর্মকর্তার বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়, তাহলে সেটি আমলে নিয়ে বিভাগীয় মামলা করা হয়। এ বিষয়ে প্রথমে প্রাথমিক তদন্ত করে সত্যতা বোঝার চেষ্টা করা হয়। কারণ, বিভাগীয় মামলা করতে গেলে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে করতে হয়।
এতে শুনানি হয়, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু বিভাগীয় ব্যবস্থার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকায় সরকারি কর্মকর্তাদের অনিয়মে জড়ানোর হার কমছে না। বাস্তবতা হলো, অপরাধের বিচার না হলে তখন অপরাধ বাড়তেই থাকে। তাই বিভাগীয় মামলার পাশাপাশি প্রচলিত আইনেও তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
আমরা দেখেছি, অপরাধ প্রমাণ হওয়ার পরও বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে তিরস্কারের সাজা দেয়া হয়েছে। গুরুদণ্ড দেয়ার মতো অপরাধ করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণ হলেও দেয়া হয়েছে লঘুদণ্ড। তাই এসব জনবিরোধী আচরণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে দু-একজন কর্মচারীর জন্য সরকারের ইতিবাচক কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে