Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

কারা ব্যবস্থা সংস্কার ও আধুনিকায়নে জোর দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার

Kamrul  Hasan

কামরুল হাসান

বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের কারাগারগুলো এখনো উনিশ শতকের আগের আইন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। কারাগারের আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অন্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বারবার কারা সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও নানান প্রতিকূলতায় সেসব বাস্তবায়ন করা যায়নি। সম্প্রতি দেশজুড়ে জেল ভাঙার চেষ্টার ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে সংশ্লিষ্টদের। তাই কারাগারের নিরাপত্তার জন্য শত বছরেরও বেশি পুরনো ‘কারা আইন’র আধুনিকায়ন এবং কারা কর্তৃপক্ষের সংস্কার বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা গেছে, সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কারা আইন আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় অধিদপ্তরের নবনিযুক্ত মহাপরিচালক চলতি মাসের শুরুতে অধিদপ্তরকে আধুনিকীকরণের জন্য নতুন আইনে সংস্কারের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুটি চিঠি পাঠান।

কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের সময় অন্তত ১৭টি জেলা কারাগারে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। হামলায় আটটি কারাগারে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয় ও পাঁচটি কারাগারের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। এর মধ্যে এই ৫ কারাগার থেকে প্রায় ২ হাজার বন্দি পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে ৭০ জন জঙ্গিসহ প্রায় ৯০০ পলাতক রয়েছে বলেও জানায় তারা।

এসব ঘটনার পর গত ১০ আগস্ট গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের রক্ষী ও কর্মকর্তারা ১৯ দফা সংস্কার প্রস্তাব পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে পাঠান।

সংস্কার প্রস্তাবে কারাগারের নিরাপত্তা সদস্যদের ইউনিফর্ম ও ব্যাজের বর্তমান রং পরিবর্তন, অধিদপ্তরকে নিয়মিত বাহিনী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, সরকারি পদ ও বেতন স্কেলে উন্নীতকরণ, বন্দিদের পরিবহনের সময় অস্ত্র বহনের অনুমতি এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বৃদ্ধির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

এ বিষয়ে কারা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোতাহের হোসেন ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর সারা দেশের কারা কর্মকর্তা ও রক্ষীদের কাঙ্ক্ষিত সংস্কারের প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়।

তিনি জানান, তাদের দাবি-দাওয়ার তালিকা ১ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়া হয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে দক্ষতা উন্নয়ন ও গার্ডদের জন্য রেশনিং সেবা চালু করার মতো প্রস্তাবনা।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোতাহের হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখ কিছু অতিরিক্ত প্রস্তাবও দিয়েছিলাম- যার মধ্যে রয়েছে গার্ড ও কর্মকর্তাদের গ্রেড আপগ্রেডেশন, উৎপাদনশীল কাজ প্রবর্তন, বন্দিদের প্রশিক্ষণ, মেট্রোর স্বীকৃতি এবং উন্মুক্ত কারাগার ব্যবস্থা চালু করা।

কারা কর্তৃপক্ষ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রথম কারাগারটি ১৭৮৮ সালে ‘ক্রিমিনাল ওয়ার্ড’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু কারাগার পরিচালনার বিধান সংবলিত একটি কোড ১৮৬৪ সালে প্রণয়ন করা হয়। এরপর থেকে কোডটি সাতবার সংশোধিত হয়েছে। সর্বশেষ সংশোধন করা হয়েছিল ১৯৩৭ সালে। পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর বিভিন্ন সময়ে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জেল আইনে কিছু পরিবর্তন ও সংশোধন করা হয়েছিল; কিন্তু জেল কোডে কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করা হয়নি।

২০০৬ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে জেল ব্যবস্থা আধুনিকায়নের জন্য জেল কোড সংশোধন ও সংশোধনের প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে কারাগারগুলোকে সংশোধন ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে রূপান্তর করার জন্য বিদ্যমান আইন সংশোধন করে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। নতুন আইনের খসড়া প্রণয়নের জন্য তৎকালীন লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হকের নেতৃত্বে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। উপ-সচিব তাহনিয়া রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত আইনটির খসড়া শেষে জনমতের জন্য ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের ১৯ তারিখে প্রকাশ করা হয়।

খসড়া অনুসারে, বাংলাদেশ কারাগার ও সংশোধনমূলক পরিষেবা আইন, ২০২৩ (খসড়া) পূর্ববর্তী দুটি আইন-প্রিজন অ্যাক্ট ১৮৯৪ (১৮৯৪ সালের আইন নং IX) এবং বন্দি আইন ১৯০০ (১৯০০ সালের আইন নং III) বাতিল করা হবে।

কারা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দুটি প্রস্তাবনা পেশ ও আইন প্রণয়নের জন্য গঠিত কমিটির কাছে প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেল উইং) মো. জিয়াউল হক।

তিনি জানান, কমিটি প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করবে এবং সংস্কার ও আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তাবগুলোও অন্তর্ভুক্ত করবে। পরে যাচাই-বাছাই ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্ত বিবেচনার জন্য আইনের একটি খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ